ঢাবি “খ” ইউনিটে ভর্তির স্বপ্ন পূরণ হয় না যেসব ভুলের কারণে!

ঢাবি তে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার মূল কারণই হলো সচেতনতা এবং স্বচ্ছ ধারণার অভাবহেতু কোচিং এর ফাঁদে পড়ে সময় নষ্ট করা এবং সেইসঙ্গে স্মার্টলি পড়াশুনা করতে না পারা। আর কিছু ছোটো কারণও আছে। সব মিলিয়ে বেশ কিছু কারণ আছে। কারণসমূহ নিম্নরূপ:

১. নিজে ভালো ছাত্র বলে অতিরিক্ত আশাবাদী হওয়া: আমি তো ভালো ছাত্র, আমার চান্স তো হবেই। এই ভেবে পড়াশুনায় সিরিয়াস না হওয়া। তারা এটা বুঝতে পারে না যে ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার মতো নয় যে এখানে অল্প পড়ার মধ্যে থেকে প্রশ্ন কমন আসবে।

২. আগের মতো আরাম আয়েশে দিন কাটানো। কিন্তু ভার্সিটি ভর্তি প্রস্তুতির জন্য দৈনিক ০৮-১০ ঘন্টা পড়াশুনা করতে হবে এবং স্মার্টলি।

৩. স্মার্টলি পড়াশুনা না করা, দৈনিক ০৮ ঘন্টা স্মার্টলি পড়াশুনা করলেই চান্স হবে আর হাদারামের মতো করে দিনে ১৬ ঘন্টা পড়াশুনা করলেও চান্স পাওয়া সম্ভব না। এজন্যই আমি আমার প্রাইভেটের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রথম এক সপ্তাহ ধরে শেখাই কীভাবে স্মার্টলি পড়াশুনা করতে হয়।

৪. কোচিং এর ফাঁদে পড়া: নামী দামী কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া, এবং এরূপ ধারণা করা যে আমি তো নামকরা কোচিংয়ে পড়ছি, মনেহয় এরা যা শেখাচ্ছে এই যথেষ্ট। কিন্তু আমি গবেষণা করে দেখেছি এদের ৪০-৪৮ টি শিট আর ইয়া মোটা গাইড বই হতে ঢাবি “খ” ইউনিটে ৩৫-৪০% এর বেশি প্রশ্ন কমন আসে না।

৫. আর একদল পাগল আছে যারা ঢাকায় আসে কোচিং করার জন্য। ঢাকায় কোনো কিছুই অন্য স্থানের চেয়ে বেশি ভালো পড়ানো হয় না; তারা বেশি ফি নেয় কারণ ঢাকায় বিল্ডিং এর ভাড়া ও টিচার খরচ বেশি এই জন্য। ঢাকায় সাধারণ ছাত্রদের জন্য কোনো ভালো কিছু নেই; সায়েন্সের উদ্ভাস ও রেটিনা ছাড়া অন্যসব কোচিং সেন্টারগুলো দুইটি কাজ করে— টাকার বিনিময়ে ভালো ছাত্রদের পরিচয় কিনে নেয় এবং তারা নটরডেম ও অন্যান্য কলেজের কিছু ভালো ছাত্রদের নিয়ে কয়েকটি স্পেশাল ব্যাচ বানিয়ে তাদেরকে আলাদাভাবে অনেক সময় নিয়ে পড়ায় আর এরা ০১ থেকে ৫০০ এর মধ্যে সিরিয়ালে থেকে চান্স পেলে তাদের ছবি বিজ্ঞাপনে দেয়। এভাবে দেশজুড়ে ছাত্রদের মন ভুলিয়ে ভর্তি নেয় কিন্তু ভালো পড়ায় না।
আর এই ছাত্রদের ঢাকার পরিবেশে সেটআপ হতেই একমাস এর মতো সময় ব্যয় হয়ে যায়।

৬. ভালো বই না পড়ে শিট এর বিগত প্রশ্ন মুখস্থ করতে বেশি সময় দেওয়া। বিগত প্রশ্ন দেখে ধারণা নিতে হবে যে কেমন প্রশ্ন হয় কিন্তু এই বিষয়টা ঠিকমতো না বুঝে সময় নষ্ট করে লাভ নেই এটা বুঝতে হবে, কারণ এটা বোর্ডের পরীক্ষা নয় যে একই প্রশ্ন বারবার কমন আসবে।

৭. কৃষক না হয়ে ফসল ফলাতে চাওয়া: বেশিরভাগ ছাত্রই আছে যারা নিয়ম কানুন ও কৌশল না শিখে বিগত প্রশ্নের উত্তর কীভাবে হলো তা শিখতে চায়, কিন্তু এটা শিখে সর্বোচ্চ ওই প্রশ্নটির উত্তর করা সম্ভব। কিন্তু নিয়ম কনুন ও কৌশলগুলো শিখলে সব প্রশ্নেরই উত্তর দেওয়া সম্ভব। কিন্তু সেটা করার মতো ধৌর্য এই ছাত্রগুলোর থাকে না।

৮. পেপার না পড়া: একদল ছাত্রের ধারণা পেপার এর কী দরকার, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়লেই তো হয়। কিন্তু এমন ৬০% ছুটখাট তথ্য আছে যেগুলো আমরা জানতাম না কিন্তু সাম্প্রতিক কোনো কারণে পেপারে এসেছে এবং স্মার্ট ছাত্র হিসেবে তা জানা দরকার, আর এসব তথ্য এমন কোনো বিশেষ সাম্প্রতিক ইস্যু নয় যে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এ তা আসবে, আর এসব পেপারে খুঁজতে গেলে একজন অনভিজ্ঞ ছাত্র তা অন্য দশটা অপ্রয়োজনীয় তথ্যের সঙ্গে একাকার করে ফেলবে। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ভাইয়াদের সাহায্য প্রতিদিন নিতে হয় যা খুবই অসুবিধাজনক। পরীক্ষার্থীদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে আমি ‘নিউজপেপার ডাইজেস্ট’ সম্পাদনা করে আসছি।

৯. পেপার পড়তে ধরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ধরতে না পেরে সময় নষ্ট করে অহেতুক জিনিস পড়া।

১০. সহজ প্রশ্নের উত্তর ভুল করা: পরীক্ষায় সহজ প্রশ্নের উত্তর ভুল করা মানে প্রতিযোগিতা থেকে ছিঁটকে পড়া। একজন ছাত্র হয়তো খুব কঠিন একটা প্রশ্নের উত্তর করলো যেটা বেশিরভাগ ছাত্রই ভুল করেছে কিংবা পারেনি বলে উত্তর দেয় নি। কিন্তু সহজ একটি প্রশ্নের উত্তর ভুল করাতে সে মাইনাস মার্ক পেয়ে অনেকের পিছে পড়ে গেল।
এজন্যই আমি এ বিষয়ে ৪-৬টি ক্লাসে এটার কৌশলই শেখাই যেন কিছুতেই সহজ প্রশ্নের উত্তর ভুল না হয়।

আমি ফ্রি ক্লাস দেই এজন্য যে আমার স্বভাব হলো মানুষের উপকার করতে আমার ভালো লাগে; কিন্তু মানুষ এটাতে সায় দেয় না। কারণ, বাঙালির স্বভাব হলো ভালো জিনিস ফ্রি দিলে নিবে না কিন্তু মন্দ জিনিস সস্তায় দিলে তা নেওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়বে..।

© মোঃ মেহেদী হাসান
এমসিএএস গবেষক,
প্রতিষ্ঠাতা,
DU Kha Unit Admission Preparation Program (DUKUAPP)





About Mahadi Hasan Shuvo 3 Articles
লেখক, গবেষক, সম্পাদক, উপস্থাপক, অভিনেতা, পরিচালক, প্রকল্পদোক্তা ও ডিজাইনার

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*