জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২ হাজারেরও বেশি কলেজে মানোন্নয়নের জন্য ক্লাসে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ২৫ লাখ শিক্ষার্থীকে মানসম্মত পাঠদান করতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর বাইরে আরো ৯টি বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে একাডেমিক গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য। এর মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজটমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়মিত ক্লাস কার্যক্রম না হওয়া, শিক্ষক সংকট, দক্ষ ও উপযুক্ত শিক্ষক না থাকা, যারা আছেন তাদের প্রশিক্ষণের অভাব নোট-গাইড নির্ভর লেখাপড়া, নামেমাত্র পরীক্ষাসহ সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় মুখ থুবরে পড়েছে।
এসব কলেজের শিক্ষার মান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) সন্তুষ্ট নয়। যে কারণে তাদের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে পরপর তিন বছর বলা হয়েছে যে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটদের মান নিম্ন। প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়টির অধীন বিভিন্ন কলেজের লেখাপড়ার মান নিয়েও হতাশা প্রকাশ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কলেজ শিক্ষার মানউন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দশ ধরনের নতুন পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছেন।
এগুলো হলো,
১. কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষা কার্যক্রম মনিটরিং। কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল খোলা।
২. শিক্ষা কার্যক্রম তদারকির জন্য আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোকে ব্যবহার করা।
৩. শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া।
৪. শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতিতে কড়াকড়ি। তাদের ক্লাসমুখী করতে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ওপর জোর দেয়া।
৫. ফলাফলের ভিত্তিতে কলেজ র্যাংকিংয়ের ব্যবস্থা করা।
৬. ক্লাসে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত নির্ধারণ করে দেয়ার চিন্তাভাবনা।
৭. শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধারণ ক্ষমতার মধ্যে রাখা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নমালায় বিজ্ঞান শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে ব্যবস্থা নেয়া।
৮. দেশকে ১০টি ভাগে ভাগ করে প্রতি অঞ্চল থেকে ৭টি করে প্রতিষ্ঠান নিয়ে শ্রেষ্ঠ ৭০টি কলেজকে প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কৃত করা।
৯. কেন্দ্রীয়ভাবে পাঠ্যবই রচনা প্রকল্প গ্রহণ।
১০. শিক্ষক নির্বাচনে যে ব্যবস্থা রয়েছে তা সংশোধন করা। শিক্ষকদের বদলি-পদোন্নতি স্বচ্ছ করা।
এসব ব্যাপারে ইতিমধ্যে বিভিন্ন কলেজে চিঠি দিয়ে পরামর্শ চাওয়া হয়। এর বাইরে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মতামত নিয়ে আগামী ৮ মে জাতীয় কর্মশালাও ডাকা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন কলেজ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপারিশ জমা পড়তে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, সারাদেশে বর্তমানে ২হাজার ১৫৪টি উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী কলেজ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১হাজার ৮৭৯টি বেসরকারি এবং ২৭৫টি সরকারি কলেজ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি প্রোগ্রাম, অনার্স, মাস্টার্স ছাড়াও বিভিন্ন পেশাগত ডিগ্রি দিয়ে থাকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৫লাখের বেশি ছাত্রছাত্রী রয়েছে।
এ বিষয়ে ভিসি প্রফেসর ড. হারুণ-অর রশিদ বলেন, কোন কলেজের শিক্ষার কী মান তা আমাদের জানা রয়েছে। শিক্ষার মানউন্নয়নে কী করণীয় তা জানতে ৯টি প্রশ্নসহ একটি প্রশ্নমালা পাঠানো হয়েছে। শিক্ষার মান নিশ্চিতের সঙ্গে যেহেতু পর্যাপ্ত ও মানসম্মত শিক্ষক থাকার বিষয়টিও জড়িত, তাই আমরা আলাদাভাবে কোন কলেজে কত শিক্ষক আছে বা কত পদ শূন্য তা-ও বের করার উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অচিরেই মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত হবে।
তথ্যসূত্রঃ ক্যাম্পাসলাইভ
Leave a Reply