ড. সরদার এম. আনিছুর রহমান:
‘সারা অঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেবো কোথা?’ আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সমস্যাগুলো এমনভাবে জাল বিস্তার করেছে যে, শিক্ষাক্ষেত্রের এমন কোনো একটি দিক নেই যেটা সমস্যামুক্ত নয়। ফলে সহজেই শিক্ষাকে দূষণমুক্ত করা যাচ্ছে না। তবে সেই সমস্যাগুলো হঠাৎ সৃষ্টি হয়নি। আমাদের দেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট হর্তাকর্তা ও শিক্ষানীতি নির্ধারকদের অদূরদর্শীতার কারণেই তা আজ এমন জটিল আকার ধারণ করেছে। থাক এসব কথা, এবার ফিরে আসি আজকের মূল আলোচ্য বিষয়ের দিকে।
অনেকটা সনাতন শিক্ষাব্যবস্থায় আমার লেখাপড়া। ফলে গ্রেডিং সিস্টেমের সাথে প্রথম পরিচয় পিএইচডি গবেষণা কাজ করতে গিয়ে। তখন আমাদেরকে প্রথম এক বছর ৫০০ মার্কের কোর্স ওয়ার্ক করতে হয়েছিল। সেই পরীক্ষার ফলাফলও প্রকাশ করা হয়েছিল গ্রেডিং সিস্টেমে। এছাড়া গ্রেডিং সিস্টেমের সাথে পরিচয় আরেকটু গাঢ় হয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করতে গিয়ে। এ বিষয়ে আরো কিছু আলোচনার আগে আসি আমাদের দেশে গ্রেডিং সিস্টেম চালু প্রসঙ্গে।
যতদূর জানি তাতে, ইউরোপ-অ্যামেরিকা, তথা বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশগুলোতে অনেক আগে থেকেই গ্রেডিং পদ্ধতিতে পরীক্ষার মূল্যায়ন ও রেজাল্ট প্রকাশের নীতি চালু হয়। আমাদের দেশে দেড় দশক আগে তথা ২০০১ সালে গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হয়। আর চালুর সময়কাল থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন নিয়মে তা চালু করে। আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে তা সমন্বিতভাবে চালু করা হয়নি বলেই আজকে যতসব ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে আমাদের শিক্ষার্থীদের।
এখন দেখা যাক, আমাদের দেশে কী ধরনের এই গ্রেডিং সিস্টেম চালু আছে। অর্থাৎ আমাদের দেশের প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেই পদ্ধতিতে গ্রেড দেয়া হয় সেটা দেখি:
গ্রেডিং সিস্টেম সারণী-১ (আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন প্রণীত)
প্রাপ্ত নম্বর | লেটার গ্রেড | গ্রেড পয়েন্ট |
৮০+ | A + | ৪.০০ |
৭৫+ | A | ৩.৭৫ |
৭০+ | A – | ৩.৫০ |
৬৫+ | B + | ৩.২৫ |
৬০+ | B | ৩.০০ |
৫৫+ | B – | ২.৭৫ |
৫০+ | C + | ২.৫০ |
৪৫+ | C | ২.২৫ |
৪০+ | D | ২.০০ |
০-৩৯ | F | ০.০০ |
গ্রেডিং সিস্টেম সারণী-২
প্রাপ্ত নম্বর | লেটার গ্রেড | গ্রেড পয়েন্ট |
৯০+ | A + | ৪.০ |
৮০+ | A | ৩.৫ |
৭০+ | B + | ৩.০ |
৬০+ | B | ২.৫ |
৫০+ | C | ২.০ |
০-৪৯ | F | ০.০ |
গ্রেডিং সিস্টেম সারণী-৩
প্রাপ্ত নম্বর | লেটার গ্রেড | গ্রেড পয়েন্ট |
৯০+ | A | ৪.০ |
৮৫+ | A – | ৩.৭ |
৮০+ | B + | ৩.৩ |
৭৫+ | B | ৩.০ |
৭০+ | B – | ২.৭ |
৬৫+ | C + | ২.৩ |
৬০+ | C | ২.০ |
৫৫+ | C – | ১.৭ |
৫২+ | D + | ১.৩ |
৫০+ | D | ১.০ |
০-৪৯ | F | ০.০ |
উপরেল্লেখিত প্রথম দুটি সারণীকেই তুলনা করা যাক, প্রথম সারণীতে যেখানে ১০ রকম গ্রেড (ফেলসহ) সেখানে দ্বিতীয় সারণীতে ৬ রকম গ্রেড। আর প্রাপ্ত নম্বরের পার্থক্যটাও চোখে পড়ার মত: প্রথম সারণীতে প্রতি ৫ নম্বরের জন্য গ্রেড পয়েন্ট পরিবর্তন হয় যেখানে দ্বিতীয় সারণীতে এই পার্থক্য ১০। সাথে সাথে পর্যায়ক্রমিক গ্রেড পয়েন্টের পার্থক্যগুলোও দেখা যেতে পারে: প্রথম সারণীর ধারাবাহিকভাবে ০.২৫ পার্থক্যতে গ্রেডগুলো অবস্থিত, সেখানে দ্বিতীয় সারণীতে এটা ০.৫০। পাস মার্কও আলাদা: দ্বিতীয় সারণীতে ৫০, প্রথম সারণীতে ৪০। তেমনিভাবে তৃতীয় সারণীতেও পার্থক্যটা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। প্রথম সারণীতে ৪০ মার্কে গ্রেড পয়েন্ট ২, দ্বিতীয় সারণীতে ৫০ মার্কে গ্রেড পয়েন্ট ২ হলেও তৃতীয় সারণীতে ৫০ মার্কে গ্রেড পয়েন্ট ১। এছাড়াও আরো কয়েক ধরনের গ্রেডিং সিস্টেম আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষায় প্রচলিত আছে। নিবন্ধের কলেবর বড় হবে বলে সেগুলো নিয়ে এখানে আলোচনা করা সম্ভব হলো না।
উপরেল্লেখিত গ্রেডিং পদ্ধতিগুলো আমাদের দেশের বিভিন্ন পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চালু আছে এবং এরূপ ভিন্ন ভিন্ন গ্রেডিং নিয়মে পরীক্ষার মূল্যায়ন ও ফল প্রকাশ করা হয়ে থাকে। উপরের সারণীগুলো থেকে সহজেই অনুমেয় যে, আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষায় গ্রেডিং সিস্টেমে শিক্ষার্থীরা কতটা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নকালীন বৈষম্যের বিষয়টা ততটা না বুঝলেও শিক্ষাজীবন শেষে যখন চাকুরীর প্রতিযোগিতায় যায় তখনই তারা পুরো বিষয়টি বুঝতে ও জানতে পারে। তখন তারা কত যে বিড়ম্বনার শিকার হন তা এখানে বলে বোঝানো যাবে না। তবে তখন আর তাদের কিছুই করার থাকে না। ফলে মাঝে মধ্যেই আমাকে এই গ্রেডিং সিস্টেম নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু তাদের প্রশ্নের জবাব দেয়ার মতো কোনো উপায় থাকে না। সঙ্গত কারণে অনেক সময় নিরবতা পালন করেই জবাব দেয়ার দায়িত্ব এড়িয়ে যাই।
একটা বিষয় সবাই নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন যে, প্রথম ও দ্বিতীয় সারণীতে উল্লেখিত গ্রেড পয়েন্টের আলোকে অনেক সময় একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন ভিন্ন অনুষদের শিক্ষার্থীদের দক্ষতাকে আলাদা পাল্লায় মাপা হয়। এমনকি যে শিক্ষার্থী প্রতিটা বিষয়ে সর্বোচ্চ গ্রেড পেয়ে এসেছে, সেই মানের পরীক্ষা দিয়ে অপর প্রতিষ্ঠানের বা অনুষদের শিক্ষার্থী একই গ্রেড পাবে না: ৮০ পেলেই যেখানে A+ = ৪.০ পাওয়া যেত, সেখানে ৮০ = A = ৩.৫। আর পাশের ব্যাপারটাও খেয়াল করুন: এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৬ = C = ২.২৫, কিন্তু অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটাই ফেল।
কাজেই এ থেকে সহজেই বলা যায় যে, সর্বক্ষেত্রে একই প্রাপ্ত নম্বরের জন্য একই গ্রেড পাওয়া- এমন সমন্বিত নিয়ম এখনো আমাদের দেশে সব প্রতিষ্ঠান মানছে না।
তবে আশার দিক হলো- উচ্চশিক্ষায় ভিন্ন ভিন্ন গ্রেডিং সিস্টেমের কারণে শিক্ষার্থীরা যে চাকুরি ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, একটু দেরীতে হলেও তা আমাদের হর্তাকর্তাদের নজরে এসেছে। ফলে এই সংকট নিরসনেরও একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে- গত ২১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পরীক্ষা পদ্ধতি’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক কর্মশালায় বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বৈষম্য এড়াতে সমন্বিত গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফল প্রকাশের সুপারিশ করা হয়। এতে শিক্ষার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বৈষম্য কমে যাবে বলেও মনে করেন শিক্ষাবিদরা।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- ইউজিসির স্ট্যাটেজি পলিসি ইউনিটের (এসপিইউ) প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা আফতাবুন নাহার মাকসুদা।
গবেষণা প্রবন্ধে ১৩টি সরকারি এবং ৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা এবং ফলাফলের ওপর সম্পাদিত গবেষণা কাজে সেমিস্টার ও বর্ষের পরীক্ষা এবং বিভিন্ন টিউটরিয়াল পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল মূল্যায়ন করা হচ্ছে। ইউজিসি নির্ধারিত গ্রেডিং মান অনুসারে ৮০ নম্বরের ওপরে কেউ পেলে তা ‘এ-প্লাস’ হিসেবে ধরার কথা। দেখা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা মানছে না। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৫ থেকে ১০০ পর্যন্ত পেলে ‘এ-প্লাস’ ধরা হচ্ছে। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ৮৭ থেকে ৯৩ পর্যন্ত ‘এ’ মান ধরে ফল প্রকাশ করছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফল পুনঃ নিরীক্ষণের কোনো সুযোগ নেই। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার খাতা দু’জন পরীক্ষক মূল্যায়ন করেন। আবার কোথাও একজন পরীক্ষকই খাতা মূল্যায়ন করে থাকেন। প্রতিবেদনে একই পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন ও ফল প্রদানের সুপারিশ করা হয়। মূল প্রবন্ধে ড. আফতাবুন নাহার মাকসুদা বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার চালু, একই পরীক্ষা পদ্ধতি, সেমিস্টার পদ্ধতিতে লেখাপড়া এবং শিক্ষকদের মূল্যায়নের পক্ষে তার যুক্তি তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ১১৬টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬টি সরকারি ও ৮০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
কর্মশালায় ইউজিসি চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, বিদ্যমান পরীক্ষা ব্যবস্থার কারণে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল নিয়ে বৈষম্য রয়েছে। এছাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাত্র একজন পরীক্ষকের জন্যও নম্বর বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিলম্বের কারণে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তি বা সমস্যায় পড়েন।
উচ্চশিক্ষায় বর্তমানে ৩০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে জানিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত গ্রেডিং পদ্ধতি চালু, একক পরীক্ষক থাকলেও নম্বরের জন্য বোর্ড তৈরি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ক্রেডিট ট্রান্সফার করার সুপারিশ করেন।
উপরেল্লেখিত তথ্যের আলোকে সহজেই বলা যায়, বর্তমানে সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা ব্যবস্থায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। যে যার মতো করে নম্বর দিচ্ছে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক রকম নম্বর আবার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেক রকম নম্বর দেয়া হচ্ছে। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নম্বর বন্টনের বা দেয়ার প্রক্রিয়া এক নয়। এক এক বিশ্ববিদ্যালয়ে এক এক রকম পদ্ধতি বিরাজ করেছে।
একাডেমিক সেশন, প্রশ্ন প্রণয়ন, গ্রেডিং পদ্ধতি, নম্বর প্রদান, খাতা মূল্যায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এরফলে অনেক ক্ষেত্রে কম মেধাবীরা বেশি নম্বর ও সিজিপিএ পাচ্ছেন। আবার কোথাও প্রকৃত মেধাবীরা কম গ্রেডিং পেয়ে চাকরির বাজারে পিছিয়ে থাকেন। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ‘সমন্বিত গ্রেডিং পদ্ধতি’, একক পরীক্ষক ব্যবস্থা ও তাদের মনিটরিংয়ে সুপারভিশন কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন সুপারিশ করেছে।
এছাড়া এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে বিদ্যমান গ্রেডিং পদ্ধতিতে ১০টি ধাপের জায়গায় একটি বাড়িয়ে ১১টির প্রস্তাব করা হয়। বর্তমানে ৮০ ওপরে পেলে তাকে সর্বোচ্চ সিজিপিএ ৪ ধরা হয়। এর পরিবর্তে একটি বাড়িয়ে ৯০ নম্বর প্রাপ্তদের সিজিপিএ-৫ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের কম নম্বর দেয়া হয়। দুই পরীক্ষক ব্যবস্থার কারণে সেখানে ফলপ্রকাশে বিলম্ব ঘটে। বিপরীত দিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশি নম্বর প্রদান করা হয়। সেখানে একক পরীক্ষক ব্যবস্থা থাকায় প্রদত্ত নম্বরের ন্যায্যতা নির্ণয়েরও ব্যবস্থা নেই। বরং উদারভাবে নম্বর না দেয়ায় কোথাও কোথাও শিক্ষককে চাকরি ছাড়তে হয়েছে।’
ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে, এমন নানাবিধ অভিযোগ পুরনো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসির অধীন বাস্তবায়নাধীন ‘উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প’ (হেকেপ) সম্প্রতি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করে। ওই গবেষণারই প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে ওই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
উচ্চশিক্ষায় বৈষম্য দূর এবং শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে কর্মশালায় মোট ১১টি সুপারিশ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতি প্রবর্তন, এক্সটারনাল (বাইরের) পরীক্ষা একটির বেশি প্রশ্নসেট না করা, ক্রেডিট ট্রান্সফারের ব্যবস্থা, বিভিন্ন পরীক্ষার (যেমন মিড-টাইম, টেস্ট এবং ফাইনাল পরীক্ষা) নম্বর বন্টনে সমন্বয়, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা, একাডেমিক ক্যালেন্ডার চালু, একক পরীক্ষা পদ্ধতি তথা সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করে ফল প্রকাশের সময় কমিয়ে আনা, খাতা মূল্যায়নের একটি সমন্বিত নীতিমালা, শিক্ষা ছুটির একটি নীতিমালা, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং মডারেশন, পরীক্ষকদের সম্মানী বৃদ্ধি, ছাত্রদের দিয়ে শিক্ষকদের মূল্যায়ন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজিসি নির্ধারিত গ্রেডিং সিস্টেম মানা ইত্যাদি।
সবশেষে শিক্ষানীতি নির্ধারক ও ইউজিসির হর্তাকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানাবো- শুধু কর্মশালায় কিংবা সার্কুলারে একক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন নীতি এবং সমন্বিত গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে থাকলেই হবে না। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এই পদ্ধতি অনুসরণে বাধ্য করতে হবে। শতভাগ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তার বিধান রেখে তা মনিটরিং করতে হবে। কেবল তবেই আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অনাকাংখিত বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাবে। তেমনি উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থাও একটা শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে প্রত্যাশা করি।
লেখক: শিক্ষা ও সমাজ বিষয়ক গবেষক। ই-মেইল:sarderanis@gmail.com
Leave a Reply