
সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (টিটিসি), ফেনীর সদ্য অবসরোত্তর ছুটিতে গমন করা অধ্যক্ষ প্রফেসর মীর
গোলাম হায়দারের বিদায় সংবর্ধনা মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে কলেজের শিক্ষক পরিষদ কক্ষে অনুষ্ঠিত
হয়। কলেজের সহকারী অধ্যাপক (ইতিহাস) জোবায়রা ইয়াসমিন ও প্রভাষক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) কামরুজ্জামান
মিয়ার সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন কলেজের উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আবুল বাশার।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (পরিসংখ্যান) এস এম আব্দুর রহিম, শিক্ষক পরিষদের
সেক্রেটারি সহকারী অধ্যাপক (বাংলা) হরবিন্দু হালদার, হোস্টেল সুপার সহকারী অধ্যাপক (পদার্থবিজ্ঞান)
সেলিম সরকারসহ অন্যান্য শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর
হায়দারের সহধর্মিনী সংগঠক, সংস্কৃতিকর্মী ও লেখিকা ইসমত পারভীন রুনু এবং একমাত্র সন্তান সদ্য ৩৪তম
বিসিএস (নন-ক্যাডার) থেকে ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গণিত) পদে
নিয়োগপ্রাপ্ত সংগঠক ও লেখক মীর আন্-নাজমুস সাকিব।
অনুষ্ঠানে সকলে প্রফেসর হায়দারের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করেন এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। বিশেষ করে অতীত অধ্যক্ষদের অতি আড়ম্বরে বিদায় সংবর্ধনা নেয়ার
সংস্কৃতিকে বদলে দিয়ে নিজ ইচ্ছায় অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিদায় সংবর্ধনা নেয়ার বিষয়টি বার বার
উচ্চারিত হয় স্মৃতিচারণকারীদের কণ্ঠে। তাঁর সততা, প্রশাসনিক দক্ষতা, শিখন-শেখানো দক্ষতা ও বন্ধুবৎসল
স্বভাব-চরিত্রের নানা দিক উঠে আসে তাঁদের বক্তব্যে। এসময় কারো কারো চোখের কোণে বেদনার নোনা
জলের আভাস লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষক পরিষদের সেক্রেটারি সহকারী অধ্যাপক (বাংলা) হরবিন্দু হালদার
বিদায়ী অধ্যক্ষের কর্মময় জীবনের নানা অংশ নিয়ে পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করেন।
বিদায়ী মানপত্র পাঠ করে প্রফেসর হায়দারের হাতে তুলে দেন সহকারী অধ্যাপক (ইংরেজি) আব্দুল আলেক।
শিক্ষক পরিষদ, হোস্টেল তত্ত্বাবধান কমিটি ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে প্রফেসর হায়দার ও তাঁর পরিবারের
হাতে ক্রেস্ট, শুভেচ্ছা উপহার ও সব সময়ের শ্রেষ্ঠ উপহার বই তুলে দেয়া হয়। প্রফেসর হায়দার ও তাঁর
পরিবারের পক্ষ থেকেও শিক্ষক পরিষদ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেয়া হয়।
বিদায়ী বক্তব্যে প্রফেসর হায়দার স্মৃতিচারণের পাশাপাশি অধ্যক্ষ থাকাকালীন অবস্থায় তাঁর কর্মকাণ্ড ও এ
সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত হিসাব-নিকাশ তুলে ধরেন এবং কর্মকালীন সময়ে সার্বিক সহযোগিতার জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী,
কর্মকর্তা, কর্মচারীদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
উল্লেখ্য গত ৩১ আগস্ট বৃহস্পতিবার দীর্ঘ সাড়ে ২৯ বছরের সরকারি চাকরি জীবনের ইতি টেনে
অবসরোত্তর ছুটিতে গমন করেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও মাস্টার ট্রেইনার প্রফেসর মীর গোলাম হায়দার (আইডি
নং-৮৫৬১)। গত ২৩ মার্চ বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশ অনুসারে ২৭ মার্চ সোমবার ফেনী
টিটিসির অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন তিনি। প্রফেসর হায়দারের জন্ম ১৯৫৮ সালে চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ
উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তাঁর বাবা মরহুম মীর মোহাম্মদ আলী ছিলেন প্রখ্যাত চিকিৎসক
এবং মা মরহুমা সাজেদা খাতুন ছিলেন গৃহিনী। চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
প্রফেসর হায়দার কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড-এর অধীনে কৃতিত্বের সাথে ১৯৭৩ সালে কৃষি শাখায় এসএসসি ও
১৯৭৫ সালে বিজ্ঞান শাখায় এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৭ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও ১৯৭৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন
করেন। ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন অধিভূক্ত সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ময়মনসিংহ
(কো-এডুকেশন) থেকে ১ম শ্রেণিতে বিএড ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৮ সালে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)
৭ম ব্যাচের (১৯৮৫) বিজ্ঞান বিষয়ের মেধাক্রম-০১ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন সরকারি টিচার্স
ট্রেনিং কলেজ, ফেনীতে। তিনি ১৯৯৫ সালে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) থেকে বুনিয়াদী
প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর ২০০৩ সালে পদোন্নতি পেয়ে একই কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান
করেন। ২০১০ সালে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, সিলেটে কর্মরত অবস্থায় তিনি একই কলেজের সহযোগী
অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। তিনি তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে উক্ত কলেজসমূহ ছাড়াও কর্মরত ছিলেন সরকারি
টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, কুমিল্লা ও সরকারি শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, বরিশালে।
গত বছরের অক্টোবর মাসে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়ে তিনি যোগদান করেন সরকারি টিচার্স ট্রেনিং
কলেজ, খুলনায়।
দীর্ঘ কর্মজীবনে দেশে-বিদেশে নানা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন তিনি। ২০০১ সালে ইংল্যান্ডের প্লিমাউথ-এর
কলেজ অব সেন্ট মার্ক অ্যান্ড সেন্ট জন থেকে ‘রিসোর্স সেন্টার ম্যানেজমেন্ট’ ও ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার
কুইন্সল্যান্ডের ব্রিসবেনের গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটি থেকে ‘সায়েন্স এডুকেশন’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সরকারি
টিচার্স ট্রেনিং কলেজসমূহের সবচেয়ে জনপ্রিয় এ শিক্ষক প্রশিক্ষক ছিলেন হেড টিচার, সিপিডি-বায়োলজি,
ইনক্লুসিভ এডুকেশন, লাইফ স্কিল বেইজড এডুকেশন (এলএসবিই), ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিস্ক
রিডাকশনসহ নানা প্রকল্পের আওতাধীন ট্রেনিং কোর্সসমূহের মাস্টার ট্রেইনার। দেশের অন্যতম সেরা জেন্ডার
বিশেষজ্ঞ হিসেবে রয়েছে তাঁর ব্যাপক সুনাম। প্রশাসক হিসেবেও তিনি ছিলেন সফল। অধ্যক্ষ ছাড়াও বিভিন্ন
সময়ে দায়িত্ব পালন করেছেন হোস্টেল সুপার ও টিচার্স কাউন্সিলের সেক্রেটারি হিসেবে। সারা দেশে রয়েছে
তাঁর অসংখ্য গুণমুগ্ধ শিক্ষার্থী।
Leave a Reply