ক্ষীণদৃষ্টি প্রতিকারের ৮ উপায় – মায়োপিয়া প্রতিকারের উপায়

ক্ষীণ দৃষ্টি বা স্বল্প দৃষ্টিকে মায়োপিয়া বলে। চোখের এই সমস্যাটির ফলে আপনি দূরের জিনিস স্পষ্টভাবে দেখতে পান না বা ঘোলাটে বা ঝাপসা দেখেন। চোখের প্রতিসারক ত্রুটির জন্য মায়োপিয়া হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় দূরের কোন বস্তুর ফোকাস রেটিনার উপরে পড়ে কিন্তু মায়োপিয়া হলে এই ফোকাস রেটিনার সামনে পড়ে। এর ফলে দূরের বস্তুকে অস্বচ্ছ বা ঘোলাটে দেখায়। তাই চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং মাথাব্যথা হয়। এটি খুবই যন্ত্রণাদায়ক একটি সমস্যা। যদি মায়োপিয়ার চিকিৎসা করা না হয় তাহলে রেটিনার ক্ষতি হয় এবং স্থায়ীভাবে দৃষ্টিহীন হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে।

মায়োপিয়া হওয়ার কারণ :

মায়োপিয়া হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে কোন কাজ করার সময় খুব কাছ থেকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা।
অন্ধকারে বা কম আলোতে কাজ করাও মায়োপিয়া হওয়ার অন্যতম কারণ
দীর্ঘদিন মাইনাস পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করলেও মায়োপিয়ার অবস্থার অবনতি হতে পারে
টাইপ ২ ডায়াবেটিসও মায়োপিয়া হওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।
বংশগতির কারণেও মায়োপিয়া হতে পারে বলে জানা যায় ওহায়ো ষ্টেট ইউনিভারসিটি কলেজ অফ অপ্টোমিট্রি এর করা এক গবেষণায়।

ঘরোয়া কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে মায়োপিয়ার প্রকোপ কমানো যায়। আসুল তাহলে সেই ঘরোয়া প্রতিকারগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।

১। চোখের ব্যায়াম

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালের অপথালমোলজি বিভাগের গবেষণা মতে জানা যায় যে, চোখের ব্যায়াম মায়োপিয়ার সমস্যার উপর প্রভাব ফেলে। বর্তমানে চক্ষু বিশেষজ্ঞরা ঔষধ ও চশমা ব্যবহারের পাশাপাশি চোখের ব্যায়াম করার ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ইয়োগাও করতে পারেন।

২। দমচর্চা বা প্রাণায়াম

নিয়মিত দমচর্চা করা মায়োপিয়ার প্রতিকারে সাহায্য করে। রিলেক্সভাবে এক জায়গায় বসে গভীরভাবে নাক দিয়ে শ্বাস নিন এবং মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। এভাবে ৩ মিনিট যাবত দমচর্চা করুন প্রতিদিন।

৩। বিরতি নিন

একটানা পড়া, টিভি দেখা বা কম্পিউটারে দীর্ঘক্ষণ কাজ করার ফলে অল্প দূরত্বে চোখের ফোকাস করার প্রয়োজন পড়ে ফলে মায়োপিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই এই কাজগুলো করার সময় মায়োপিয়া হওয়া এড়াতে বা এর তীব্রতা কমানোর জন্য কিছুক্ষণ পর পর বিরতি নেয়া উচিৎ।

৪। পর্যাপ্ত আলোতে কাজ করা

কম আলোতে কাজ করলে দৃষ্টিশক্তির উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। কারণ কম আলোতে কাজ করার সময় চোখের উপর বেশি চাপ পড়ে। ফলে চোখের পেশীতে টান পড়ে এবং মায়োপিয়া বা ক্ষীণদৃষ্টির সমস্যা সৃষ্টি হয়।

৫। ভিটামিন গ্রহণ করুন

মায়োপিয়া প্রতিকারের একটি প্রধান উপায় হচ্ছে ভিটামিন গ্রহণ করা। ভিটামিন এ, বি, ই, ডি এবং ভিটামিন সি এর সাথে ভালো দৃষ্টিশক্তির সম্পর্ক খুবই গভীর। এই ভিটামিনগুলোর উৎস হচ্ছে- গাজর, টমাটো, আপেল, মরিচ, মাছ, সবুজ শাকসবজি, শুষ্কফল এবং বাদাম। ভিটামিন সমৃদ্ধ এই খাবারগুলো নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করুন।

৬। ত্রিফলা

আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় বিভিন্ন রকম উপায় বর্ণনা করা হয়েছে চোখের রোগ নিরাময়ের জন্য। বহেড়া, বঁইচি ও আমলকী একসাথে মিশিয়ে ত্রিফলা তৈরি করা হয়। ত্রিফলা আয়ুর্বেদ ঔষধের দোকানে কিনতে পাওয়া যায় অথবা আপনি বাসাতেও তৈরি করে নিতে পারেন। ত্রিফলার মিশ্রণ চোখের পেশীকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং নিয়মিত পান করলে মায়োপিয়ার সমস্যা নিরাময়ে অত্যন্ত উপকারী ভূমিকা রাখে। ২ কাপ ফুটানো ও ঠান্ডা পানিতে ১ আউন্স ত্রিফলার নির্যাস মিশিয়ে সকালে ও বিকালে চোখ পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে পারেন।

৭। সূর্যোদয় দেখুন

প্রতিদিন সকালে ৩-৫ মিনিট সূর্যোদয় দেখা মায়োপিয়া নিরাময়ের জন্য উপকারী। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে বেরিয়ে পড়ুন। হাঁটা আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী আর সূর্যোদয় দেখা আপনার চোখের জন্য বিশেষ করে মায়োপিয়ার জন্য খুবই উপকারী ভূমিকা রাখে।

৮। উষ্ণতা

দুই হাতের তালু কিছুক্ষণ ঘষে নিয়ে দুই চোখের উপর হালকাভাবে চেপে ধরুন। দিনের যেকোন সময় এটি করতে পারেন। যখনই স্ট্রেস অনুভব করবেন তখন কাজ থেকে কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে এই সহজ এক্সারসাইজটি করুন। এতে আপনার চোখ পুনরুজ্জীবিত হবে।

সূত্র: প্রতিদিনের সংবাদ





About লেখাপড়া বিডি ডেস্ক 1519 Articles
লেখাপড়া বিডি বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা বিষয়ক বাংলা কমিউনিটি ব্লগ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*