প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব দৈহিক, মানসিক ও কৌশলগত শক্তি আছে। এগুলি কাজে বিনিয়োগ করার নাম শ্রম। শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জনকারী ব্যক্তি শ্রমিক। ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা ও গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। কেননা, শ্রমিকই হলো সকল উন্নয়ন ও উৎপাদনের চাবিকাঠি। শ্রমের দ্বারা মানুষ তার ভাগ্যের দ্বার উন্মোচন করতে সক্ষম হয়।এ প্রসঙ্গে কোরআনুল করিমে ইরশাদ হচ্ছে – “নিশ্চয়ই আমি মানুষকে শ্রম নির্ভর করে সৃষ্টি করেছি”। (সূরা বালাদ : ৩) কিন্তু ইসলাম বিবর্জিত বিভিন্ন সমাজে শ্রমের ভিন্নতাকে বিভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হয়। তাদের দৃষ্টিতে কোনো শ্রম অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ আবার কোনো শ্রম অত্যন্ত ঘৃনিত। সেখানে সম্পদের মানদন্ডের উপর ভিত্তি করে সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। যে যত বিত্তশালী সামাজিকভাবে সেই তত সম্মানী। পক্ষান্তরে দারিদ্র্য ব্যক্তি যদিও ন্যায়নীতির মানদন্ডে যতই স্বচ্ছ হউক না কেন তারাই সমাজের নিকৃষ্ট ও অবহেলিত ব্যক্তি। তাই দেখা যায় জীবিকা নির্বাহে যারা কায়িক শ্রম নির্ভরশীল, তারা আদি যুগের দাসদের চেয়েও হীন হয়ে পড়েছে। শ্রমজীবী মেহনতী মানুষের কাজের প্রতি গুরুত্বারোপ করে আল্লাহ তাআলা মানুষকে নামাযের পর বেরিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেন:
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থাৎ “অতঃপর নামায শেষ করে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো। আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো এবং বেশি পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করো, যাতে সফলকাম হতে পারো”।(সূরা জুমু‘আ,আয়াত : ১০) শ্রমিকদের যেন মানুষ ঘৃণা না করে বরং তাদের সম্মানের চোখে দেখে সে ব্যবস্থা ইসলাম করেছে। কারণ, ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো পেশাই ঘৃণিত নয়। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খেটে খাওয়া মানুষের মর্যাদা বর্ণনা করে ঘোষণা করেন: “শ্রমিক হলো আল্লাহর বন্ধু”। (কানযুল উম্মাল, ৪/ ১২৭) তিনি আরো বলেন:
مَا أَكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ أَنْ يَأْكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدَيْهِ،
অর্থাৎ “মানুষের নিকট তার চেয়ে কোনো উত্তম উপার্জন নেই, যা সে নিজের হাতে উপার্জন করে খায়। সে যা কিছু নিজের জন্য, পরিবার-পরিজনের জন্য ও ঘরের ভৃত্যদের জন্য খরচ করে তা সবই সদকা”।(সহীহ বুখারী, ১/১৯২) প্রখ্যাত সাহাবী হযরত সা‘দ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কামারের কাজ করতেন, হাতুড় দিয়ে কাজ করতে করতে তার হাত দু’টি বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল। একদিন রাসূলে করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে করমর্দন করার সময় হযরত সাদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন: হাতুড় দিয়ে কাজ করতে গিয়ে এ অবস্থা হয়েছে। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর হাত চুম্বন করে বললেন: “এ হাতকে কখনো আগুন স্পর্শ করবে না”। (সহীহ বুখারী, ১/৪) আজকের এ সমাজে ইসলাম শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে নির্দেশনামা প্রদান করেছে, যদি আমরা সেদিকে দৃষ্টি দেই তাহলে সত্যিকারই একজন শ্রমিক সমাজে যুগান্তকারী সফলতা লাভ করবে এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। নিম্নে শ্রমিকের অধিকার সম্পর্কে ইসলামে যে বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য করতে কথা বলা হয়েছে, তা সংক্ষেপে বর্ণনা করার প্রয়াস পেলাম।
ক. শ্রমিকের পেশা নির্ধারণের অধিকার: ইসলাম শ্রমিককে তার নিজস্ব চিন্তা-চেতনা অনুযায়ী পেশা নির্ধারণের অধিকার প্রদান করেছে। ইসলাম এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদার মনোভাব পোষণ করে। মূলত এটি ইসলামের মূল শিক্ষার একটি। ইসলামে কোনো শ্রেণী বৈষম্য নেই। ইসলাম সব ধরনের পেশাকেই সম্মানিত মনে করে। কারণ যত নিন্দনীয় কাজই হোক না কেন তা কিছু লোক না করলে কে করবে? যেমন, সুইপারের কাজ। সমাজের বা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শ্রমিকের ওপর কোনো কাজ চাপিয়ে দেয়া অনুচিত। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন: “তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করেছেন। অতএব, তোমরা তার ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণ করো এবং তার দেয়া রিযিক আহরণ করো”। (সূরা মুলক,আয়াত : ১৫)
খ. যথাযথ পারিশ্রমিক পাওয়ার অধিকার: ইসলাম শ্রমিকের পারিশ্রমিক যথাসময়ে পাওয়ার অধিকার প্রদান করেছে। শ্রমের জন্য পারিশ্রমিক প্রদান করা অনিবার্য বিষয়। তাই শ্রমিককে তার যোগ্যতা ও পরিশ্রম অনুযায়ী যথাযথ সম্মানী তথা পারিশ্রমিক প্রদান করা জরুরি। শ্রমিকের দায়িত্ব চুক্তি মোতাবেক মালিকের প্রদত্ত কাজ অত্যন্ত নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সাথে সম্পাদন করা। ইরশাদ হচ্ছে
إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِينُ
অর্থাৎ ‘শ্রমিক হিসাবে সেই ব্যক্তি ভাল, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত’।(সূরা ক্বাছাছ,আয়াত :২১৬) দায়িত্ব গ্রহণের পর কাজে অলসতা প্রদর্শন করলে তার মারাত্মক পরিণতি কি হবে তা বর্ণনা করতে গিয়ে কুলি-মজুর থেকে শুরু করে সর্বসাধারণের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা‘আলা বলেন
وَيْلٌ لِلْمُطَفِّفِينَ- الَّذِينَ إِذَا اكْتَالُوا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُونَ – وَإِذَا كَالُوهُمْ أَوْ وَزَنُوهُمْ يُخْسِرُونَ
অর্থাৎ ‘তাদের জন্য দুর্ভোগ, যারা ওযনে কম দেয়। ওযন নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে এবং দেওয়ার সময় কম করে দেয়’। (সূরা মুতাফফিফীন,আয়াত :১-৩) শ্রমিক তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করলে তার জন্য দ্বিগুণ পুণ্যের কথা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: ‘তিন শ্রেণীর লোককে দ্বিগুণ সওয়াব প্রদান করা হবে। তাদের মধ্যে এক শ্রেণি হলো যে নিজের মালিকের হক আদায় করে এবং আল্লাহর হকও আদায় করে’। (সহিহ বুখারী ; সহিহ মুসলিম; মিশকাত, হাদিস:১১) শ্রমিক শুধু দায়িত্ব পালন পূর্বক মালিকের মনোরঞ্জন করে চলবে আর তার কোন প্রাপ্যতা থাকবে না এটা হতে পারে না। সে যেমন নিজের দেহের রক্ত পানি করে মালিকের কাজের যোগান দিবে, অনুরুপভাবে তার মালিকের নিকট অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এ অধিকারের ব্যাপারে ইসলামের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা হলো, ‘কোন ক্ষতি করো না, ক্ষতিগ্রস্থ হবে না’।( সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস:১৮৯৬) অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে –
وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُولا
অর্থাৎ, তোমরা প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করো। নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।” (সূরা বনী ইসরাঈল,আয়াত: ৩৪) অনেক সময় শ্রমিকদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মালিকগণ উপযুক্ত মজুরী প্রদান না করে ইচ্ছামত মজুরী দেন এবং শ্রমিকদের প্রবি ত করেন ও ঠকান। শ্রমিকগণ নীরবে তা সহ্য করে থাকে। এ ধরনের কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘ক্বিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হবে। তার মধ্যে একজন হলো যে শ্রমিকের নিকট থেকে পূর্ণ শ্রম গ্রহণ করে, অথচ তার পূর্ণ মজুরী প্রদান করে না’। (সহিহ বুখারী; মিশকাত, হাদিস:২৯৮৪) কোন কোন মালিক কৃত্রিম ঘাটতি সৃষ্টি করে শ্রমিকের পারিশ্রমিক কমিয়ে দেয়ার অপপ্রয়াস চালায়। এটি একেবারে অমানবিক কাজ। শ্রমিককে নির্দিষ্ট মজুরীর বিনিময়ে নিয়োগ করার পর, উৎপাদন ঘাটতি হলেও তাদের মতামত ব্যতীত সামান্যতম পারিশ্রমিক কম করা যাবে না। ঘাটতির লোকসান মালিককেই বহন করতে হবে। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরও বলেন, “কিয়ামতের দিন তিন ধরনের ব্যক্তি আমার দুশমন হবে। আর আমি যার দুশমন হবো তাকে আমি লাঞ্ছিত ও পর্যুদস্ত করে ছাড়বো। উক্ত তিনজনের মধ্যে একজন হলো ঐ ব্যক্তি যে কোনো শ্রমিককে খাটিয়ে নিজের পুরোপুরি কাজ আদায় করে নেয়। কিন্তু তার ন্যায্য মজুরি প্রদান করে না”। (সহীহ বুখারী)
গ. শ্রমিকদের কাজের সময় নির্ধারণ: পুঁজিবাদী দেশগুলিতে মালিক যতক্ষণ ইচ্ছা কাজ করে নিত। এতে শ্রমিকদের অত্যাচারের সীমা থাকত না। এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে নির্যাতিত শ্রমিকগণ ১৯৮০ সালের মে মাসে শিকাগো শহরে আট ঘণ্টা কাজ করার দাবীতে ধর্মঘটের ডাক দেয়। শেষ পর্যন্ত দাবীর মুখে তা গৃহীত হয়। তবে এ নির্ধারণটাও যুক্তিসংগত নয়। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হল- শ্রমিকের নিকট হতে ততক্ষণ কাজ করে নেয়া যাবে, যতক্ষণ সে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে সক্ষম। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:
لاَيُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا
অর্থাৎ ‘কাউকে আল্লাহ তার সাধ্যের অধিক কাজের দায়িত্ব দেন না’। (সূরা বাক্বারা,আয়াত :২৮৬)
ঘ. কাজের ধরণ নির্ধারণ: কাজ করে নেয়ার আগে শ্রমিককে তার কাজের ধরন সম্পর্কে অবগত করতে হবে। তাকে এক কাজে নিয়োগ করে তার অনুমতি ছাড়া অন্য কাজে লাগানো উচিত নয়। এমনকি তার সম্মতি ব্যতীত যেকোন কাজে নিয়োগ দান সমীচীন নয়। শ্রমিক দিয়ে এমন ধরনের কাজ করানো আদৌ সঙ্গত হবে না, যা তার জন্য অতি কষ্টকর বা সাধ্যাতীত। সর্বদা মনে রাখতে হবে শ্রমিক মালিকের হাতের ক্রীড়নক নয়, বরং সে তারই সমমর্যাদার অধিকারী স্বাধীন এক সত্তা। (ইসলামে শ্রমিকের অধিকার, পৃঃ ১১৪)
ঙ. শ্রমিকের পেশা পরিবর্তন বা কর্মস্থল পরিবর্তনে অধিকার: এক্ষেত্রে কারও হস্তক্ষেপ মানে তার স্বাধীন সত্তায় বাধা দানের শামিল। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষের ব্যক্তিত্বকে এমনভাবে ক্ষুন্ন করা হয়েছে যে, শ্রমিককে তার এই মানবিক স্বাধীনতা হতে বি ত করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় শ্রমিক ইচ্ছামত কাজ নির্বাচন করে নিতে বা এক স্থান হতে অন্য স্থানে গমন করতে পারে না। ১৯৪০ সালের ২৬ জুন তারিখে স্টালিনের আমলে শ্রমিকদের স্থানান্তরের অধিকার হতে বি ত করা হয়।(ইসলামে শ্রমিকের অধিকার, পৃঃ ১১৫)
চ. লভ্যাংশের ভিত্তিতে অংশীদারিত্ব লাভ করা: বর্তমান সমাজে শ্রমিকশ্রেণি উৎপাদনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও মুনাফা লুটে নেয় মালিক শ্রেণী। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই অমানবিক ব্যবস্থার মূলে কুঠারাগাত হেনে ঘোষণা করেন, ‘শ্রমিকদেরকে তাদের শ্রমার্জিত সম্পদ হতেও অংশ দিও। কারণ, আল্লাহর মজুরকে বি ত করা যায় না’।(ইসলামে শ্রমিকের অধিকার, পৃঃ ১১৬)
ছ. শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও বাসস্থানের অধিকার: সমাজের সদস্য হিসাবে অন্যসব মানুষের ন্যায় শ্রমিকেরও মৌলিক অধিকার রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ক্ষেত্রে। এ অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা মালিকদের একান্ত কর্তব্য। শ্রমিকের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটবে এমন ধরনের কাজ তাদের নিকট হতে গ্রহণ করা অনুচিত। এ সম্পর্কে প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ইবনে হাযম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ‘মালিকের জন্য উচিৎ শ্রমিকের নিকট থেকে ততটুকু কাজ নেওয়া, যতটুকু সে সামর্থ্য অনুযায়ী অনায়াসে সুষ্ঠুভাবে করতে পারে। এমন কোন কাজ করতে তাকে বাধ্য করা যাবে না, যার ফলে তার স্বাস্থ্যহানি ঘটে অথবা তার ক্ষতি হয়। শ্রমিকদেরকে সুদক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা মালিক পক্ষের কর্তব্য। অনুরূপভাবে সমাজের অন্যান্য লোকের সন্তানের ন্যায় তাদের সন্তানরাও যেন উপযুক্ত শিক্ষা লাভ করে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে সে সুযোগ করে দেওয়াও কর্তব্য। তারা যেন নিদ্রা ও বিশ্রামসহ সুস্থ থেকে মনযোগের সঙ্গে কাজ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করার দায়িত্ব মালিকের উপর বর্তায়। মালিকের পক্ষ থেকে এটি এক ধরনের অনুগ্রহ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি তাদের প্রাপ্য অধিকার। মালিকগণ শ্রমিকদের যে অর্থ প্রদান করে থাকে, এতে যদি তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ না হয়, তবে সে স্বীয় প্রয়োজন পূরণার্থে মালিকের নিকট দাবী-দাওয়া পেশ করার অধিকার রাখে। তাদের যথোপযুক্ত দাবী পূরণের কথা উল্লেখ করে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন:‘শ্রমিকদেরকে যথারীতি খাদ্য ও পোষাক দিতে হবে’।( সহিহ মুসলিম, মিশকাত ,হাদিস:৩৩৪৪)
কোন অসহায় শ্রমিক দেনা রেখে মৃত্যুবরণ করলে তার বিধান : কোন শ্রমিক যদি মৃত্যুবরণ করে এবং তার যদি দায়-দেনা থাকে যা পরিশোধ করার মত কোন ব্যক্তি নেই সেক্ষেত্রে ইসলাম বলছে ইসলামী সরকার বা ইসলামী সমাজ তার সেই দেনা পরিশোধ করবে। রাসূলে আরবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদীনায় ইসলামী প্রজাতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার পর ইরশাদ করেন ,
أَنَا أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ فَمَنْ تُوُفِّيَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فَتَرَكَ دَيْنًا فَعَلَيَّ قَضَاؤُهُ ، وَمَنْ تَرَكَ مَالاً فَلِوَرَثَتِهِ
অর্থাৎ “আমি মুমিনের অভিভাবক। তাদের মধ্যে হতে কেউ মৃত্যুবরণ করলে এবং তার উপর কর্য (দেনা) থাকলে আর তা পরিশোধের যদি কোন ব্যবস্থা না থাকে তবে তা পরিশোধের দায়-দায়িত্ব আমার উপর। আর যদি সে সম্পদ রেখে যায়, তবে তার অংশীদারগণ এ সম্পদের অধিকারী হবে।” (সহীহ বুখারী ; সহিহ মুসলিম)
পরিশেষে… ইসলামই শ্রমিকের প্রকৃত অধিকার দিয়েছে, সমাজের অসহায়, দরিদ্র, অনাথ ও ছিন্নমূল মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তাই সমাজের সকল স্তরে যদি শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হয়, তাহলে ইসলামী আদর্শের বাস্তবায়নের বিকল্প নেই ।
লেখক: আরবি প্রভাষক, রাণীরহাট আল-আমিন হামেদিয়া ফাযিল মাদরাসা; এম ফিল গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ; খতিব, রাজানগর রাণীরহাট ডিগ্রি কলেজ জামে মসজিদ।
Leave a Reply