১৩ আগস্ট এইচএসসির ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে তানিয়ার (ছদ্মনাম) মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। বিজ্ঞান বিভাগ অল্পের জন্য জিপিএ-৫ পায়নি সে, পেয়েছে জিপিএ ৪.৯০। দুশ্চিন্তা এখন তার সকাল-সন্ধ্যার সঙ্গী। তার মতে, ‘কী হবে এই জীবন নিয়ে। বন্ধুরা সবাই জিপিএ-৫ পেল, শুধু আমি ছাড়া। আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।’ ওদিকে রাজীবের (ছদ্মনাম) অবস্থাও একই রকম। মানবিক বিভাগে থেকে সে পেয়েছে জিপিএ ৪.৮০।
অল্পের জন্য জিপিএ-৫ না-পাওয়া তানিয়া ও রাজীবের সংখ্যা কিন্তু কয়েক লাখ। তাদের অনেকেই অকারণে হাতাশার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে।
কিন্তু চারপাশে একটু চোখ মেললেই এমন উদাহরণ হরহামেশা পাওয়া যাচ্ছে, যাঁরা এসএসসি ও এইচএসসির একটি বা দুটির কোনোটিতেই জিপিএ-৫ পাননি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পেরেছেন এবং পেশাজীবনে সাফল্য পেয়েছেন। এসএসসি ও এইচএসসির দুটির একটিতেও জিপিএ-৫ না-পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করেছেন, এমন উদাহরণও আছে ভূরি ভূরি। চলো, এ রকম কয়েকজনের গল্প শোনা যাক। যেমন: সোহাগ হাওলাদার। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগ বলেন, ‘এসএসসি ও এইচএসসির দুটিতেই আমি জিপিএ-৫ পাইনি। একটিতে পেয়েছিলাম ৪.৮৮। কিন্তু ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকায় ১৮২তম স্থান লাভ করি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমার একটাতেও জিপিএ-৫ ছিল না। এসএসসিতে পেয়েছিলাম জিপিএ-৪.৬৯ আর এইচএসসিতে ৪.৯০। একটু হতাশ হয়ে পড়লেও কিন্তু মনোবল হারাইনি। কঠোর পরিশ্রম করে দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকায় (২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে) ৬৫তম হই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী আইন বিভাগের জাহিদ হাসান। তাঁরও এসএসসি ও এইচএসসির দুটির একটিতেও জিপিএ-৫ ছিল না। জাহিদ বলেন, ‘আমার এসএসসিতে জিপিএ-৪.১৩ আর এইচএসসিতে ৪.৯০। কিন্তু আমি হতাশ হইনি। কারণ, আমি জানতাম, যাঁদের সাধারণ জ্ঞানের ওপর দখল ভালো, তাঁরা ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করবে। আমি ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই।’
ফাহমী আহসান এইচএসসিতে ৪.৭০ পেলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এমআইএস) বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, চেষ্টা করলে সব সম্ভব।
আবার পেশাজীবনে সাফল্যের উদাহরণও দেওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস থেকে স্নাতক আলামিন মোহাম্মদ ৩৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েছেন, কিন্তু তাঁর এইচএসসিতে ছিল জিপিএ-৪.৮০।
সুতরাং, তোমরা যারা সঠিক তথ্য না পেয়ে হতাশায় ঘুরপাক খাচ্ছ, তারা নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝে গিয়েছ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জিপিএ-৫ পাওয়া প্রধান শর্ত নয়। ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ঘোষিত হয়েছে। ভর্তিতথ্য অনুযায়ী ‘ক’ ইউনিটের জন্য বিজ্ঞান শাখা থেকে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয় বাদ দিয়ে একত্রে মোট জিপিএ-৮.০০ থাকলেই চলবে। তেমনি ‘খ’ ইউনিটের জন্য চতুর্থ বিষয় বাদে একত্রে জিপিএ-৭.০০, ‘গ’ ইউনিটের জন্য চতুর্থ বিষয় বাদে একত্রে জিপিএ-৭.৫০, ‘ঘ’ ইউনিটের জন্য চতুর্থ বিষয় বাদে একত্রে মোট জিপিএ-৭.০০, আর ‘চ’ ইউনিটের (চারুকলা) জন্য একত্রে মাত্র ৬.৫ থাকতে হবে।
এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার দিকে তাকানো যাক। এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় একসঙ্গে জিপিএ-৮.০০ এবং আলাদাভাবে জিপিএ-৩.৫০ থাকতে হয়।
ওপরের নানা তথ্য থেকে তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছ, এইচএসসিতে ৪.৮ কিংবা ৪.৫ জিপিএ পেলেই সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাচ্ছে না; বরং তোমার জন্য সব দরজা খোলাই আছে। আত্মবিশ্বাস আর সঠিক পরিশ্রমই তোমাকে পৌঁছে দেবে সাফল্যের বন্দরে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় যেখানে জিপিএ-৫ প্রয়োজন হচ্ছে না, সেখানে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা এর কাছাকাছি, কিংবা কম। সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে মেধা যাচাইয়ের সুযোগ তো রয়েছেই।
এ বছর সারা দেশে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৭ হাজার ৭৮৯ জন। কিন্তু সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়েও এত আসন নেই। কাজেই লড়াইটা হবে মেধার, জিপিএ-৫-এর নয়। মনে রাখা জরুরি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা তুমুল প্রতিযোগিতামূলক একটি পরীক্ষা। এখানে জায়গা করে নিতে হলে মেধার প্রমাণ দিতে হবে। অতএব, তোমার হতাশার সময় শেষ। এখনই শুরু করে দাও প্রস্তুতি। ভর্তি পরীক্ষার এই মহাযুদ্ধে টিকে থাকার শেষ সময় কিন্তু বয়ে যাচ্ছে। সুতরাং, হাল ছেড়ো না বন্ধু…!
Leave a Reply