“ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ)বিশ্ব মানবতার মুক্তির সোপান” – মাওলানা মুহাম্মদ বোরহান উদদীন

ঈদে মিলাদুন্নবী ফজিলত: বর্ষ পরিক্রমায় পবিত্র মাহে রবিউল আউয়াল আবারো ঘুরে এলো আমাদের দ্বারে। তাতেই বিশ্ব জাহানের নবী প্রেমিকদের অন্তরে রসূল (দ.)’র প্রেম ও ভালবাসা প্রবলভাবে জাগরিত হয়। বর্তমান নাজুক এই সময়ে যখন বিশ্ব জুড়ে দুর্বলের ওপর সবলের, মুসলমানদের ওপর ইসলাম বিদ্বেষী, ইহুদী-খ্রিষ্টান চক্র যখন ফিলিস্তিন, ইরাক, মায়ানমার, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া, মিশর, ইয়ামেনের মত ইসলামী রাষ্ট্রের উপর চরম জুলুম নিপীড়ন বিশেষ করে ভারত, মায়নমারের নিরীহ অবুঝ শিশু ও মুসলমানের উপর বর্বর গণহত্যা হয়েছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা দেশ ছাড়া হয়েছে , ফ্রান্স সরকারের পৃষ্টপোষকতায় মুসলমানদের অন্তরের স্পন্দন প্রিয়নবী  মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যঙ্গচিত্র-কার্টুন নির্মাণ ও প্রদর্শনের মতো দুর্সাহস করেছে  এমন বাকরুদ্ধ সময়ে বছর ঘুরে শান্তি ও মুক্তির সওগাত জানান দেয় মহানবী (দ,)’র মিলাদ তথা শুভাগমন স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র মাহে রবিউল আউয়াল।

ঈদে মিলাদুন্নবী

Advertisement

ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২২

ঈদে মিলাদুন্নবী কি ও কেন: মানবতার প্রতিটি অঙ্গন যখন বর্বরতা ও ঘৃণ্যতায় বিপর্যস্থ ছিল ঠিক সেই সময়ে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই রবিউল আউয়াল সুবহে সাদেক সময়ে মক্কার বুকে বাবা আবদুল্লাহ (রা.) ও মা আমেনা (রা.)’র কুলে অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে মুক্তির শাশ্বত বার্তা নিয়ে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (দ.) ধারার এ বুকে আর্বিভূত হন। যার নূরের স্পর্শে বিশ্ব জাহান হয়ে ওঠে উদ্ভাসিত, আলোকিত ও মহিমান্বিত।

ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে বক্তব্য

এই যেন তমসার বুকে চাঁদের উদয়’। দীর্ঘ সাধনা ও অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে তিনি দুর্ধর্ষ আরব জাতিকে ইসলামের পতাকাতলে সমবেত করেন। অসভ্য জাতিকে সু-সভ্যরূপে গড়ে তুলেন। অশান্ত পৃথিবীকে দেখান শান্তি ও কল্যাণের পথ। অধিকার বঞ্চিত মজলুম মানুষ তার নূরানী ছোয়ায় ফিরে পায় আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার। কন্যাশিশু ও নারী ফিরে পায় তার যথাযথ ধর্মীয় ও সামাজিক মর্যাদা। সর্বস্থরের মানুষের মাঝে সুন্দরভাবে জীবনধারনের সাহস ও আত্ম-বিশ্বাস ফিরে আসে তারই ওসিলায়।

মানবতার কান্ডারী মহানবী (দ.)’র আগমনে মানবজাতি কল্যাণময় পথের পরিপূর্ণ দিক-নির্দেশনা, মানবিক মূল্যবোধ ও মর্যাদার গভীরতম চেতনা লাভ করে ধন্য হয়। তার মাধ্যমেই ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করে। 

ঈদে মিলাদুন্নবীর কবিতা

ফলে তাঁর পৃথিবীতে শুভাগমনের দিনটির চেয়ে সবচেয়ে বেশি আনন্দের দিন মুসলমান তথা পৃথিবীর জন্য আর কি হতে পারে? কবি নজরুল ইসলাম কতইনা সুন্দর করে বলেছেন, “ত্রিভূবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলরে দুনিয়ায়/আয়রে সাগর আকাশ বাতাস দেখবি যদি আয়” তাই আনন্দোৎসব করে মৌন মিছিল, বর্ণাঢ্য শুভাযাত্রা, জশনে জুলুস বের করা, যিকির-আজগার, দরুদ-সালাম ও দান খয়রাত করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। 

স্বয়ং রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেছেন, “হে মাহবুব! আপনি বলে দিন তারা (বান্দা) যখন তাদের আল্লাহর পক্ষ হতে কোন নেয়ামত/অনুগ্রহ লাভ করে তখন তারা যেন তার জন্য খুশি উদ্যাপন করে। অন্যত্র বলেছেন, আমি আপনার খ্যাতিকে সু-উচ্চ মর্যাদা দান করেছি। তাইতো আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করে, অতএব হে ঈমানদারগণ তোমরাও আদবের সাথে আমার নবীর উপর দরুদ ও সালাম পেশ কর। (সূরা আহযাব,আল-কুরআন) 

ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনা

তাই মহান আল্লাহ পাকের প্রিয় হাবীবের স্মরণে শুধু এই দিনটিতে নয় বরং দুনিয়ার প্রতিটি প্রান্তে অযুত কন্ঠে জিকির-আজকার হচ্ছে প্রতিটি অণুক্ষণে। যেমন কবি বলেন- বালাগাল ওলা বে-কামালিহি, কাশাফাদ্দোজা বে জামালিহি, হাসনাত জা’মিও খেসালিহি সাল্লু আলাই ওয়ালিহি/মোস্তফা জানে রহমত পেলাহ কো-সালাম/ ইয়া নবী সালাম আলাইকা-হে নবী আপনার প্রতি লাখো দরুদ ও সালাম সহ এরকম হাজারো কবিতার ভাষায়। 

ফরাসী ঐতিহাসিক দার্শনিক লা মার্টিনের মতে, মহানবী (দ.) দার্শনিক, বাগ্মী, বাণীবাহক, আইনপ্রণেতা, যুদ্ধা, সর্বমতবাদের উপর বিজয়ী, যুক্তিপূর্ণ বিশ্বাসের এক মূর্তিহীন ধর্মীয় মতবাদের প্রর্বতক দুনিয়ার বুকে কুড়িটি পার্থিব সাম্রাজ্যসহ একটি একক আধ্যাত্মিক, মহান আল্লাহর মনোনীত মতবাদ ইসলাম সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।

আরো বলেন, মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব পরিমাপে দুনিয়াতে বিশ্বনবী (দ.)’র চাইতে আর কোন শ্রেষ্ঠতর ব্যাক্তি আছেন কি? আল্লামা ইবনে হিশাম বলেন-মক্কা বিজয়ের দিনও তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়াবনত, দরদী ও সহনশীল। আর আল্লাহ তায়ালা মহানবী (দ.) এর মাধ্যমে ইসলামকে পরিপূর্ণতায় রূপ দান করেছেন। কবি গোলাম মোস্তফা’র ভাষায়, তুমি না এলে দুনিয়ায় আধারে ডুবিত সবি..। 

বস্তুত তাঁর জীবনী অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে বর্তমান নাজুক বিশ্বে শান্তি, সাম্য, ন্যায় বিচার, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি। ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)’র এই পবিত্র ক্ষণে আমরা তাঁর জীবনার্দশ অনুসরণের মাধ্যমে পৃথিবীতে শেষ দিন পর্যন্ত মানুষকে ন্যায় ও কল্যাণের পথ দেখাতে পারি। মহামানব বিশ্বনবী (দ.)’র জন্ম ও ওফাত শরীফের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) হোক মানবতার কল্যাণের শিক্ষাগ্রহণের এক উৎজ্বলতম ক্ষণ। নিশ্চয়ই তাঁর জীবন আর্দশের মধ্যে রয়েছে আমাদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা।





About মাওলানা মুহাম্মদ বোরহান উদ্দীন 47 Articles
তিনি বর্তমানে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মহিলা ফাযিল মাদরাসা, ষোলশহর, চট্টগ্রামে শিক্ষকতা করছেন এবং মসজিদ- এ রহমানিয়া গাউসিয়া, শীতলঝর্ণা আ/এ, অক্সিজেন, বায়েজিদ, চট্টগ্রাম-এ সম্মানিত খতিব হিসেবে নিযুক্ত আছেন। এর আগে তিনি মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া সুন্নিয়া দরসে নেযামী, মোহরা, চট্টগ্রামে ৫ বছর শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*