শিক্ষকদের পরামর্শে নোটবই কিনছে চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা

শিক্ষকদের পরামর্শে নোটবই কিনছে চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা। আর সেই নোটবই পড়ে পরীক্ষার হলে যাচ্ছে তারা। ক্লাসে পাঠদানে শিক্ষকরা অমনোযোগী।

সম্প্রতি সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান(সুপ্র)চুয়াডাঙ্গার প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর সামাজিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এমনটিই বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়- শিক্ষার্থীরা নোটবই কিনছে সেক্ষেত্রে শিক্ষকরা তাদের উৎসাহিত করছে। অভিভাবকরাও স্বীকার করেছে, তাদের সন্তানদের জন্য তারা নোটবই কিনেছে। অভিভাবকরা মনে করেন, নোটবই পড়াশোনা ও ভালো ফলাফলের জন্য প্রয়োজন।

শিক্ষার্থীরা বলেছে, তারা প্রাইভেটকোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্যরা বলেছেন, শিক্ষকরাই কোচিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তাদের বিদ্যালয়ে শাস্তি দেওয়া হয়। কিন্তু পড়াশোনা আকর্ষণীয় করার ক্ষেত্রে কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় না।

নিরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা আছে, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার আছে, বিদ্যালয়ে ছেলে ও মেয়েদের পৃথক শৌচাগারের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য অনেক কম শৌচাগার রয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

তাছাড়া শৌচাগারগুলোও মানসম্মত নয়। সবাই বলেছে, তাদের বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া ও গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবস পালিত হয়। দিবস উদযাপনের জন্য তাদের চাঁদাও দিতে হয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেছে, তাদের পরিচয়পত্র আছে। তারা ওটা বিদ্যালয়ে নোটিশ বোর্ডে ঝুলিয়ে রাখে। ক্লাস নেওয়ার আগে তারা পাঠ পরিকল্পনা করেন এবং তারা তা সংরক্ষণ করেন। কিন্তু অভিভাবকদের মতে পাঠ পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয় না। শিক্ষকরা শিক্ষা দেওয়ার সময় শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করেন। কিন্তু অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা উপকরণের ব্যবহারের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।

নিরীক্ষায় জানা যায়, একজন শিক্ষক ৪টিরও অধিক ক্লাস নেয়। শিক্ষকরা বলেছেন, তারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের বিশেষ যত্ন নেন। কিন্তু অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ের কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি।

শিক্ষকদের দাবি, শুধুমাত্র ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য তারা ক্লাসের বাইরে বিনা বেতনে কোচিং করায় এবং সবাই মনে করে কোচিং করানো ভালো। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্যরা বলেছেন, তাদের বিদ্যালয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষক নেই। কেউ কেউ বলেছে, তাদের বিদ্যালয়ে গড়ে ২ জন করে শিক্ষক প্রয়োজন।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্যরা বলেছেন, বিদ্যালয়ে ফিডিং কার্যক্রম নেই এবং বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য সহায়ক হলেও সেখানে নিয়মিত বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পরিষদের কোনো সভা হয় না।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিদ্যালয় থেকে শিশুদের ঝরে পড়ার কারণ হিসেবে দারিদ্র্যতা ও শিশু শ্রমকে চিহ্নিত করেছে। কোনো কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা সহায়ক উপকরণ যথেষ্ট হলেও সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম এবং লেখাপড়ার মান দুর্বল বলে কেজি স্কুলে ভর্তি হচ্ছে বেশি।

কোনো কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে গাদাগাদি করে বসতে হয়। একটি শ্রেণির জন্য দুটি শাখা খোলার প্রয়োজন হলেও শিক্ষক স্বল্পতা ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়- চুয়াডাঙ্গায় প্রাথমিক শিক্ষা শতভাগ ও শিক্ষার মান্নোয়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, চুয়াডাঙ্গা শিক্ষা কর্মকর্তা, সংম্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ, এলাকার নাগরিক সমাজ ও সাধারণ জনগণকে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।

সৌজন্যেঃ বাংলানিউজ





About লেখাপড়া বিডি ডেস্ক 1519 Articles
লেখাপড়া বিডি বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা বিষয়ক বাংলা কমিউনিটি ব্লগ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*