ঝিনাইদহের বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্লাস নেন না

ঝিনাইদহের বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্লাস নেন না। এছাড়া শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। শিশুদের মননশীলতার উন্নয়ন ও শিক্ষার মান বিকাশে সহায়ক স্কুলের ছোটখাট সমস্যাও নিরসন করা হয় না।

সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র)’র ঝিনাইদহের সরকারি প্রাথমিক শিক্ষার উপর সামাজিক নিরিক্ষা শীর্ষক এক প্রতিবেদনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিরাজমান এ সব সমস্যার চিত্র ফুটে উঠেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়, ঝিনাইদহের বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ওয়েলফেয়ার এফোর্টস (উই) এর সহায়তায় ২০১০ সাল থেকে সুপ্র ঝিনাইদহ জেলার ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপর সামাজিক নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুই হাজার ২৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট ঝিনাইদহ জেলায় সরকারি বেসরকারি মিলে এক হাজার ৩২৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

২০১৩ সাল পর্যন্ত জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই লাখ পয়তাল্লিশ হাজার ৭৯১ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়। জেলায় ঝরেপড়া ছাত্রছাত্রীর হার শতকরা ১০.৬৯ ভাগ। বিনামূল্যে দশ লাখ আশি হাজার ২৫১টি বই বিতরণ করা হয়।

সরেজমিন নিরীক্ষায় সুপ্র’র প্রতিবেদনে জেলার সার্বিক প্রাথমিক শিক্ষার একটি চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, গ্রাম পর্যায়ের স্কুলগুলোতে শতভাগ উপবৃত্তি দেওয়া হয় না। এ জন্য শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম। এছাড়া ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনারও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না।

চল্লিশ জন শিক্ষার্থী প্রশ্নের জবাবে উল্লেখ করেছে, শতকরা ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থী নোট বই কিনেছে এবং ৭৮ ভাগ শিক্ষার্থী বলেছে শিক্ষকরা তাদের নোট বই কিনতে উৎসাহ দিয়েছে। আবার ৯৮ ভাগ শিক্ষার্থী এও মনে করে যে নোট বই তাদের শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

এছাড়া ৬৮ ভাগ শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত এবং ৬৩ ভাগ শিক্ষার্থী কোচিং গ্রহণ করে স্কুলে। আবার ৪৩ ভাগ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পায় এবং কিছ‍ু শিক্ষার্থী বলেছে স্কুলে তাদের শাস্তি দেওয়া হয়।

সব স্কুলে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা থাকলেও টয়লেট রয়েছে ৭৩ ভাগ স্কুলে। মাত্র ৩ ভাগ স্কুলে ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া বাথরুমের ছিটকিনিসহ ছোটখাট সমস্যা প্রায় প্রতিটি স্কুলেই বিদ্যমান।

শিক্ষকদের মতামতে উল্লেখ করা হয়, প্রধান শিক্ষক নানা কাজের অজুহাতে ক্লাস নেন না। এছাড়া তারা স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন। শতকরা মাত্র ২৫ ভাগ শিক্ষক তাদের ডিজিটাল পরিচয়পত্র ব্যবহার করেন।

শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশ মালায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, পৌরসভার স্কুলগুলোতে উপবৃত্তি চালু করা, অবকাঠামো খাতে বাজেট বৃদ্ধি, মিড ডে মিল চালু, পরিচালনা কমিটি সক্রিয় করা, খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকদের রাজনীতি থেকে বিরত রাখা, শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকে বেতন কাঠামো নির্ধারণ, স্কুলের সীমানা প্রাচীর দেওয়া।

এ বিষয়ে সুপ্র’র জেলা কমিটির পর্যবেক্ষণ সদস্য সাবেক উপাধ্যক্ষ এন এম শাহজালাল বলেন, তাদের পর্যবেক্ষণে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীর হাজিরাসহ কিছু বিষয়ে উন্নতি হয়েছে। তবে আরো ভাল ফল পেতে সময় লাগবে।

সুপ্র’র জেলা কমিটির আরেক পর্যবেক্ষণ সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু বলেন, সুপ্র’র কাজটি প্রাথমিক শিক্ষার মান্নোয়নে কার্যকরী ভুমিকা রাখবে বলে মনি করি। এ ক্ষেত্রে তিনি শিক্ষকদের আরো আন্তরিক হওয়ার সুপারিশ করেন।

এ বিষয়ে ওয়েলফেয়ার এফোর্টস (উই) এর ডিস্ট্রিক্ট ক্যাম্পেইন ফ্যাসিলিটেটর রাফেজা পারভিন জানান, ২০১০ সাল থেকে সুপ্র জেলার ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপর জরিপ করে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করেছে।

রাফেজা পারভিন বলেন, সামাজিক নিরীক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে প্রাথমিক পর্যায়ে বেশ কিছু সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

সৌজন্যেঃ বাংলানিউজ





About লেখাপড়া বিডি ডেস্ক 1519 Articles
লেখাপড়া বিডি বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা বিষয়ক বাংলা কমিউনিটি ব্লগ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*