একাদশ শ্রেণীর ভর্তি নিয়ে নৈরাজ্য সামাল দিতে নতুন করে আরও দুটি মেধা তালিকা তৈরি ও প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। আগের সিদ্ধান্ত অনুসারে দুটি মেধা তালিকা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত ছিল। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে এখন মোট চারটি মেধা তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
প্রথম মেধা তালিকা গত রোববার প্রকাশ করা হয়। ত্রুটিপূর্ণ এ তালিকা নিয়ে এরই মধ্যে সারাদেশে ভর্তিচ্ছু আর অভিভাবকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এ তালিকা অনুসারে ভর্তির সময়সীমা শেষ হয়েছে। তবে ভর্তির সময় গতকাল শেষ হলেও আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবারও কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে বলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি জানিয়েছে। প্রথম মেধা তালিকায় যাদের নাম আছে এই দু’দিন তারা ভর্তি হতে পারবে। আগামী ৬ জুলাই দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে।
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বক্কর ছিদ্দিক জানন, নতুন আরও দুটি মেধা তালিকা প্রণয়ন ও তা প্রকাশ করা হবে। আগামী ৬ জুলাই প্রকাশিতব্য দ্বিতীয় মেধা তালিকার শিক্ষার্থীরা ১০ জুলাই পর্যন্ত কলেজগুলোতে ভর্তি হতে পারবে। এ জন্য তাদের কোনো বিলম্ব ফি দিতে হবে না।
চেয়ারম্যান জানান, যেসব ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী প্রথম ও দ্বিতীয় মেধা তালিকায় ভর্তির সুযোগ পায়নি অথবা সুযোগ পেলেও কলেজ পছন্দ না হওয়ার কারণে ভর্তি হয়নি, তাদের জন্য তৃতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। তারা ৯ ও ১০ জুলাই নতুন করে শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করতে পারবে। এই শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে ১১ জুলাই। ১২ জুলাই তৃতীয় মেধা তালিকার এই ছাত্রছাত্রীরা কলেজে ভর্তি হতে পারবে। এ জন্য তাদেরও কোনো বিলম্ব ফি গুনতে হবে না। এই তিন ধাপের মেধা তালিকা প্রকাশ করার পরও কোনো ভর্তিচ্ছুর সমস্যা থেকে থাকলে তাদের জন্য চতুর্থ মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। চতুর্থ তালিকার ভর্তিচ্ছুদের ১৩ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ৫০ টাকা ফি দিয়ে বোর্ডে আবেদন করতে হবে। এই আবেদনকারীদের ফল প্রকাশ করা হবে ২৩ জুলাই। সর্বশেষ তৈরি এই মেধা তালিকার ভর্তিচ্ছুদের জন্য নির্ধারিত কলেজে ভর্তি হতে হবে ২৫ ও ২৬ জুলাই।
কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে শেষ দফার এই ভর্তিচ্ছুদের অবশ্য ৫০ টাকা করে বিলম্ব ফি পরিশোধ করতে হবে।
এদিকে, অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই ব্যাংক হলিডে থাকায় গত বুধবার ব্যাংকে লেনদেন বন্ধ ছিল। এ কারণে ভর্তি ফি ব্যাংকে জমা দিতে না পারায় অনেক শিক্ষার্থী ওইদিন কলেজে ভর্তি হতে পারেনি। এ অবস্থায় কলেজ কর্তৃপক্ষ আজ এবং আগামীকালও একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে বলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে, ভর্তি নিয়ে হযবরল অবস্থা এখনও কাটেনি। প্রথম মেধা তালিকার ভর্তিচ্ছুদের ভর্তি গতকাল শেষ হয়ে গেলেও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এখনও ভর্তি হতে পারেনি। এ নিয়ে তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে। চার দফায় পিছিয়ে গত রোববার রাতে একাদশ শ্রেণীর ভর্তির জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তালিকা প্রকাশের পর বিভিন্ন ধরনের ভুলভ্রান্তি ধরা পড়ে।
গতকাল দুপুরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শকের কার্যালয়ে ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে অন্তত ৫০-৬০ জনকে অভিযোগ নিয়ে আসতে দেখা যায়। এদের কেউ লিখিত আবেদন করেছে, কেউ বা মৌখিকভাবে সমস্যা জানিয়ে সমাধান জানতে চাইছে। ভোগান্তি, বিড়ম্বনা, বিপত্তি, জটিলতা আর নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়েই গতকাল শেষ হলো একাদশ শ্রেণীর প্রথম তালিকায় ভর্তি কার্যক্রম। তবে ভর্তিচ্ছুদের নানা অসন্তুষ্টি, আবেদনে নানা ধরনের ভুল, কাঙ্ক্ষিত কলেজ মনোনয়ন না পাওয়া, পাঠ্য বিভাগ পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, মহিলা কলেজে ছেলেদের মনোনয়ন, আবেদন না করেও অন্য জেলায় মনোনয়ন, ট্রান্সক্রিপ্ট না পাওয়া, আবেদন না করা প্রতিষ্ঠানে মনোনয়নসহ এ রকম প্রায় ১২ ধরনের অর্ধলাখ অভিযোগ জমা পড়েছে আন্তঃবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটিতে। এসব অভিযোগ করেছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু একটি সমস্যারও সমাধান করতে সক্ষম হয়নি ১০টি শিক্ষা বোর্ড। তবে তাদের আশা, ৬ জুলাই দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করার পর এসব অভিযোগ আর থাকবে না। তবে ভর্তিচ্ছুদের অভিযোগ, বোর্ডে চার দিন ধরে দৌড়াদৌড়ি করলেও কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারেনি; বরং অনেক সময় বোর্ডের কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভর্তিচ্ছুরা সাধারণ যেসব অভিযোগ নিয়ে বোর্ডে এসেছে, তার মধ্যে অন্যতম কাঙ্ক্ষিত কলেজে ভর্তির সুযোগ না পাওয়া।
বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, সারাদেশের ১০টি বোর্ডের সমন্বয়ের জন্য আন্তঃশিক্ষা হলো ঢাকা বোর্ড। তবে বোর্ড একটি সমস্যারও সমাধান করে দিতে পারেনি। বুয়েটকে দোষারোপ করে নিজেদের দায় এড়াচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সূত্র মতে, এবার পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই একসঙ্গে সব কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির কাজ অনলাইনে করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে শিক্ষা বোর্ড। ১১ লাখ ৫৬ হাজার ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী কোন কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে, সে তালিকা করতে গিয়ে বোর্ডকে কারিগরি সহায়তা দেওয়া বুয়েটের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজিও (আইআইসিটি) কারিগরি সমস্যায় পড়ে। এ কারণে তালিকা প্রকাশের সময় চার দফা পেছাতে হয়। পরে প্রকাশিত তালিকাও ছিল ত্রুটিপূর্ণ। আর এতেই ভর্তিচ্ছুদের কপালে নেমে আসে নিদারুণ দুর্ভোগ।
Leave a Reply