২০১৭ সালের শুরুতে শিক্ষার্থীরা নতুন বই পাওয়ার সময় থেকে কিছু মিডিয়া, কিছু মুছুয়া, কিছু অধর্ম বিশ্বাসীরা দেশ দেশ গেল গেল বলে হাওমাও করতে দেখেছি। তারা ছোটদের পাঠ্যবইয়ে ও তে ওড়না শব্দের জন্য আপত্তি তুলেছে। এতে নাকি নারী শিশুরা সাম্প্রদায়িক হয়ে যাবে। আর হেফাজতে ইসলাম ও আওয়ামী সরকার দুইয়ের মধ্যে আঁতাতের ধ্বনি শুনেছে। হ্যাঁ এইতো কদিন আগে শেখ হাসিনা শাপলা বিপ্লবের নায়কের সাথে সম্মেলন করেছেন এবং কওমী সনদের স্নাতকোত্তর দাবী পূরণ করেছেন। পাশাপাশি রাজধানীতে মহামান্য আদালতের সামনে গ্রীকদেবীর বাংলার শাড়ী পড়ে পাল্লা ধরার মূর্তিটি যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাল লাগেনি তা শাপলা বিপ্লবের নায়ককে জানিয়েছেন।
সব মিলিয়ে অধার্মিকদের খুব সন্দেহ যে ভোটের জন্য ধর্মানুরাগীদের সাথে আওয়ামীদের বন্ধন হচ্ছে।
এবার মূল কথায় আসি। প্রায় ১৪’শ বছর আগে অন্ধকার দূর করে ইসলামের শান্তির বাণী মুখরিত হয়। মানুষ নতুন সভ্যতাকে লালন করে শুরু করে। যার ঢেউ ভারত উপমহাদেশে পড়ে।
দ্বীনের দাওয়াত, ব্যবসা বাণিজ্য এক সময় ভারত উপমহাদেশ মুসলমানদের বিচরণ ভূমি হয়ে উঠে। সালতানাত, মোঘল প্রভৃতি সাম্রাজ্য ও শাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসতে থাকে। ক্ষমতা লিপ্সু ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে মুসলমান বাহিনীকে বা বাংলার নবাব সিরাজ উদ্দৌলাকে পরাজিত করে ব্যবসার পরিবর্তে শাসন শুরু করে। ক্ষমতা হারা ভারতীয় মুসলমানরা ক্ষমতার মসনদ হারিয়ে দিশে হারা হয়ে যায়। ধর্মীয় আবরণে বিভিন্ন প্রান্তে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন চলতে থাকে।
আমরা তিতুমীর, হাজী শরিয়ত উল্লাহ সম্পর্কে ভালই জানি। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ নিছক ধর্মীয় কারণে সংগঠিত হয়।
একথা না বললে অপূর্ণ থেকে যাবে যে, ব্রিটিশদের নিকট ক্ষমতা ছেড়ে মুসলমানরা তাদেরকে ঘৃণা করত। ফলে সরকারী কার্যক্রমে হিন্দুরা প্রাধান্য লাভ করে।
ধীরে ধীরে হিন্দু-মুসলিম দুটি পৃথক প্লাটফর্ম দাঁড়িয়ে যায়। ব্রিটিশরাও ”ভাগ কর, শাসন কর” এই নীতি অবলম্বন করে শাসন ক্ষমতা দীর্ঘায়ু করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে।
১৮৮৫ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং ১৯০৬ সালে মুসলিম নেতাদের মতামতে মুসলিমলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯১১ সালে যখন বঙ্গভঙ্গ রদ বা বাতিল হয়ে যায়, তখন স্পষ্ট হয়ে উঠে যে মুসলমানদের ভাগ্য নির্ধারণে নিজেদেরকেই কার্যকরী আন্দোলন করতে হবে। মুসলিমলীগ ভারত উপমহাদেশের মুসলমানদের প্রাণের সংগঠন হয়ে উঠে।
১৯২৮ সালের নেহেরু রিপোর্টও স্পষ্ট হয়ে উঠে বিষয়টি। ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন পাশ হয়। ১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলমানরা তেমন আসন পাননি। ফলে মুসলমানরা চরম হতাশ হয়ে পরেন। ত্রিশের দশকের বাগ্মী ও জনপ্রিয় নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির দাবী তুলেন। ১৯৪০ সালে লাহোর সম্মেলনে শেরে বাংলা এ কে এম ফজলুল হক দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির স্বপ্ন রেখাপাত করেন। অতঃপর ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু ও মুসলমানদের দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ভারত ও পাকিস্তান।
তারপর ইতিহাস খুব সোজা পথে চলতে শুরু করে। ১৯৫২ ‘র ভাষা আন্দোলনে চিত্র ভিন্নপথে মোড় নেয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুশ জয়, ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নিরীহ বাঙালীর উপর পাকিস্তানি ক্ষমতা লিপ্সু শাসক শ্রেণী আক্রমণ করে। অতঃপর ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম এবং বাংলাদেশের জন্ম হয়।
এই আলোচনায় মূলত আমার বলার ইচ্ছা হলো ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব না হলে ভারতীয়রা মুসলমান হতোনা। মুসলমান হয়েছিল বলেই তাদের পৃথক জাতিস্বত্ত্বার সৃষ্টি হয় এবং ১৯৪০ সালে পৃথক আবাসভূমি বা রাষ্ট্রের দাবী উঠে। এক সময় সেই পৃথক রাষ্ট্রের একটি অংশ নিয়ে আজকের বাংলাদেশ। অতএব সাম্প্রদায়িক চেতনা বলেই আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি।
গত ২১ এপ্রিল ২০১৭ সালে এমনই ছিল আমার অনুভুতি, স্বাধীন বাংলাদেশের পিছনে কিভাবে ইসলামের ইতিহাসের সাথে ভূমিকা রয়েছে।
Leave a Reply