কলেজে ভর্তিতে হ য ব র ল: পছন্দের বাইরে ছাত্র পেল মহিলা কলেজ!

শান্তিনগরের রাজ্বি ঢাকা শহরের পাঁচ কলেজের নামে আবেদন করলেও পেয়েছেন একেবারে ভিন্ন কলেজ যার নাম তিনি পছন্দের তালিকায় দেননি। তিনি বলেন, জিপিএ ফাইভ পেয়েছি, অভিভাবকের পরামর্শে কলেজ বাছাই করেছিলাম কিন্তু রেজাল্ট দেখে খুবই অবাক।

এখন শিক্ষাবোর্ডে গিয়ে খোঁজখবর নিব তারও সময় কম। রাজ্বির বাবা একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। তিনি বলেন, আমাদের যদি এ ধরনের হেনস্তায় পড়তে হয় তাহলে এ পদ্ধতির পক্ষে থাকব কী করে। আমার ছেলে পরীক্ষা দিয়ে তার পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারত সে ভরসা আমার আছে।

কুমিল্লার কান্দিরপার এলাকার রিয়াজ ফলাফল দেখতে গিয়ে জানতে পারেন তার পছন্দের কোনও কলেজতো কপালে জোটেইনি বরং তার আবেদনের পাঁচটি কলেজের মধ্যে একটি মহিলা কলেজ । ঠাকুরগাঁ থেকে এসএসসি পাস করা ফয়সাল ও রিপনের পয়েন্ট যথাক্রমে ৪.৮৯ ও ৪.৫৬। দুজনেই একই পছন্দের পাঁচটি কলেজের তালিকায় আবেদন করেছিল। ফলাফলে দেখা গেছে, যে কম পয়েন্ট পেয়েছে সেই রিপন ঢাকার মাইলস্টোনে চান্স পেলেও তারচেয়ে বেশি নম্বর পাওয়া ফয়সাল কোথাও চান্স পায়নি!
সরকারের সিদ্ধান্তে অনলাইন ও এসএমএসের মধ্যে কলেজে ভর্তির ঘোষণা এলেও এসএসসি পাস করা প্রায় এক লাখ ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী আবেদনই করতে পারেনি। নির্ধারিত ১৬ দিনে অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে প্রায় ১১ লাখ ৪৯ হাজার শিক্ষার্থী। এদের মধ্য থেকে মনোনীত হয়েছেন ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৩৭৪ শিক্ষার্থী।

বহু শিক্ষার্থীর কলেজে ভর্তির সুযোগ না পাওয়া এবং আবেদনকৃতদের এসব হয়রানি প্রশ্নে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, এই শিক্ষার্থীরা কেন আবেদন করেনি বা করতে পারেনি তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। চিন্তার কিছু নাই। তবে কোনওভাবেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না অভিভাবকরা।

অনলাইনে শিক্ষার্থীর আবেদনের পাঁচটি পছন্দক্রম থেকে একটি কলেজ নির্ধারণ করা হবে; যেখানে শিক্ষার্থীকে ভর্তি হতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির জন্য এবার দুটি পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়েছে। কলেজগুলোয় নির্দিষ্ট কোটা নির্ধারণ আর অনলাইনে একসঙ্গে পাঁচটি কলেজে ভর্তির আবেদন করার সুযোগ। পদ্ধতিগত কিছু দিক পুনর্বিবেচনায় না নিলে শিক্ষর্থীদের ভুগতে হবে বলে শঙ্কা অভিভাবকদের।

তারা বলছেন, ফরমপূরণের সময় থেকে শুরু করে রেজাল্ট পাওয়া এবং কোন কলেজে সে পড়বে পুরো প্রক্রিয়ায় একটা বিশাল সমস্যা হয়েছে। একদিকে নতুন এই পদ্ধতি নিয়ে নানা প্রতারণা করছে কিছুশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আরেক দিকে অনলাইনে আবেদনের প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

যশোরের নিয়ন পাঁচটি কলেজের তালিকা দিয়েছিলেন সেখানে গাজীপুরের কোনও কলেজের নাম দেওয়া না থাকলেও তার পছন্দের তালিকায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে গাজীপুরে কলেজ। যশোর থেকে গাজীপুরে এসে পড়ালেখা করার মতো যথেষ্ট মানসিক প্রস্তুতি না থাকায় অন্য চারটিতে সুযোগ কীভাবে করে নেওয়া যায় সেদিকে দৌড়াচ্ছেন অভিভাবক। আরেক অভিভাবক নির্ধারিত সময়ে ফরম পূরণ করতে পারেননি বলে ছেলেকে নিয়ে কী করবেন তা ভাবছেন আর বোর্ডে ঘুরছেন যদি কোনও সুরাহা হয়। শাহীনুর রহমান এ বিষয়ে একটু বিরক্তি নিয়েই বলেন, আমার ছেলেটার সঙ্গে এমন হলো! যে পদ্ধতিতে আবেদন করার কথা সেটা কোনওভাবেই হলো না। আমি তখন থেকেই চেষ্টা করছি যদি কোনওভাবে বিষয়টা বুঝানো যায়। তিনি আরও বলেন, আমার ভাইয়ের ছেলে যে কলেজে চান্স পেয়েছে তার সেখানে পড়ানোর মতো সামর্থ নাই। আপনিই বলেন, সব কলেজ সমান সুযোগ এবং সমান অর্থে পড়ার সুযোগ আছে কি সবার? তবে এই পদ্ধতি পরীক্ষামূলক করে পরে তা ব্যাপক আকারে নিতে পারতো। তিনি এও বলেন, আমার মনে হয় শক্ত মনিটরিং না থাকলে এটা সম্ভব না। দিন দিন হেনস্তা বাড়বে।

নতুন পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের কষ্ট, সময় ও শিক্ষাবাণিজ্য থামানো সম্ভব হলেও বিপত্তি ঘটেছে অন্যখানে। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কে কোন কলেজে ভর্তি হওয়ার উপযোগী- সেটার কোনও মনিটরিং নেই। ফলে এমন অনেক কলেজ আছে, যেগুলো প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেবল যাত্রা শুরু করেছে, অবকাঠামো নেই, নেই দক্ষ শিক্ষকও। তাদের ক্ষেত্রে যত শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, ঠিক একইভাবে সমপরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়েছে পুরনো, দক্ষ শিক্ষক আছে এমন কলেজকেও। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নতুন অনুমোদন পাওয়া কলেজগুলোসহ আরও কিছু কলেজ জোর করে অথবা শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে তাদের কলেজকে একমাত্র পছন্দের কলেজ বা প্রথম পছন্দ দিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করছে। এতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা চাইলেও ভাল কলেজ পাননি এবং তারা প্রক্রিয়াটিও বোঝেননি।

এ পদ্ধতিতে কী পরিমাণ ভুগতে হয়েছে তা বোঝা যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ বাক্স খোলা হয়েছে সেগুলো দেখে। শুরু থেকে এ বাক্সে ১০ লাখের কাছাকাছি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানা গেছে।

জিপিএ ৫ পাওয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, অনলাইনে আবেদন করতে গিয়ে তিনি পছন্দক্রমে ভুলবশত ঢাকা কলেজের পরিবর্তে অন্য একটি কলেজের নাম নির্ধারণ করেন। কিন্তু পরে এই ক্রম পরিবর্তনে বার বার চেষ্টা করলেও তিনি পারেননি। একইভাবে অনলাইনে আবেদন শেষ করে টেলিটকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধে, মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে আবেদন, কলেজ নির্ধারণেও নানা সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোর্ড কর্মকর্তা বলেন, যেসব কলেজে ৫০০ আসন রয়েছে, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোটাই দরকার ছিলো। আর বাকিদের নিজেদের মতো করে ভর্তি করানোর সুযোগ দেওয়া যেতে পারতো। তাহলে এতো এলোমেলো হতো না।





Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*