পাঠদান চালিয়ে নেওয়া গেলেও পরীক্ষা নেওয়া দুঃসাধ্য

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত ১৭ মার্চ থেকেই টানা বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পারছে না পাঠদান করতে পারছে না কোন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে। স্কুল , কলেজের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে কোচিং সেন্টার গুলো। করোনার প্রকোপের কারণে গৃহশিক্ষক রা ও এখন আর যান না শিক্ষার্থীদের বাসায়। 

এদিকে শিক্ষার্থীদের এই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে টেলিভিশনে পাঠদান । সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিকের সকল ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। পাঠদান চললেও শিক্ষাথীরা সকলেই ক্লাস গুলো করছে না। আবার কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বসে আছে হাত গুটিয়ে। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে যেতে চাইলেও পরীক্ষার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মঞ্জুরি কমিশন। সময়মত সেমিস্টার পরীক্ষা দিতে না পারলে আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে পারেন। শিক্ষার্থীরা ও সেশনজটে পড়ার শঙ্কা ও তৈরি হচ্ছে।

শিক্ষা খাতের নীতিনির্ধারক ও অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার বলে মনে করছেন তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন মনে করেন, টেলিভিশন ও অনলাইনে পাঠদান চালিয়ে নেওয়া গেলেও পরীক্ষা নেওয়া দুঃসাধ্য। আসলে ক্লাস নয়, পরীক্ষা নেওয়া নিয়েই সবচেয়ে বড় ভাবনা। ঢাকা ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরাও একই অভিমত দেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘমেয়াদি বন্ধ শিক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ করার প্রধান অন্তরায়। আর সিলেবাস শেষ না হলে বছর শেষে জেএসসি, জেডিসি, প্রাথমিক সমাপনীসহ কোনো পরীক্ষাই নেওয়া যাবে না। এমনকি বার্ষিক পরীক্ষাও হুমকির মুখে পড়বে। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহা. মোকবুল হোসেন বলেন, বছরে চারটি বড় পাবলিক পরীক্ষা বোর্ডগুলো নেয়। এ বছরের এইচএসসি, জেএসসি, জেডিসি নিয়ে করোনার কারণে বড় ধরনের বিপাকে পড়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।

ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক এ বিষয়ে বলেন, স্কুলের সাময়িক বা বার্ষিক পরীক্ষা কোনোভাবে সামলে নিতে পারবে স্কুলগুলো। কিন্তু পড়াশোনা না করতে পারলে, স্কুলে পাঠদান না হলে, আগামী জেএসসি, ২০২১ সালের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েই বড় সমস্যা তৈরি হবে।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সিলেবাস শেষ করার একটি পন্থা হতে পারে এমন- স্বাস্থ্যবিধি মেনে সপ্তাহের একদিন একটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ডাকা যেতে পারে। ওইদিন শুধু ওই ক্লাসের শিক্ষার্থীরাই স্কুলে আসবে। পুরো সপ্তাহের পড়াটা ওইদিন শিক্ষার্থীদের দিয়ে দিতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, এ বছরের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া যায় সেটা নিয়ে তারা ভাবছেন।

অন্যদিকে সমস্যায় পড়েছে উচ্চশিক্ষাও। কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে সেমিস্টারের পাঠদান শেষ করেছে। ইউজিসির বাধ্যবাধকতা থাকায় অনলাইনে পরীক্ষা নিতে পারছে না। এমনকি পরবর্তী সেমিস্টারও শুরু করতে পারছে না। এ বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, করোনার এই পরিস্থিতিতে বিকল্প পন্থায় লেখাপড়া চালিয়ে নিতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদিও এই প্রক্রিয়াটি আরও আগেই শুরু করেছিল, কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে তা চালু রাখা যায়নি।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, পড়াশোনার স্থবিরতা কাটাতে সরকার এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এখনই কাজ শুরু করতে হবে। তিনি বলেন, ১৬ মার্চ একযোগে সব প্রতিষ্ঠান ছুটি দেওয়ার আগে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের ভর্তি কার্যক্রমই শেষ করতে পারেনি।

প্রসঙ্গগত, বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন অন্য নির্দেশনা । প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি উন্নতি না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবে। 





About মোঃ মিলন ইসলাম 1011 Articles
মোঃ মিলন ইসলাম , বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা বিষয়ক বাংলা কমিউনিটি ব্লগ সাইট "লেখাপড়া বিডি"র "চিফ ইডিটর" হিসেবে নিয়োজিত আছেন। এছাড়া, লেখাপড়া বিডি"র প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত আছেন আল মামুন মুন্না।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*