জীববিজ্ঞান বিষয়ের উপর বিগত বছরগুলোর বোর্ড প্রশ্ন এবং শীর্ষস্থানীয় স্কুলের প্রশ্নপত্রসমূহের সমাধান

স্কুলের পরীক্ষাই হোক আর বোর্ড পরীক্ষাই হোক– ভালো ফলাফল পেতে চাইলে বোর্ড প্রশ্ন এবং তার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশ্নপত্র সমাধান করে অনুশীলন করার বিকল্প নেই।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আসসালামু আ’লাইকুম। আমি জান্নাতুল ফেরদৌস। বাংলাদেশের সকল স্তরের শিক্ষার্থীদেরকে সম্মিলিত করে লেখাপড়ার প্রয়োজনীয় তথ্য সেবা নিশ্চিত করতে এবং সেইসাথে বাংলা ভাষায় শিক্ষার তথ্য ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে এখন থেকে তোমাদের জন্য নিয়মিত বোর্ডভিত্তিক এবং বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় স্কুলভিত্তিক প্রশ্নপত্রের সমাধান নিয়ে হাজির হবো লেখাপড়া বিডির পাতায়, ইনশাআল্লাহ। 

 

আজকে তোমাদের জন্য থাকছে নবম-দশম শ্রেণীর জীববিজ্ঞান বিষয়ের ৮ম অধ্যায়ের উপর জ্ঞানমূলক এবং অনুধাবনমূলক প্রশ্নসমূহের সমাধান, যেগুলো কিনা বিগত বছরগুলোর বোর্ড প্রশ্নে এবং বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় স্কুলের পরীক্ষায় এসেছে। 

 

জীববিজ্ঞান ছাড়াও তোমাদের জন্য নিয়মিত থাকছে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, বাংলা, ইংরেজি, গণিত ইত্যাদি বিষয়ের বোর্ডভিত্তিক এবং শীর্ষস্থানীয় স্কুলভিত্তিক প্রশ্নপত্রের সমাধান।

তাই সেরা প্রস্তুতি নিতে এবং নিজের প্রস্তুতিকে ঝালিয়ে নিয়ে সবার থেকে একধাপ এগিয়ে থাকতে চোখ রাখো লেখাপড়া বিডির পাতায়।

 

জীববিজ্ঞান

(৮ম অধ্যায়)

 

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

 

(১) মেডুলা কি? [চ. বো. ‘১৯]

বৃক্কের ভিতরের হালকা অংশই হলো মেডুলা।

 

(২) পেলভিস কি? [সকল বোর্ড ‘১৮; য. বো. ‘১৭]

বৃক্কের হাইলাসে অবস্থিত গহ্বরই হলো পেলভিলেখাস।

 

(৩) নেফ্রন কি? [কু. বো. ‘১৬; চ. বো. ‘১৫]

বৃক্কের ইউরিনিফেরাস নালিকার ক্ষরণকারী অংশ ও কার্যকরী এককই নেফ্রন।

 

(৪) ডায়ালাইসিস কি? [সি. বো. ‘১৬]

বৃক্ক সম্পূর্ণ অকেজো বা বিকল হওয়ার পর বৈজ্ঞানিক উপায়ে রক্ত পরিশোধিত করার নাম ডায়ালাইসিস।

 

(৫) রেচন পদার্থ কি? [ঢা. বো. ‘১৫]

বিপাক কার্যের ফলে সৃষ্ট নাইট্রোজেনঘটিত জৈব, অপ্রয়োজনীয় ও বর্জ্য পদার্থই সার্বিকভাবে রেচন পদার্থ।

 

(৬) ইউরোক্রোম কি? [মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, মিরপুর, ঢাকা]

ইউরোক্রোম এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ যার উপস্থিতিতে মূত্রের রং হালকা হলুদ হয়। 

 

(৭) রেচন কাকে বলে? [বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বরিশাল]

মানব দেহ হতে বিপাক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশিত হওয়ার পদ্ধতিকে রেচন বলে। 

 

(৮) ইউটেরোস্কোপিক কি? [ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল ও কলেজ, চট্টগ্রাম]

বৃক্কের পাথর অপসারণ করার একটি পদ্ধতির নাম ইউটেরোস্কোপিক।

 

(৯) হাইলাস কি? [ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিলেট]

বৃক্কের অবতল অংশের ভাজই হলো হাইলাস।

 

(১০) ইউরিনিফেরাস নালিকা কি? [পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়, পটুয়াখালী ]

প্রতিটি বৃক্কে বিশেষ এক ধরনের নালিকা থাকে সেটিই ইউরিনিফেরাস নালিকা। 

 

(১১) মানব বৃক্কের অবস্থান কোথায়? [পিরোজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পিরোজপুর]

মানবদেহের উদর গহ্বরের পিছনের অংশে মেরুদন্ডের দুদিকে বক্ষপিঞ্জরের নিচে পৃষ্ঠপ্রাচীর সংলগ্ন অবস্থায় দুটি বৃক্ক অবস্থান করে। 

 

(১২) মূত্রের রং হলুদ হয় কেন? [নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কুমিল্লা]

মূত্রে ইউরোক্রোম নামক এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ থাকার কারণে মূত্রের রং হলুদ হয়। 

 

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

 

(ক) তোমার দেহে বৃক্ক কিভাবে কাজ করে? ব্যাখ্যা কর। [চ. বো. ‘১৯]

আমাদের দেহে বৃক্ক অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে অপসারণ করে। বৃক্ক বা কিডনির ভেতরের নেফ্রন একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে মূত্র উৎপন্ন করে মূত্র উৎপন্ন করে। উৎপন্ন মূত্র সংগ্রাহী নাঔলিকার মাধ্যমে বৃক্কের পেলভিসে পৌঁছায় এবং পেলভিস থেকে ইউরেটারের ফানেল আকৃতির প্রশস্ত অংশ বেয়ে ইউরেটারে প্রবেশ করে। ইউরেটার থেকে মূত্রথলিতে এসে জমা হয় এবং পরে দেহের বাইরে নিষ্কাশিত হয়।

 

(খ) দেহে পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে মূত্র তৈরিকারী অঙ্গের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো। [সকল বোর্ড ‘১৮]

বৃক্ক মূত্র তৈরি করে দেহে পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। মানবদেহের যাবতীয় শারীরবৃত্তিক কাজ সম্পাদনের জন্য দেহে পরিমিত পানি থাকা অপরিহার্য। আবার দেহে পানির পরিমাণ বেড়ে গেলে নানা রকম শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। মূলত মূত্রের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি পানি দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। বৃক্কের কার্যকরী একক নেফ্রনের মাধ্যমে পুনঃশোষণ প্রক্রিয়ায় দেহে পানির সমতা বজায় রাখে।

 

(গ) মহিলা এবং পুরুষদের মধ্যে কার বৃক্কে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি? ব্যাখ্যা করো। [রা. বো. ‘১৭]

মানববৃক্কে উদ্ভূত ছোট আকারের পাথর জাতীয় পদার্থের সৃষ্টিই বৃক্কে পাথর হিসেবে পরিচিত। বৃক্কে পাথর সবারই হতে পারে। তবে দেখা গেছে যে, মেয়েদের থেকে পুরুষের বৃক্কে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অতিরিক্ত শারীরিক ওজন, বৃক্কে সংক্রমণ রোগ, কম পানি পান করলে, অতিরিক্ত প্রাণিজ আমিষ যেমন– মাংস ও ডিম খেলে বৃক্কের পাথর হবার কারণ হতে পারে।

 

(ঘ) ডায়ালাইসিস কেন করা হয়? [চ. বো. ‘১৬]

বৃক্ক সম্পূর্ণ অকেজো বা বিকল হওয়ার পর বৈজ্ঞানিক উপায়ে রক্ত পরিশোধিত করার নাম ডায়ালাইসিস। কিডনি সম্পূর্ণ অকেজো বা বিকল হলে রক্তে ক্ষতিকর নাইট্রোজেনঘটিত পদার্থ ক্রিয়েটিনিন ও ইউরিয়া বৃদ্ধি পায়। অপদ্রব্য মিশ্রিত রক্তের কারণে শরীর দ্রুত ফুলে ওঠে। রোগী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে থাকে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্ত পরিশোধন করা হয়।

 

(ঙ) অসমোরেগুলেশন বলতে কী বোঝায়? [ঢা. বো. ‘১৫]

দেহের পানি, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লবণ এবং ক্লোরাইড আয়নের মধ্যে একটি আন্তঃসাম্য রক্ষার প্রক্রিয়াকে অসমোরেগুলেশন বলে। মানবদেহে যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পাদনের জন্য দেহে পরিমিত পানি থাকা অপরিহার্য। মূলত মূত্রের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি পানি দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। দেহের পানি সাম্য নিয়ন্ত্রণে বৃক্ক প্রধান ভূমিকা পালন করে।

 

(চ) হেনলির লুপ বলতে কি বুঝায়? [চ. বো. ‘১৫]

প্যাঁচানো নালিকার শেষপ্রান্ত সোজা হয়ে বৃক্কের মেডুলা অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং একটি U আকৃতির ফাঁস বা লুপ গঠন করে পুনরায় কর্টেক্স অঞ্চলে ফিরে আসে। আবিষ্কারক জার্মান চিকিৎসক হেনলির নামানুসারে একে হেনরির লুপ বলা হয়।

 

(ছ) রেচন পদার্থ বলতে কী বুঝ? ব্যাখ্যা কর। [দি. বো. ‘১৫]

রেচন পদার্থ বলতে মূলত নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থকে বুঝায়। মানবদেহের রেচন পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে আসে। ৯০ ভাগ হলো পানি। এছাড়াও মূত্রে ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন ও বিভিন্ন ধরনের লবণ থাকে। আর এ সবগুলোই হলো রেচন পদার্থ।

 

(জ) বৃক্ক প্রতিস্থাপন বলতে কি বোঝায়? [সিলেট ক্যাডেট কলেজ, সিলেট]

বিভিন্ন কারণে বৃক্ক বিকল হতে পারে। একজন সুস্থ মানুষের দুটি বৃক্ক থাকে। একজন ব্যক্তি একটি বৃক্কের সাহায্যে রেচন প্রক্রিয়া চালাতে পারে। কোনো কারণে একজন ব্যক্তির বৃক্ক বিকল হয়ে গেলে তিনি তার নিকটাত্মীয় বা অন্য কারও কাছ থেকে বৃক্ক নিয়ে শরীরে স্থাপন করতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটিকে বৃক্ক প্রতিস্থাপন বলে।

 

(ঝ) টিস্যু ম্যাচ বলতে কী বোঝায়? [জামালপুর জিলা স্কুল, জামালপুর]

যে কোনো অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে দাতার টিস্যুর প্রকৃতি ও ধরন গ্রহীতার টিস্যুর প্রকৃতির ধরনের সাথে মিলে কিনা তা পরীক্ষা করে নেওয়া হয়। যাকে ‘টিস্যু ম্যাচ’ করা বলা হয়। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির পিতামাতা এবং কাছাকাছি আত্মীয়ের টিস্যু ম্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।

 

(ঞ) মূত্র অম্লীয় প্রকৃতির কেন? (ডাঃ খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম)

কোনো পদার্থের অম্ল বা ক্ষারীয় অবস্থা নির্ভর করে তার pH মানের উপর। pH এর মান ৭ হলে সেই পদার্থ নিরপেক্ষ। pH ৭ এর কম হলে তা অম্লীয় আর উপরে হলে তা ক্ষারীয়। মূত্রের pH মান ৬ হওয়ায় তা অম্লীয় প্রকৃতির।

 

(ট) দেহ থেকে নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য অপসারণ জরুরি কেন? [চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, চট্টগ্রাম]

মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হয়, যেমন– ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, অ্যামোনিয়া, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি। এসব বর্জ্য পদার্থগুলো কোনো কারণে শরীরে জমতে থাকলে নানা ধরনের জটিল সমস্যার উদ্ভব ঘটে। এর ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই দেহ থেকে নাইট্রোজেনঘটিত পদার্থ অপসারণ জরুরি।

 

(ঠ) ব্রেন ডেথ বলতে কি বুঝ? [পাবনা জেলা স্কুল, পাবনা] 

ব্রেন ডেথ বলতে এমন মানুষকে বোঝায় যার আর কখনোই জ্ঞান ফিরবে না কিন্তু তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কৃত্রিমভাবে জীবিত রাখা হয়েছে। এ ধরনের মানুষের কিডনি নিয়ে একজন কিডনি বিকল রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভবপর হতে পারে।

 

(ড) কিডনি কিভাবে দেহে পানির সমতা বজায় রাখে? [ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, রংপুর]

কিডনি অসমোরেগুলেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেহে পানির সমতা বজায় রাখে। মানবদেহে যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পাদনের জন্য দেহে পরিমিত পানি থাকা অপরিহার্য। মূলত মূত্রের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি পানি দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। দেহের পানিসাম্য নিয়ন্ত্রণে কিডনি প্রধান ভূমিকা পালন করে। কিডনি নেফ্রনের মাধ্যমে পুনঃশোষণ প্রক্রিয়ায় দেহে পানির সমতা বজায় রাখে।

 

(ঢ) গ্লোমেরুলাস বলতে কি বুঝ? [ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, পার্বতীপুর, দিনাজপুর]

বৃক্কের প্রতিটি নেফ্রন রেনাল করপাসল বা মালপিজিয়ান অঙ্গ এবং রেনাল টিউব্যুল নিয়ে গঠিত। প্রতিটি রেনাল করপাসল আবার গ্লোমেরুলাস এবং বোম্যান্স ক্যাপসুল এ দুটি অংশে বিভক্ত। বোম্যান্স ক্যাপসুল গ্লোমেরুলাসকে বেষ্টন করে থাকে। বোম্যান্স ক্যাপসুল দ্বিস্তরবিশিষ্ট পেয়ালার প্রসারিত একটি অংশ। গ্লোমেরুলাস একগুচ্ছ কৈশিক জালিকা দিয়ে তৈরি। গ্লোমেরুলাস বলতে আমরা এ একগুচ্ছ কৈশিক জালিকাকেই বুঝে থাকি।

 

পরবর্তীতে আরও এমনসব লেখা পেতে নিয়মিত ভিজিট করো লেখাপড়া বিডি ওয়েব সাইটে।





Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*