মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এমএইচএম প্ল্যাটফর্মের মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন ডে ২০২২ পালন

মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মাসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২২ উপলক্ষে ‘মেকিং মেন্সট্রুয়েশন আ নরমাল ফ্যাক্ট অব লাইফ বাই ২০৩০: সেলিব্রেটিং মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন ডে ২০২২’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম। ২৯ মে রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত হোটেল লেকশোরে মাসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম ওয়াশ, এসআরএইচআর এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান – এই তিন খাতের সমন্বয়ে কাজ করে। এই সমন্বয়ের পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মটি ওয়াশ এবং এসআরএইচআর সংশ্লিষ্ট চলমান প্রোগ্রামগুলোতে ভূমিকা রাখছে।

আমাদের সমাজে মাসিক এক প্রকার ট্যাবু হওয়ায় বেশিরভাগ নারী ও কিশোরী জনসমক্ষে মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করেন। ন্যাশনাল হাইজিন ফলো-আপ সার্ভে ২০১৮ অনুসারে, মাত্র ৫৩ শতাংশ স্কুল ছাত্রী মাসিকের ব্যাপারে আগে শুনেছে, ৩০ শতাংশ ছাত্রী মাসিক চলাকালীন স্কুলে অনুপস্থিত থাকে এবং ৩৪ শতাংশ কিশোরী মাসিকের সময় পুরনো কাপড় ব্যবহার করে। সকল নারী ও কিশোরীর জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করছে এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম। মাসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২২-এর এই বছরের প্রতিপাদ্য ‘২০৩০ সালের মধ্যে মাসিককে জীবনের একটি স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা’। এই প্রতিপাদ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সঠিক মাসিক স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই অনুষ্ঠানে এমএইচএম প্ল্যাটফর্মের সহযোগীতামূলক কাজ তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে মাসিক স্বাস্থ্যবিধির বর্তমান পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়। এর মধ্যে ছিলো যথাযথ শিক্ষার মাধ্যমে মাসিক সংক্রান্ত সামাজিক ট্যাবু দূর করা, মানসম্পন্ন এমএইচএম (মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন ম্যানেজমেন্ট) পণ্য সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করা, এমএইচএম’র জন্য ওয়াশ সুবিধাগুলো আপগ্রেড করা এবং এমএইচএম পণ্য নিরাপদে ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করার মতো বিষয়গুলো। অনুষ্ঠানে অন্যান্য কৌশল এবং পরামর্শ নিয়েও আলোচনা করা হয়, এর মধ্যে ছিলো বিভিন্ন খাতের সমন্বয়করণ, বেসরকারি খাতকে কাজে লাগানো, অংশীজনদের নির্দেশনা প্রদান এবং সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সোশ্যাল সেক্টরের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার মাশফিকা জামান সাতিয়ার; বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর (অ্যাকাডেমিক) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের অধ্যাপক ও সাবেক পরিচালক ড. মাহবুবা নাসরীন, পিএইচডি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের পলিসি সাপোর্ট শাখার যুগ্ম সচিব নুমেরী জামান।

এমএইচএম প্ল্যাটফর্মের চেয়ারপার্সন ও ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, “এমএইচএম প্ল্যাটফর্মের উদ্দেশ্য হচ্ছে মেন্সট্রুয়েশন বা জেন্ডার নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের একটি প্ল্যাটফর্মের অধীনে আনা এবং সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়নে সহায়তা করা। এমএইচএম ও এনবিআর’র সম্মিলিত প্রচেষ্টার কারণে গত বছর সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে যে, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর কোনো কর থাকবে না। আমরা জ্ঞানভিত্তিক একটি অ্যাপ তৈরি করেছি, যেখানে মাসিক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মকর্তারা যেসব কাজ করেছেন সে সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরা হবে এবং অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে এসব জ্ঞান পৌঁছে দেওয়া হবে।”

স্থানীয় সরকার বিভাগের পলিসি সাপোর্ট শাখার যুগ্ম সচিব নুমেরী জামান বলেন, “আমরা মাসিক নিয়ে আমাদের সমাজে যেসব সমস্যা রয়েছে তা ইতোমধ্যে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছি। এর পরের ধাপ হচ্ছে এসব সমস্যা সমাধানে সুপরিকল্পিত কৌশল বাস্তবায়ন। আমরা আশা করি, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০৩০ সালের আগেই মাসিককে একটি স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো।”

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর (অ্যাকাডেমিক) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের অধ্যাপক ও সাবেক পরিচালক ড. মাহবুবা নাসরীন, পিএইচডি বলেন, “বহু বছর ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় নারীরা মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে আসছেন। বর্তমানে আমরা এই ক্ষেত্রে বেশ ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি এবং এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম এই বিষয়ে পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখছে। আজকে যে অ্যাপ উন্মোচিত হলো তা এই পরিবর্তনেরই একটি অংশ।”

নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সোশ্যাল সেক্টরের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার মাশফিকা জামান সাতিয়ার বলেন, “মাসিক ও মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা (এমএইচএম) নিয়ে এই ২০২২ সালে এসেও বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা সমাজে বিরাজ করছে, যা সত্যিই দুঃখজনক। মাসিক শুধু একজন নারীর ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি মনুষ্য প্রজাতির প্রজননের সাথে জড়িত এবং এটি লুকিয়ে রাখার মতো কোনো বিষয় নয়। এ সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারণা থেকে আমাদের বের হতে হবে।”

এই অনুষ্ঠানে মাসিক স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি মোবাইল অ্যাপ উন্মোচন করা হয়। এমএইচএম প্ল্যাটফর্মের চেয়ারপার্সন ও ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহানের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে, ইউনিসেফের ওয়াশ স্পেশালিষ্ট শফিকুল আলম ন্যাশনাল মেন্সট্রুয়াল হাইজিন ম্যানেজমেন্ট স্ট্র্যাটেজি ২০২১ এর চিত্র তুলে ধরেন।





About লেখাপড়া বিডি ডেস্ক 1519 Articles
লেখাপড়া বিডি বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা বিষয়ক বাংলা কমিউনিটি ব্লগ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*