![21th February International Mother Language Day](https://lekhaporabd.net/wp-content/uploads/2016/02/21th-February-International-Mother-Language-Day.jpg)
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,
আমি কি ভুলিতে পারি’
একুশের গানে গানে ভাষাবন্দনা আর শহীদদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার ছোঁয়ায় এগিয়ে চলেছে বাংলা ভাষা। কাল থেকে কালে উজ্জীবিত করে তোলে গোটা দেশ। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের সীমানা পেরিয়ে এ ভাষা পৌঁছে গেছে বিশ্ববাসীর অন্তর কোঠরে। গানের সুরে সুরে পৌছে গেছে ভাষা শহীদদের আত্মদানের অজানা ইতিহাস।
ভাষা আন্দোলন নিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তভেজা প্রহর থেকেই শুরু হয় গান রচনা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে শহীদ বরকতের রক্তে রাঙা লাশ দেখে আবদুল গাফ্ফার লিখেছিলেন একটি কবিতা- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’।
১৯৫৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা কলেজের ছাত্ররা লিফলেট প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে কবিতাটি ছাপা হয়েছিল। এরপর কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ও মোহাম্মদ সুলতান কর্তৃক প্রকাশিত একুশে ফেব্রুয়ারি সংকলনে ‘একুশের গান’ হিসেবে ছাপা হয় ১৯৫৩ সালের মার্চ মাসে।
ঢাকা কলেজের নবনির্বাচিত ছাত্র সংসদের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আবদুল লতিফের কণ্ঠে ও সুরে কবিতাটি প্রথম গাওয়া হয়। তখন আরো কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ঢাকা কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন। এক মাস বিনির্বিচারে
জেল খাটেন। আরো পরে আলতাফ মাহমুদ কবিতাটিতে দেন জাদুকরি সুরের স্পর্শ। সেই সুরেই এখন পর্যন্ত একুশের মূল সঙ্গীত হিসেবে গানটি প্রতিষ্ঠিত।
১৯৫৩ সালে প্রথম প্রভাত ফেরিতে কোন গানটি গাওয়া হয়েছিল, অনেকেই এখন আর তা মনে করতে পারেন না। বরিশালের মোশারফ উদ্দিন আহমদ লিখেছেন- ‘মৃত্যুকে যারা তুচ্ছ করিল/ ভাষা বাঁচাবার তরে/ আজিকে স্মরিও/ তারে/ কোথায় বরকত, কোথায় সালাম/ সারা বাংলা কাঁদিয়া মরে/ আজিকে স্মরিও তারে।’
এই গানটি গাওয়া হয়েছিল প্রথম প্রভাতফেরিতে অনেক মিছিলে। গানটির প্রথম সুর করেছিলেন গীতিকার নিজেই। পরে আলতাফ মাহমুদ সুর করেন, শেখ লুৎফর রহমান তা আরেকটু ঘষামাজা করেন। ভাষাসৈনিক গাজীউল হকও লিখলেন একটি গান- ভুলব না ভুলব না/অমর একুশে ভুলব না।’
প্রখ্যাত গণসঙ্গীত শিল্পী, সুরকার ও নৃত্যপরিচালক নিজামুল হক গানটির সুর করেন তৎকালীন জনপ্রিয় একটি হিন্দি চলচ্চিত্রের গান- ‘দূর হটো দূর হটো দূর হটো এ দুনিয়া ওয়ালে’-এর সুরে।
প্রথম কয়েক বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে এই গান নিয়মিতই গাওয়া হতো। খুলনা-বাগেরহাট অঞ্চলের এক ‘তেলি’ শামসুদ্দিন আহমদ হাট- বাজারে তেল বিক্রি করতেন আর গাইতেন- ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করিলি রে বাঙালি/তোরা ঢাকা শহর রক্তে ভাসাইলি।’
প্রখ্যাত রমেশ শীল নিজের লেখা গাইলেন- ‘ভাষার জন্য জীবন হারালি/বাঙালি ভাইরে, রমনার মাটি রক্তে ভাসাইলি’। আবদুল লতিফ বাঁধলেন- ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়/ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমার হাতে পায়।’
চারণ কবি আবদুল হাকিম খালি গলায় গাইতেন- ‘বাংলা মোদের মাতৃভাষা/বাংলা মোদের বুলি/সেই বাংলায় কথা কইলে পরে/বুকে চালায় গুলি।’
সময়ের দাবিতে লেখা এসব গানের আবেদন আজো আগের মতোই। তবে কমে যাচ্ছে ভাষা, ভাষা আন্দোলন কিংবা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নতুন গানের সংখ্যা ও মান। এমনই অভিমত এ প্রজন্মের এক কণ্ঠশিল্পীর। তার মতে, গান সময়কে ধারণ করে। আজ যখন কনসার্ট বা বিভিন্ন গণ-আন্দোলন নিয়ে কোনো গান রচিত হয় না তখন বোঝা যায়, সময়কে ধারণ করার ক্ষমতা আমাদের কমে যাচ্ছে। বায়ান্ন, উনসত্তর কিংবা একাত্তরে এ রকম অবস্থা ছিল না।
জাগ্রত হউক ভাষা প্রীতি, জাগ্রত হউক মায়ের ভাষার প্রজন্ম। জয় হউক মায়ের বুলির। সবাইকে মায়ের ভাষার রক্তিম শুভ্রতা।।
Leave a Reply