রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৩ বছরে পদার্পণ

আজ ০৬ জুলাই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ৬৩ বছরে পর্দাপণ করেছে। এ দীর্ঘ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য।rajshahi university

১৯৫৩ সালে মাত্র ১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ বিদ্যাপীঠের। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে যেমন অবদান রয়েছে তেমনি বাঙালি জাতিকে বিশ্বের বুকে পরিচয় করিয়ে দিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রয়েছে গৌরবজ্জ্বল অবদান।

রাজশাহী শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এ বিদ্যাপীঠ উত্তরবঙ্গের আলোকবর্তিকা হিসেবে জ্ঞানের আলো বিলিয়ে যাচ্ছে যুগ যুগ ধরে।

প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচি: দিনটিকে ঘিরে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ১০টা ৫মিনিটে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন। একই সময়ে জাতীয় পতাকার পাশাশি বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা, হল সমূহের পতাকা উত্তোলন করা হবে। এছাড়া বেলুন, ফেস্টুন, কবুতর অবমুক্ত করে সকাল ১০ টা ১০মিনিটে দিবসের নানা কর্মসূচি উদ্বোধন করা হবে।

কর্মসূচির মধ্যে থাকছে বৃক্ষরোপন, সকাল সাড়ে ১০টায় শোভাযাত্রা এবং ১১টার দিকে সিনেট ভবনে আলোচনা সভা।

ru

আলোচনা সভায় সভাপতি করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহম্মদ মিজানউদ্দিন।

রাবির দীর্ঘ গৌরবোজ্জল ইতিহাস: বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনেক। ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’এর গণআন্দোলন, ৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ৭১’র মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

এসব আন্দোলন সংগ্রামে রাবির ছাত্ররা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন অত্যাচার আর শোষণের বিরুদ্ধে। ষাটের দশকের শেষ দিকে এই ভূ-খণ্ড যখন গণ-আন্দোলনে উত্তাল, তখন শিক্ষার্থীরাও স্বাধীকার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি স্বাধীকার সংগ্রামের ইতিহাসে যুক্ত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহানের নাম। দেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে আর চড়াই-উতরায়ের মধ্যে দিয়ে ৬২ বছর পূর্ণ করে ৬৩ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে রাবি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস: বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় স্যাডলার কমিশনের ভূমিকা তুলনাবিহীন। ১৯৫৩ সালে ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫৪ সালে পদ্মার তীরের বড় কুঠি নামে পরিচিত ঐতিহাসিক রেশম কুঠির ওপর তলায়। ওখান থেকে ১৯৬১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয় মতিহারের সবুজ চত্তরে। এই ক্যাম্পাসটি গড়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের স্থাপত্য পরিকল্পনায়।

ফুলের শোভা, শ্যামলমায়ায় ঢেকে থাকা প্রিয় ক্যাম্পাস কারো কাছে স্মৃতি আবার কারো কাছে বর্তমান। তবে বর্ষপূর্তি সবার কাছে একটি অন্যরকম দিন।

ক্যাম্পাসে আড্ডা: প্রায় ৩২ হাজার শিক্ষার্থীর মিলনমেলা এই ক্যাম্পসে আছে আড্ডার অনেক জায়গা। বিশেষ করে পুরান ফোকলোর মাঠ, টুকিটাকি চত্তর, সিনেট ভবন, লিচু তলা, টুথ বাগান। এর চেয়ে আরো বেশি মজার জায়গা হলো পশ্চিম পাড়া। ক্লাসের বিরতিতে বা সন্ধ্যার পর এসব স্থানে শিক্ষার্থীরা তাদের আপন মানুষের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠেন।

আড্ডা কিংবা পশ্চিম পাড়া মেয়েদের হলের সামনে সন্ধ্যা হলে বান্ধবীদের সঙ্গে সময় কাটানো এখন অনেকের জীবনে শুধুই স্মৃতি।

সেই আড্ডার পরিধি এখন বেড়েছে। লাইব্রেরিতে আগের মতো এখন আর পড়ুয়াদের আগমন ঘটে না। সময় কাটে ইন্টারনেট, ফেসবুক আর মুভি দেখে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। তাছাড়া রয়েছে ছাত্র-শিক্ষক রাজনৈতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা।

বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব: দীর্ঘ ৬২ বছরে রাবি ক্যাম্পাস জড়িত হয়েছে বেশ কিছু প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বের স্মৃতিতে। এখানে শিক্ষকতা করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ইতরাত হোসেন জুবেরী, প্রখ্যাত তাত্তিক রাজনীতিবিদ বদরুদ্দীন উমর, প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী ও সাহিত্যক ড. মুহাম্মদ শহীদল্লাহ, ড. মুহাম্মদ এনামুল হক, তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা প্রয়াত বিচারপতি হাবিবুর রহমান, খ্যাতনামা ঐতিহাসিক ডেভিড কফ, বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সংগীত শিল্পী এন্ড্রু কিশোর, এহসান রাহি এবং বিনোদনে ক্রিকেটার আল-আমিন ও ক্রিকেটার মুশফিক বাবু এ ক্যাম্পাসের মুখ উজ্জল করেছেন। আছেন এমন নাম জানা-অজানা আরো অনেকে। যারা রাবির এক সময়ের ছাত্র ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে আসছে।

প্রবীনদের মূল্যায়ন: পুরোনোদের স্মৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় আগে জৌলুুুুস কম ছিল। কিন্তু ভালো ফল ছিল। দলবাজি কম ছিল। দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ ও প্রথম শ্রেণি প্রদানও কম ছিল। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ছিল মেধাবী শিক্ষকদের জায়গা। কিন্তু এখন আর সেটি নেই। এখন রাবিতে তেলবাজরাই পরীক্ষায় প্রথম হন এবং শিক্ষক হওয়ার জন্যও তেল অন্যতম শর্ত!

এছাড়া সম্প্রতিকালে মেধার ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির ঘাড়ে চেপে এসেছে অস্ত্র। ক্যাম্পসে অস্ত্রের ঝনঝনানি। গুলীর শব্দ। বোমার শব্দ। আগেও ছিল এখনো আছে। ছাত্র রাজনীতির কবলে হারিয়েছে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর জীবন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অনেকে। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা, প্রেম আর ভালবাসায় ভরা এই সুন্দর ক্যাম্পাসটি কখনো হয়ে ছাত্ররাজনীতির প্রতিপক্ষের হিংসার আগুনো উত্তপ্ত। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে কেটে গেছে সে সব বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।

ছাত্ররাজনীতি: দেশে ক্ষমতার পট পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে রাবি ক্যাম্পাসের ছাত্ররাজনীতির কর্তৃত্ব পরিবর্তন হয়। বর্তমানে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে একক কর্তৃত্ব খাটাচ্ছে। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেক সময় হল ছাড়তে হয়েছে, শিবির সন্দেহে মারধর করেছে, অনেকের কাছ থেকে আবার চাঁদাবাজি করছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। পেশি শক্ষির দাপটে ক্যাম্পাস এবং হলগুলোতে ছাত্রলীগ তাদের একক কর্তৃত্বে রেখেছে বলেও অন্যরাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর অভিযোগ।

এক নজরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়:
চ্যান্সেলর: রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ। ভিসি প্রফেসর ড.মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান।  ট্রেজারার প্রফেসর সায়েন উদ্দিন আহমেদ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর মুহাম্মদ এন্তাজুল হক।

আয়তন: ৩০৪ হেক্টর, উচ্চতর গবেষণা ইন্সটিটিউট: ৫টি, ৯টি অনুষদের অধীনে ৫২টি বিভাগ, আবাসিক ও ডরমিটরি; ১৭টি; ১১টি ছাত্র, ৫টি ছাত্রী ও ১টি গবেষকদের।

শিক্ষক: ১১৩১ জন, অফিসার: ৫৭৫ জন, সহায়ক কর্মচারী: ৬৪৩, সাধারণ কর্মচারী: ১২৮৩ জন ও শিক্ষার্থী: প্রায় ৩২ হাজার।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা এ দেশের সর্বপ্রথম স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর। সাবাস বাংলাদেশ নামে একটি ভাষ্কর্য রয়েছে। আরও রয়েছে গোল্ডেন জুবিলি টাওয়ার।

তথ্যসূত্রঃ ক্যাম্পাসলাইভ





About লেখাপড়া বিডি ডেস্ক 1531 Articles
লেখাপড়া বিডি বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা বিষয়ক বাংলা কমিউনিটি ব্লগ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*