প্লিজ, আমাদের কথা একবার হলেও ভাবুন!

রাজনীতি না শিক্ষা কোনটি জাতির মেরুদন্ড? একটি দেশকে রাজনীতি না শিক্ষা এগিয়ে নিয়ে যায়, তা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আরেকবার ভেবে দেখার সময় এসেছে! সংবিধানে লিপিবদ্ধ গণতন্ত্রকামী এ দেশটিতে শিক্ষাকে জাতির আলোকবর্তিকা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতি, একটি দেশের সামগ্রিক উন্নতির সমতুল্য হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। এদেশের লাখো লাখো শিক্ষার্থীর মনে একটাই প্রশ্ন, শিক্ষাকেই যদি জাতির মেরুদন্ডের সাথে তুলনাই করা হয় তাহলে সেই মেরুদন্ডকে কেন সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছেনা? এটি পরীক্ষিত সত্য যে, একটি দেশের উন্নয়ন অনেকাংশেই শিক্ষার উপর নির্ভর করে। তাহলে আমাদের দেশের রাজনীতিক দলগুলো কি সে কথা প্রতিমুহূর্তেই ভুলে যান! আমাদের দেশের সরকারি এবং বিরোধী উভয়ই রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে সব সময় প্রথমেই দেখতে পাই শিক্ষাকে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে দেখবে কিন্তু বর্তমানে আমরা এ কোন গুরুত্ব দেখতে পাচ্ছি?
মানব্বন্ধন
শিক্ষাকে কেন হরতাল, অবরোধ তথা রাজনৈতিক কর্মসূচির আওতামুক্ত রাখা হবেনা? ক্ষমতা দখলের নামে শিক্ষাকে কেন জিম্মি করা হবে? ছাত্রসমাজ, পরীক্ষার্থী সবাই অবরোধের বিরুদ্ধে! কী জন্য অবরোধ? দেশের জন্য? জনগণের জন্য? অবরোধ তো দেওয়া হয়েছে স্রেফ দলীয় স্বার্থে। দুর্ভাগ্যজনক যে, আমাদের রাজনীতিকেরা তাঁদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এতটাই অন্ধ যে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করতেও তারা দ্বিধাবোধ করেন না। এই অসুস্থ রাজনীতি আর কত দিন? এর শেষ কোথায়? যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, যাঁরা ক্ষমতায় যেতে চান, তাঁরা রাজনীতি করার অনেক সময় পাবেন। সময় পাবেন আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি পালনেরও। কিন্তু দয়া করে শিক্ষাকে রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে রেহাই দিন।

একজন কোমলমতি শিক্ষার্থী যখন বছরের প্রথমেই নতুন বই হাতে পায় তখন সে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠে। নতুন শ্রেণিতে নতুন করে পড়াশুনা করার আলাদা এক নতুন প্রাণ ফিরে আসে তার মনে। কিন্তু বছরের ঠিক শুরুর দিন থেকে এখন পর্যন্ত কোমলমতি শিক্ষার্থীর সেই প্রাণকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে!

সকল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি বিনীত আবেদন, শিক্ষাকেই যদি আপনারা জাতির মেরুদন্ড হিসাবে অাখ্যায়িত করেই থাকেন তাহলে সেই শিক্ষাকে বাঁচাতে যদি সবার আগে এগিয়ে না আসেন তাহলে এই দেশটাই তো একদিন শেষ হয়ে যাবে! আমরা সঠিকভাবে মানুষ না হতে পারলে এ দেশেরই তো সবচেয়ে বড় ক্ষতি।

অবরোধ, হরতাল, পেট্রলবোমা, ককটেল, জ্বালাও-পোড়াও, মামলা, হামলার কবলে বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতি। এ রাজনীতির ঘেরাটোপে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে দেশের পুরো শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষার সঙ্গে জড়িত এ দেশের প্রায় পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী এবং তাদের সঙ্গে জড়িতদের সংখ্যা হিসাব করলে প্রায় সমগ্র জাতির ভবিষ্যৎ পঙ্গুত্বের দিকে নিশ্চিতভাবে ধাবিত হচ্ছে। এর মধ্যে চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫ লাখ। এসব শিক্ষার্থীর গত ১০ কিংবা ততোধিক বছরের মূল্যায়ন নির্ধারিত হবে এ পরীক্ষার মাধ্যমে। কিন্তু দেশের বর্তমান ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেই পরীক্ষায় তারা জাতির জন্য কতটুকু সফলতা আনতে পারবে তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান খুঁজতে গিয়ে পরীক্ষার্থীদের জিম্মি করা হবে আত্মঘাতী। একজন শিক্ষার্থীও যদি পরীক্ষা দিতে ব্যর্থ হয় বা পথে হামলার শিকার হয়, তার দায় রাজনীতিবিদদেরকেই নিতে হবে।

বছরের ঠিক শুরু থেকেই দেড় মাসেরও অধিক সময় ধরে আমরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারিনা। আমরা আমাদের শিক্ষার অধিকার চাই। আমরা এ দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমাদেরকে সুযোগ দিন। হরতাল, অবরোধকে শিক্ষা থেকে দূরে রাখুন। যদি আপনারা এভাবে শিক্ষাকে নিয়ে খেলতে থাকেন তাহলে দেশের ললাট লিখনে কী হবে তা আমাদের কাছে অনিশ্চিত ও শঙ্কাযুক্ত। কাজেই সরকার ও বিরোধী উভয়ই রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের মতো কিশোর প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে হলেও বাস্তব ও গঠনমূলক সিদ্ধান্ত নিন, দাম্ভিকতা ত্যাগ করে শিক্ষার স্বার্থে নমনীয় হোন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিন।

এদেশ আমার আপনার নয়, এদেশ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের। দেশের এই সন্ধিক্ষণে তাই আপনাদের প্রতি সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলবো, দয়া করে দেশের উন্নতির অক্সিজেন শিক্ষার কথা ভাবুন। আমাদের কথা ভাবুন।





About মামুনুর রশিদ 2 Articles
শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*