দূর্গম এলাকায় অসহায় মানুষের কাছে সাহায্য পৌছানো যাচ্ছে না , সরকারি- বেসরকারি সংস্থা যেখানে কিছুই করতে পারচ্ছে না । সেখানে সেই অসহায় মানুষের সাহায্যের বিষয়টি চিন্তা করে এবার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পাঁচ তরুণ তৈরী করলেন এমন একটি অত্যাধুনিক ড্রোন কপ্টার। যে ড্রোন বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষকে সাহায্য করবে। এমনটাই জানিয়েছেন ওই রোবিটিক্স দলের লিডার নাহিদ ফেরদৌস। রোবটিক্স টিমের এডভাইসর হিসেবে রয়েছেন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মো: ফয়জুর রহমান। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন এসিস্ট্যান্ট টিম লিডার মোবারক হোসাইন, সঞ্জিব দাস, সজীব গাঙ্গুলি ও মাসুদ রানা। তারা সবাই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভিার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী।
নাহিদ বলেন, আমাদের তৈরী ড্রোনটি কেবল বন্যার্ত নয় বাংলাদেশ সেনাবহিনী এটি যুদ্ধের কাজেও ব্যবহার করতে পারবেন। শত্রু সেনার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারবে ওই ড্রোনটি।
এছাড়া ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াতেও এটা ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন নাহিদ ফেরদৌস।
ড্রোন তৈরীর চিন্তাটা হঠাৎ করেই মাথায় আসে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৫ ছাত্রের। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স ক্লাবেরও সদস্য। নিজেদের টাকায় শুরু হলো পথচলা। ক্লাস-পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকে দিনরাত পরিশ্রম করতে লাগলেন তারা। অবশেষে তৈরি করা হলো ড্রোন। পরীক্ষামুলকভাবে ড্রোনটি উড়িয়ে সফলও হলেন তারা। স্বপ্নটাও বেড়ে গেল। নিজেদের তৈরী ওই ড্রোনটি নিয়েই সম্প্রতি Military Institute of Science and Technology (MIST) তে Aero-Design Competition and Exhibition 2014 এ অংশ নিলেন তারা। বাংলাদেশের ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮টি টিমের মধ্যে সবার নজর কেড়ে নিল ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির নাহিদ ফেরদৌসের টিম। প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার জিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ওই পাঁচ তরুণ। এখন তারা ড্যাফোডিল ক্যাম্পাসের হিরো তথা দেশের গর্ব।
রোবটিক্স দলের টিম লিডার নাহিদ ফেরদৌস জানিয়েছেন, এর আগেও কুয়েট ও শাবিতে ড্রোন তৈরী করা হয়েছে। তবে ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রোনের চেয়ে তাদের তৈরী ড্রোন অনেক বেশি কার্যকরি ও আধুনিক।
তাদের এ ড্রোনে ব্যবহার করা হয়েছে অাল্ট্রাসনিক সেন্সর। এর মাধ্যমে এটি কতটুকু উচ্চতায় রয়েছে তা বের করা সম্ভব। এ ড্রোনটি যেকোন জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। ড্রোনটি ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এটি এক হাজার মিটার উচ্চতায় উড়তে পারে। ৩ কেজি ওজন বহন করতে পারে।
নাহিদ ফেরদৌস বলেন, প্রাথমিকভাবে বন্ধুরা মিলে অল্প বাজটে ড্রোনটি তৈরি করা হয়েছে। তাও এক লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়ে গেছে। সফলতা পাওয়ায় এবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। আশা করছি সহযোগিতা পেলে ভালো কিছু উপহার দিতে পারবো।
তিনি বলেন ড্রোনটি তৈরী করতে গিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতা সইতে হয়েছে। এব্যপারে সরকারি সহযোগিতা থাকলে আরো ভালো কিছু করা যেতো বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
নাহিদ বলেন, ড্রোনটিতে এখন লাইফটাইম বাড়ানোর কাজ চলছে। এছাড়া কিভাবে কম পাওয়ার ব্যবহার করে বেশিক্ষণ সময় ধরে ড্রোনটিকে ওড়ানো যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে।
নাহিদ জানান, তাদের টিমটা চমৎকার। তাদের মধ্যে বোঝাপড়াও ভালো। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতার কারনেই ড্রোন তৈরীতে সফলতা এসেছে। তিনি তার শিক্ষক, বন্ধু, সহপাঠীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ড্রোন তৈরীর ব্যপারে উৎসাহ ও সহযোগিতা করার জন্য।
উল্লেখ্য, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রোবটিক ক্লাবের তৈরি করার ‘ড্রোন’ ঢাকার মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) আয়োজিত ‘প্রথম জাতীয় অ্যারো-ডিজাইন প্রতিযোগিতা’র রোটারি উইং বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮টি দল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ১৪ ও ১৫ অক্টোবর চলে এই প্রতিযোগিতা।
Leave a Reply