অরণ্য সৌরভ/কামরুল ইসলামঃ ঐতিহাসিক, ঐতিহ্যবাহী ও ব্যবসা বানিজ্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভা। এই পৌরসভায় উচ্চ শিক্ষার জন্য কোন কলেজ না থাকায় এখানকার শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট করে উপজেলা সদর, ঢাকা, মাধবদী-নরসিংদীসহ বিভিন্ন দূর দূরান্তে গিয়ে লেখাপড়া করতে হতো। তাই স্থানীয় জনগণের একটি আধুনিক কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। স্বাধীনতার চার দশক পর গোপালদীতে ১২৩ শতাংশ জমি ভরাট করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে গোপালদী নজরুল ইসলাম বাবু কলেজ নামে একটি আধুনিক মানুষ গড়ার অনন্য এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কলেজ প্রতিষ্ঠা করে গোপালদী পৌরসভার প্রবাহকে আরও বেগবান করেছেন একজন শিক্ষানুরাগী তরুণ রাজনীতিবিদ। তিনি হলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বাবু।
গোপালদী পৌরসভার প্রবেশ মুখেই নিরিবিলি পরিবেশে গোপালদী নজরুল ইসলাম বাবু কলেজটি অবস্থিত। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের আশা পূরণেনর মধ্য দিয়ে ২০১০ইং সালে ৮ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে একাডেমীক কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে ১৩৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কলেজ চালু হলে চারিদিকে খুশির বন্যা ও এলাকারবাসীর মুখে তৃপ্তির হাসি বয়ে যায়। বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। শিক্ষার্থীদের সামনে খুলে যায় শিক্ষার দুয়ার। কোলাহল মুক্ত মনোরম পরিবেশে শুরু শিক্ষার এক নতুন দিগন্ত। বর্তমানে ৬০০ জন শিক্ষার্থী ও ২২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়ে কলেজটির একাডেমীক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
কলেজ ক্যাম্পাসটি অত্র অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ ক্যাম্পাস। আলপনা ও সবুজে ঘেরা চারিপাশ। মেইন গেইট দিয়ে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৮০ জন পরিক্ষার্থী। ফলাফল চমকে দেওয়ার মত। প্রথম পরীক্ষায়ই ৩ জন জিপিএ-৫ সহ শতকরা শতভাগ পাশ করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি কলেজটির। সেই কৃতিত্ব বুকে ধারণ করে ২০১৩ সালে ২৩ জন জিপিএ-৫ সহ ৯৯.১৭% পাশ করেন। যথাক্রমে ২০১৪ সালে ৩৩ জন জিপিএ-৫ সহ ৯৯.৩৩%, ২০১৫ সালে ১২ জন জিপিএ-৫ সহ ৯৯.২৫% এবং চলতি ২০১৬ সালের ফলাফলে ৭ জন জিপিএ-৫ সহ ৯৮.৭০% পাশ করার গৌরব অর্জন করেন।
ফলাফলের বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ জেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই কৃতিত্বকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা সবার। আগামীতে ফলাফল আরও ভাল করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
কলেজের সমৃদ্ধশালী একটি কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। যেখানে ১২টি কম্পিউটার ও ২টি ল্যাপটপ রয়েছে। আইসিটিতে নতুন প্রজন্মকে আরও দক্ষ করে তুলতে ল্যাবটি বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে বলে দাবি করেন আইসিটি প্রভাষক লুৎফর রহমান রনি।
কলেজের ইংরেজী প্রভাষক মোহাম্মদ আলমগীর হাসান বলেন, আমরা সাবলীল ভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা পাশের জন্য পড়াশোনা না করে, শিক্ষাটা যেন তাদের নিত্য দিনে কাজে লাগে তা গ্রহণ করুক। আর আমরা সেই ভাবেই তাদেরকে শিক্ষা প্রদান করে যাচ্ছি এবং মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করে তুলতে সহায়তা করছি। কলেজটি শুধু জেলা পর্যায়ে নয় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো যেন সবাই জানে শুনে এবং চিনে আমরা সেই পথেই হাটছি এবং আশা ব্যক্ত করি তা অতিক্রম করতে পারবো।
বাংলা প্রভাষক কৃষ্ণপদ মন্ডল জানান, এলাকাটি ব্যবসা বানিজ্যে সমৃদ্ধ। এই জন্য আমরা কলেজে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের উপস্থিতি বেশি দেখি। এছাড়া রেজাল্টেও বালকদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বালিকারা এগিয়ে।
ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ প্রভাষক নাজমুল হক তসলিম জানায়, শিক্ষর্থীরা অনুপস্থিত থাকলে আমরা সরাসরি অভিভাবকদের সাথে আলাপ করি। সারা বছরই আমরা হোম ভিজিটের ব্যবস্থা রাখি। এছাড়া হোম ভিজিট ব্যবস্থাটা আমরা অভিভাবক মহলের কাছ থেকে বেশ সাড়া পাই। এতে আমরা-শিক্ষার্থীরা-অভিভাবকরা এক বৃত্তে অবস্থান করি। এতে সবার সমস্যার সমাধান খুব সুন্দরভাবে হয়ে যায়।
অভিভাবকরা জানায়, দূর দূরান্তে কলেজ থাকায় আমরা মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকতাম। মেয়েকে একা দূরের কোন কলেজে পাঠিয়ে বাড়িতে স্বস্তিতে বসে থাকতে পারিনি। কিন্তু এমপি সাহেব কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমাদের মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের কোন বাধা রইলনা। এ জন্য এলাকায় বাল্য বিয়ের হার আজ অনেক খানি কমে গেছে। এলাকাবাসীরা আশা ব্যক্ত করেন, একদিন তাদের সন্তানরা এই কলেজ থেকেই অনার্স মাস্টারস পাশ করে সবাই মুখ উজ্জ্বল করবে।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনির হোসেন বলেন, শিক্ষার মান যাচাই করার জন্য আমরা ক্লাস, সাপ্তাহিক, মাসিক পরীক্ষাসহ ইনকোর্স, সাময়িক পরীক্ষার ব্যবস্থা করে থাকি। আজকের এই কলেজটি অদূর ভবিষ্যতে একটি অপ্রতিদ্বন্দ্বি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে এক অনন্য ভূমিকা রাখবে এটি আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।
অধ্যক্ষসহ প্রভাষক বৃন্দ দৃঢ় দাবি তুলে, যেন অতি শীঘ্রই কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়।
Leave a Reply