ক্ষুদ্র পাদুকাশিল্পে মধ্যস্বত্তভোগীদের দাপট

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে রয়েছে পাদুকা তৈরির ছোট ছোট কারখানা। এখানকার উৎপাদিত পণ্য সারাদেশে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সরবারহ ব্যবস্থার অভাবে উৎপাদক তাদের পণ্য ন্যায্যদামে বিক্রি করতে পারছেনা। তারা মধ্যস্বত্তভোগীদের কাছে অতি অল্পদামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে উৎপাদক এবং সাধারণ ভোক্তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তেমনি সম্ভাবনাময় এই শিল্পটির বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। পাশাপাশি যেনতেনভাবে গড়ে ওঠা এই শিল্প মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলভে। এসব তথ্য জানা গেছে ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের (ডিএসসিই) এক ত্বড়িৎ জরিপ গবেষণায়।

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে প্রায় ৮ হাজার কারখানা। গত শনিবার ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের উদ্যোক্তা অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভৈরবের কমলপুরে বিভিন্ন পাদুকা কারখানা পরিদর্শন করেন। জুতা ও সান্ডেলের প্রতিটি উপকরণ ও পূর্ণাঙ্গ জুতা তৈরির পৃথক কারখানা রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরিকল্পিতভাবে এই ছোট ছোট কারখানাগুলো গড়ে উঠেছে। তাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব রয়েছে। যার ফলে নারী শ্রমিকের এখনও স্বল্প পারিশ্রমিকের বিনিময়ে হাতে কাজ করছেন। এতে গুণগতমানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে না। আবার যেসব পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে উৎপাদকরা স্থানীয় মধ্যস্বত্তভোগীদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ভৈরবে কারখানার মালিকরা প্রতি ডজন (১২ জোড়া) জুতা বিক্রি করছেন ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকায়। অথচ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে ওই জুতা বিক্রি হচ্ছে প্রতি জোড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। পণ্যমূল্যের বেশিরভাগ অংশই ঢুকছে মধ্যস্বত্তভোগীদের পকেটে।

জরিপে আরও বলা হয়েছে, কারখানার উদ্যোক্তার কর্মী স্বাস্থ্য, পরিবেশ বিষয়ে সচেতন নয়। চামড়া, প্লাস্টিক ও ফোমের আর্বজনার মধ্যে কোন প্রকার প্রতিরোধক ছাড়াই কাজ করছেন শ্রমিকরা। আর এসব কারখানা বর্জ্যও ফেলে রাখা হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। এতে মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

জরিপের বিষয়ে উদ্যোক্তা অর্থনীতি বিভাগের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, খুবই অপরিকল্পিতভাবে পাদুকাশিল্প গড়ে উঠেছে। দীর্ঘদিনের এ শিল্প এখনও অতিক্ষুদ্র পর্যায়ে রয়েছে। এখানকার উদ্যোক্তাদের কারগরি জ্ঞান ও সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই। এতে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুবিধা পাচ্ছেন। সরকারের উচিত এই ক্লাস্টারভিত্তিক শিল্পকে পরিকল্পনামাফিক গড়ে তোলা। এতে স্থানীয় পর্যায়ের শিল্পের বিকাশ হবে, মানুষের কর্মসংস্থান হবে, দারিদ্র দূরীকরণ সহজ হবে।

ভৈরব অঞ্চলের পাদুকা শিল্পের উদ্যোক্তা ও কর্মীদের উন্নয়নে ২০১৭ সালে উদ্যোগ নেয় পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি) প্রকল্পের আওতায় উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন এবং আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন করা হচ্ছে। কারখানাগুলোতে প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রপাতি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। জুতার ডিজাইন তৈরি থেকে শুরু করে জুতা উৎপাদনের প্রতিটি পর্যায় এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও রিসাইক্লেংয়ে যন্ত্রের ব্যবহার সফটওয়ার এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার শেখানো হচ্ছে।

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনতে উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা দিচ্ছে পপি প্রকল্প। ৮টি সার্ভিস সেন্টার ও ১২টি প্রদর্শনী কারখানার মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে পপি। নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের দেওয়ার পর অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। অন্তত ১০ জন নারী উদ্যোক্তাকে অর্থায়ন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব কারখানার উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ চলমান রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *