কৃষকদের নানা ধরনের কৃষি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও দেশের একমাত্র ফুল-স্ট্যাক অ্যাগ্রিটেক স্টার্ট-আপ আইফার্মার সম্প্রতি একটি নতুন ফাইন্যান্সিং রাউন্ড থেকে ২.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের (১৮ কোটি টাকা) বিনিয়োগ পেয়েছে। ফলে, প্রতিষ্ঠানটি এর প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রেখেছে।
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড (আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ভেঞ্চার শাখা) এ ফাইন্যান্সিং রাউন্ডটিতে নেতৃত্ব দেয়। নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক হেজ ফান্ড ফার্ম মিলভিল অপরচুনিটিস এ রাউন্ডে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ সরকারের আওতাধীন আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ফ্ল্যাগশিপ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড স্টার্টআপ
বাংলাদেশও এ ফাইন্যান্সিং রাউন্ডে অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশে প্রায় ১৬.৫ মিলিয়ন কৃষক রয়েছে এবং প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষক সামান্য জমির মালিক। বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অর্থ ও ভালো মানের কৃষি উপকরণ, যেমন: বীজ, কীটনাশক, সার ইত্যাদির যোগান নিশ্চিত করা এবং পরবর্তীতে তাদের পণ্য বিক্রি করার জন্য ক্রেতা খোঁজা। ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করা আইফার্মার দেশের সবচেয়ে বড় এগ্রি-টেক প্রতিষ্ঠান, যা কৃষকদের প্রয়োজন অনুযায়ী সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে। আইফার্মার কৃষকদের অর্থায়নের জন্য খুচরা ও প্রাতিষ্ঠানিক তহবিলকারীদের জন্য সুযোগ তৈরি করে দেয় এবং কোম্পানি ও খুচরা বিক্রেতাদের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে উচ্চ-মানের কৃষি উপকরণগুলো ব্যবহার করতে সুবিধা প্রদান করে। এর ফলে, এটি কৃষকদের কাছ থেকে পণ্যগুলো একত্রিত করার ক্ষেত্রে এবং প্রাতিষ্ঠানিক ক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা ও পাইকারি বাজারে বিক্রি করে এমন কৃষকদের জন্য আরো ভালো বাজার তৈরি করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
এ নিয়ে আইফার্মার’র প্রধান নির্বাহী ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ ইফাজ বলেন, “আমরা বর্তমানে ১৯ টি জেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করছি; যেখানে আমরা প্রায় ৬৩ হাজারেরও বেশি কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা প্রদান করছি, যেখানে ২০২০ সালে বিভিন্ন ধরনের সেবাপ্রাপ্ত কৃষকের সংখ্যা ছিলো মাত্র ছয় হাজার।”
কৃষি উপকরণ সরবরাহের লক্ষ্যে আইফার্মার প্রায় ২৯০০+ অ্যাগ্রি ইনপুট রিটেইলারদের সাথে কাজ করছে, যা কৃষকদের নিকটস্থ রিটেইলারদের কাছ থেকে সাশ্রয়ী দামে কৃষি বিষয়ক উপকরণগুলো কিনতে সাহায্য করবে। আইফার্মার বর্তমানে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সংগ্রহ করা ৮০০০+ টন কৃষি পণ্য সরবরাহ করে এবং এরপর প্রাতিষ্ঠানিক ক্রেতা, পাইকারি বাজার ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আইফার্মার রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২২ সালে ৭.৭ গুণ বেড়েছে। বাজারে কৃষি পণ্য সরবরাহ, খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কৃষি উপকরণ বিক্রি ও অর্থায়ন থেকে কমিশন লাভের মাধ্যমে এ রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে।
এ নিয়ে আইফার্মারের সহ-উদ্যোক্তা ও সিওও জামিল এম আকবর বলেন, আমরা যখন ২০২০ সালের জুনে কৃষিজাত পণ্য সরবরাহ শুরু করি, তখন আমাদের মাসিক ভলিউম ছিলো প্রায় ৫০+ টন।
এখন এটি প্রায় ৮০০০+ টন। প্রতিদিন আমরা কৃষকদের কাছ থেকে পণ্যগুলো সংগ্রহ করে বাজারে সরবরাহ করে থাকি।”
বিশ্ব ব্যাংক, কেয়ার ও সুইসকন্ট্যাক্ট এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য ১০ বছর কাজ করেছে আইফার্মারের সিইও ফাহাদ ইফাজ। অন্যদিকে, প্রতিষ্ঠানটির সিওও জামিল আকবর বিশ্বব্যাপী ক্লায়েন্টদের পরিষেবা প্রদানকারী বৃহৎ আকারের আইটি সংস্থাগুলোর জন্য প্রযুক্তি ও প্রকল্প পরিচালনায় কাজ করেছে। আইফার্মারে বর্তমানে ১২০ জন সদস্য রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ১৯টি জেলায় ৬৩,০০০ এরও বেশি কৃষক, ২৯০০+ কৃষি রিটেইলারদেরকে
সেবা প্রদান করছে।
আইডিএলসি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ১ এর পার্টনার মুস্তাফিজুর খান বলেন, “আইডিএলসি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড ১ এর লক্ষ্য হলো প্রতিশ্রুতিশীল নতুন ব্যবসায় অর্থায়ন করা, যা বাংলাদেশের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধান করছে। আইফার্মার প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি খাতের প্রকৃত সম্ভাবনা উন্মোচন করছে বলে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এটি সারা বাংলাদেশের কৃষকদের ক্ষমতায়নে উদ্ভাবন
ব্যবহার করছে। আমরা বিশ্বাস করি, তারা এ খাতের সাপ্লাই চেইনের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারবে।”
এ নিয়ে মিলভিল অপরচুনিটিস এর ম্যানেজিং পার্টনার আলেহান্দ্রো মন্টিলেগ্রে বলেন, “কৃষি সাপ্লাই চেইনে সক্ষমতা নিয়ে আসার মাধ্যমে কৃষকদের জীবনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধনের বিষয়ে আইফার্মার’র কার্যক্রম প্রমাণিত। আমরা আইফার্মারকে সমর্থন করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। কারণ, তারা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৃষি খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন
আনতে কাজ করছে।
স্টার্টআপটি বাংলাদেশের আরও জেলায় সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে; কৃষি উপকরণ সরবরাহের জন্য এর সাপ্লাই চেইন অবকাঠামোকেও সম্প্রসারিত করবে এবং সামগ্রিক খামার বিষয়ক পণ্যেরও যোগান বাড়াবে। এছাড়াও আইফার্মার মাটি বিশ্লেষণ, সার ও আবহাওয়া বিষয়ক পরামর্শ এর মতো কৃষি বীমা, ডেভেলপিং সেন্সর ও রিমোট সেন্সিং-ভিত্তিক পরিষেবাগুলো নিয়ে কাজ করছে।
Leave a Reply