অভাগী মায়ের জেদি সন্তান(লেখক আমিরুল ইসলাম)

 

কলেজ থেকে বাসায় ফিরে কাধ থেকে রাগান্বিত ভাবে ব্যাগটি খাটের উপর ফেলে দিলো সার্থক। এটা দেখে সার্থকের মা জিজ্ঞেস করলো
মা – কিরে সার্থক কি হয়ছে এভাবে রেগে বাসায় ফিরলি কেন?
সার্থক – তোমাকে বলতে হবে আমি রাগলাম কেনো। তোমার জীবনে আমার কোনো গুরুত্ব আছে? কেন জন্ম দিছিলে আমাকে মেরে ফেললে না কেনো?
মা – আচ্ছা বাবা কি হয়ছে বলবি তো শুধু শুধু রাগ করছিস আমার উপর। কি হয়ছে বল আমারে?
সার্থক – কি আবার হবে তোমারে কত বার বলছি আমার একটা বাইক লাগবে। কিনা দিবা কিনা দিবা বলতে বলতে এখনো কিনা দিলা না। মনে হয় আর জীবনেও কিনা দিবা না।
মা – তোরে তো বলছি কিছু দিন পর কিনে দিবো আমার কাছে এখন এতো টাকা নাই। কিছু দিন যাক তারপর বাইক কিনে দিচ্ছি।
সার্থক – আমি এত দিন ওয়েট করতে পারবো না।
মা – এত জেদ করিস কেনো। আমি একা হয়ে কত দিক সামলাবো। তোর বাবা বেঁচে থাকলে তিনিই কিনে দিতো আমি মহিলা মানুষ হয়ে এত টাকা পাবো কোথায়?
সার্থক – আমি জানি না তুমি টাকা পাবা কই। কিন্তু আমার এক সপ্তাহের মধ্য বাইক চাই তা না হলে আমি আর এই বাড়িতে থাকবো না।
এই বলে সার্থক বাসা থেকে বের হয়ে গেল
মা – বাবা জাস না। আমি বলছি তো তোর বাইক কিনে দিবো। এই পাগল ছেলেকে আমি কি করে বুঝায় এত টাকা এখন আমি পাই কোথাই?
রাতে যখন সার্থক বাসায় ফিরে……
তুলি – ভাইয়া তুমি আয়ছো দেখো আম্মু তোমার জন্য না খেয়ে বসে আছে। বিকালে তুমি না খেয়ে চলে গেছো তোখনো আম্মু খায় নাই আর এখনো তোমার অপেক্ষায় না খেয়ে বসে আছে।
সার্থক – আমি কাউকে আমার জন্য কষ্ট করে না খেয়ে বসে থাকতে বলি নাই। আর আমি এখন খাবো না। আর যত দিন না আমাকে বাইক কিনে দিবে তোতো দিন আমি এই বাসার পানিও পান করবো না।
এই বলে সার্থক নিজের ঘরে চলে গেলো। আর মায়ের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে থাকলো
রাত পেড়িয়ে সকাল হয়ে গেলো….
কলেজের ক্যাম্পাসে সার্থক আর অভ্র হাটছে
সার্থক – আচ্ছা অভ্র ভাল বাইক কোনটা হবে? ভাবছি তোর মতো একটা কিনবো।
অভ্র – বাইক তো সবই ভাল কিন্তু ভাল বাইক কিনতে হলে টাকার দরকার তুই এতো টাকা পাবি কোথায়?
সার্থক – আরে টাকার চিন্তা করিস না আম্মু বলছে কিনে দিবে। আমি এক সপ্তাহের সময় দিছি না দিলে আমি বলছি এই বাড়িতে আর থাকবো না।
অভ্র – তোর মা তো সামান্য বেতনে চাকরি করে। এতো টাকা তোর আম্মু পাবে কোথায়?
সার্থক – তোরে না বললাম টাকার চিন্তা করিস না। আম্মু বলছে তো মেনেস করে দিবে। চল আজকে গিয়ে বাইক দেখে আসি।
অভ্র – সার্থক শোন তোর মা তোর জন্য অনেক কষ্ট করে। তুই এমন কিছু করিস না যাতে করে তোর মাকে অন্য পথ বেছে নিতে হয়।
সার্থক – অন্য পথ মানে? বুঝলাম না তোর কথা।
অভ্র – না কিছু না চল তুই বাইক দেখবি না।
এই বলে সার্থক আর অভ্র বাইক দেখতে চলে গেলো
বাইক দেখে সার্থক আর অভ্র রাস্তা দিয়ে হাটছে আর কথা বলছে…. এমন সময়
অভ্র – কিরে সার্থক ওইটা তোর আম্মু না?
সার্থক – কই? আমার আম্মুরে আবার কই পাইলি?
অভ্র – ওই যে হাসপাতাল থেকে বের হচ্ছে।
সার্থক – হুম দেখতে পারছি কিন্তু আম্মু হাসপাতালে কি করতে আয়ছিলো?
অভ্র – আচ্ছা সার্থক আন্টির কি শরির খারাপ?
সার্থক – কি জানি আমারে তো কিছু বলে নাই।
অভ্র – তুই তোর মায়ের সাথে যেমন ব্যবহার করিস দেখবি তোর আগেই আন্টি মারা যাবে।
সার্থক – ওই বেটা আজে বাজে কথা বাদ দিবি যা বাসায় যা। আমি বাসায় গিয়ে দেখি আম্মুর কি হয়ছে।
এই বলে সার্থক বাসার দিকে রওনা দেয়…
মা – বাবা তুই আসছিস আয় খেতে বস।
সার্থক – আচ্ছা আম্মু তোমার কি শরির খারাপ?
মা – কেনো শরির খারাপ হতে যাবে কেন?
সার্থক – তাহলে তুমি হাসপাতালে কি করতে গেছিলা?
মা – তেমন কিছু না কয়দিন ধরে মাথাটা খুব ব্যাথা করছিল তাই দেখাতে গেছিলাম। বাদ দে আয় খেতে বস।
সার্থক – তোমারে আমি বলছিনা আমার বাইক না কিনে দিলে আমি এই বাসার কিছুই খাবো না।
মা – আচ্ছা তোর বাইকের টাকা তুই কাল কেই পেয়ে যাবি এখন তো খেতে বস
সার্তক – সত্যি ঠিক আছে আমি খেতে বসছি কিন্তু কাল কে টাকা না পেলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো বলে দিলাম।
পরদিন সকালে …..
মা – সার্থক এই নে তোর বাইক কেনার টাকা।
সার্থক – তুমি এতো টাকা পেলে কোথায়?
মা – তোর তো এতো কিছু জানা লাগবে না। তুই টাকা পাইছিস এখন বাইক কিনে নিয়াই। আর আসার সময় তোর বাবার কবরটা দেখে আসিস।
সার্থক – হঠাৎ করে তুমি বাবার কবর দেখার কথা বলতাছো কেনো?
মা – না এমনি বললাম দেখিস তো তোর বাবার কবরের পাশে খালি জায়গা আছে কিনা?
সার্থক – কেনো তুমি খালি জায়গা দিয়ে কি করবা?
মা – তোরে এর আগে বলছিলাম না আমি মারা গেলে তোর বাবার কবরের পাশে আমারে কবর দিস।
সার্থক – এই আজে বাজে কথা বাদ দিবা? আমি গেলাম বাইক আনতে।
এই বলে সার্থক বাইক আনতে চলে গেলো…..
বাইকে চরে সার্থক আর অভ্র সারাদিন মজা করার পর সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে। বাসায় ফিরে দেখে বাসার সামনে অনেক মানুষের ভিড়।
সার্থক আর অভ্র বাসায় ঢুকে দেখে মা সুয়ে আছে আর তার পাশে বসে বসে কান্না করছে তুলি।
সার্থক – কি হয়ছে তুলি আম্মু এভাবে সুয়ে আছে কেনো? আর তুই এভাবে কান্না করছিস কেনো?
তুলি – দৌড়ে এসে সার্থকে জড়িয়ে ধরে।
সার্থক – আরে তুই কান্না করস কেন কি হয়ছে বলবি তো আর আম্মু এই ভাবে সুয়ে আছে কেনো। আর বাসায় এতো মানুষ কেনো?
তুলি কোনো কথা না বলে কান্না করতে থাকে..
সার্থক – কাকু তুলি কান্না করছে কেনো আর আম্মু সুয়ে আছে কেনো?
কাকা – তোর আম্মু আর নেই রে তোদের ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে।
সার্থক – না এটা কিছুতেই হতে পারে না। আম্মু আমাদের ছেড়ে কোথাও যাইতে পারে না। তুমি ভুল বলছো কাকা তুমি মিথ্যা কথা বলছো।
কাকা – এই দেখ দুই দিন আগে তোর মা তার দুইটা কিডনি বিক্রি করে দিছে। আর কিডনি না থাকার কারনে তোর মা মারা গেছে। তুই আজকে এমন জিনিস হারালি যা আর কখনো ফিরে পাবি না। তোর সব থেকে বড় সম্বল আজ তোর থেকে দূরে চলে গেলো।
সার্থক – এটা তুমি কি করলে আম্মু। আমাদের ছেড়ে কেনো দূরে চলে গেলে। তোমাকে ছেড়ে আমরা থাকবো কেমন করে।
অভ্র – সার্থক তোরে আমি আগেই বলছিলাম তোর আশা পূরণের জন্য এমন কিছু কাজ করিস না যাতে করে তোর থেকে তোর বড় সম্পদ হারিয়ে যায়। ঠিক আজকে তোর জীবনে একই ঘটনা ঘটলো। তুই আজ থেকে বুঝতে পারবি মা না থাকার কষ্টটা কেমন।
সবাই লাশের সৎ কাজ করে গোরস্থানে কবর দিয়ে আসে সার্থকের মাকে। এখন প্রতিদিন সার্থক তার মায়ের কবরের কাছে গিয়ে কান্না করে আর বলে তুমি ফিরে আসো মা তুমি ফিয়ে আসো। আমি আর কখনো তোমার কথার অবাধ্য হব না। কখনো আমার জেদ নিয়ে তোমার সামনে দাড়াবো না। তোমার সকল কথা মেনে চলবো। ফিরে আসো তুমি একটি বার ফিরে
আসো। বলতে বলতে কান্না করে সার্থক।
|
আসলে মা জীবনে কতটা গুরুত্বপূণ যার মা নেই সেই বোঝে। আর যাদের মা আছে তারাও বোঝে যারা মাকে বুঝতে পারে। তাই আপনার শখ পুরণ করবার জন্য এমন কিছু করবেন না যার কারনে আপনার জীবন থেকে মূল্যবান ব্যক্তি না বস্তু হারাতে হয়। এতোটুকুই কথা বলবো মাকে কখনো কষ্ট দিবেন না। আর নিজের জেদ নিয়ে মা বাবার সামনে দাঁড়াবেন না।





About আব্দুস সামাদ আফিন্দী নাহিদ 29 Articles
বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা বিষয়ক বাংলা কমিউনিটি ব্লগ সাইট "লেখাপড়া বিডি"র নিয়মিত পাঠক ও লেখক হিসেবে ২০১৮ সাল থেকে নিয়োজিত আছেন আব্দুস সামাদ আফিন্দী । তিনি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার তরুন লেখক ও সাংবাদিক। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত সুনামগঞ্জ জেলার শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরছেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*