কিছুদিন পরেই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফলাফল । ফলাফলের বিষয়টা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে আনন্দের অথবা বেদনার।
যে কোন পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে টিভির পর্দায় কিংবা সংবাদপত্রের পাতা জুড়ে দেখি উচ্ছ্বসিত ছাত্র-ছাত্রীদের হাস্যজ্জ্বল ছবি। নেচে গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করার স্থির বা ভিডিওচিত্র।
যারা জি পি এ – ৫ পায় তারা মেতে উঠে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে । শ্লাঘনীয় এই খবরটি বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের বন্ধু মহলে চাওড় করতে ভুলেন না । কিন্তু যাদের ছেলে-মেয়ে বা ভাই-বোন কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারেনা তাদের বেলায় চিত্রটা ঠিক উল্টো । জি পি এ পাঁচ না পাওয়া কিছুকিছু শিক্ষার্থীর ছবিও আমরা টেলিভিশনে-পত্রিকায় দেখি । খবরগুলো এরকম — মাধ্যমিকে কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট অর্জন করতে না পারায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা বা মায়ের সাথে অভিমান করে এস এস সি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা !
আত্মহত্যার মতো হৃদয় বিদারক ঘটনাগুলো ঘটে ফলাফল প্রকাশের কদিন পরে । তারাও লাইট লাইমে আসে কিন্তু তাদের স্বজনদের জন্য ঐ খবর কিংবা প্রতিবেদনটি হয়ে উঠে অসহনীয় যাতনাময় । জেএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা স্বাভাবিক কারণেই একটু বেশিই আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে । যারা একটুর জন্য জি পি এ ফাইভ পায়না বা যারা কম জি পি এ পায় তাদের প্রতি কখনোই এমন আচরণ করা উচিত নয় যাতে তারা আত্মহননের মতো পথ বেছে নিতে বাধ্য হয় । যেসব ছাত্র ইতোপূর্বে আত্নহত্যা করছে তাদের মারধোর করার জন্যই যে তারা এমনটি করে তা কিন্তু নয়, বরং একটু করা কথা বললে বা পরিবারের সদস্যদের কেউ মুখ কালো করে থাকলে অথবা কথা বলা বন্ধ করলেও তারা আত্মঘাতী হয়ে যেতে পারে । কেননা বয়ঃসন্ধিকালের তুমুল আবেগজনিত কারণে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা । আমরা থ্রি ইডিয়ট দেখি, ত্যারে জামিন পারের মতো মুভিগুলো দেখে ভাবনাতুর হয়ে যাই, চোখের জল ফেলি অথচ নিজের সন্তান, ভাই-বোনের বেলায় অবলিলায় বিষয়টা এড়িয়ে চলি । ভুলে যায় তাদের আমাদের থেকে বেশিই কষ্ট হচ্ছে খারাপ রেজাল্ট করার জন্য । আমরা কি জানিনা সব ছাত্রের সক্ষমতা কিংবা মেধা সমান নয় । আমরা তো এইও জানি– পৃথিবীর বেশির ভাগ দিগ্বিজয়ীদের রেজাল্ট কখনোই ভালো ছিলোনা । সবাই যে ভালো রেজাল্ট করে কোট টাই পরে বাবুটি সেজে অফিসে যাবে তা তো নয় । একটি ছেলে/মেয়ে পড়ালেখায় ভালো না করেও বেঁচে থাকতে পারে এবং সফল হতেই পারে — এ-কি আমাদের অজানা বিষয় । তার যেগ্যতা সৃজনশক্তি কাজে লাগিয়ে ক্লাসের খারাপ ছেলেটই হতে পারে সফল ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, শিল্পী বা লেখক-কবি ।
তবুও আমরা আমাদের সন্তানদের সাথে খারাপ আচরণ করি, ঘর থেকে বের করে দেই, বকাঝকা করি, মারধোর করি !
যারপরনাই ফলাফল হয় খুবই খারাপ । ইদানীংকালে ছাত্রদের বেলায় আত্মহত্যার খবরগুলো আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলছে । বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা গেছে এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে ধস নামতে পারে । যদি সত্যি এমনটি হয় তবে আমাদের আরো বেশি সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে ।
নইলে আমরা আমাদের অবহেলার জন্যই প্রিয়জনদের হারাবো ।
সর্বপরি, বলতে চাই যে — ফলাফল যদি খারাপ হয়েই যায় তবে এখন বকাঝকা করে তো আর ফলাফল পরিবর্তন করতে পারবেন না । হ্যাঁ, তার মানসিক অবস্থা বুঝে পরবর্তীতে তাকে আপনি ভালো করে বুঝিয়ে বলতে পারেন ।
Leave a Reply