এসব প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত টাইপ না, গল্প টাইপ করে বলতে পারলে ভাল হয়। গাইডের উত্তর না, একেবারে নিজের জীবনের কিছু বলতে পারলে সেটা বিশ্বাসযোগ্য হয়। যেমন, কেন বিসিএস দিচ্ছেন – এ প্রশ্নে আমার উত্তর ছিলো মোটামুটি এরকমঃ ‘স্যার আমি কিছুদিন সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজ করেছি। বিদেশী কোম্পানির আউটসোর্সিং কাজ। কিন্তু দিন শেষে বাসায় ফিরে মনে হতো – আমি কার জন্য কী করছি! এখানে বেতন ছাড়া আমার কোন প্রাপ্তি নেই। ছোটবেলা থেকে যেভাবে নিজেকে দেখতে চেয়েছি, প্রাইভেট জবে সেভাবে নিজেকে পাচ্ছি না, মানসিক শান্তি পাচ্ছি না। আমি দেশের জন্য আরো বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ চাই। প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হতে পারলেই আমি সেই সুযোগটা পেতে পারি। এজন্যেই বিসিএস দিচ্ছি, স্যার।’
.
সাম্প্রতিক বিষয়ঃ একেবারে সাম্প্রতিক বিষয়গুলোই প্রশ্নকর্তার মাথায় বেশি থাকে। এজন্য পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতার কয়েকটা কলাম প্রতিদিন পড়ুন। অনেকে টকশো দেখার কথা বলেন। কিন্তু এখন এত বেশি টকশো হয় যে, এতে প্রিপারেশানের সময় নষ্ট আর ইনফরেশান বিচ্যুতির সম্ভাবনা থাকে।
.
Common Sense of Viva: ভাইভার কিছু কমন বিষয় যেগুলো আপনি জানেন। আমি আবার মনে করিয়ে দিচ্ছিঃ (i) অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করুন। সালাম দিয়ে, অনুমতি নিয়ে বসুন। (ii) স্মাইলিং ফেইস রাখা জরুরী। (iii) আই-কন্টাকঃ ভাইভা বোর্ডের সবার সাথে আই-কন্টাক বজায় রাখুন। ভাইভা বোর্ডে ৩/৪ জন থাকেন। একটি প্রশ্ন যিনি করবেন, উত্তরের সময় তাঁকে মূল ফোকাস দিয়ে সবার দিকে অন্তত একবার তাকান। বিসিএস ভাইভাসহ অনেক ভাইভাতেই একজন মনোবিজ্ঞানী থাকেন। উনি কিচ্ছু বলেন না। চুপচাপ বসে থাকেন। ওনাকে অবহেলা করবেন না। অবশ্যই ওনাকেও আই কন্টাকে রাখুন। (iv) পোশাকঃ মার্জিত কিন্তু নিজের জন্য কমফোর্টেবল পোশাক পড়ুন। সেটি স্যুট হতে পারে, শার্ট-প্যান্টের সাথে টাই, শাড়ি, সেলোয়ার-কামিজ যে কিছু হতে পারে। যেটা পড়লে আপনি নিজেকে একজন অফিসারসুলভ মনে করবেন, সেটাই পড়ুন। ৩৪-তম বিসিএসের ভাইভার আগে আমাকে এক পরীক্ষার্থী জিজ্ঞেস করল, ভাইয়া কোন টেইলার্স থেকে স্যুট বানাবো। সে ধরেই নিয়েছে, স্যুট তাঁকে পড়তেই হবে। আর টেইলার্সের খবর দিতে আমিই যোগ্য ব্যক্তি। কদিন পড়ে সে আবার খবর দিল, সে বারো হাজার টাকা দিয়ে এক বিখ্যাত টেইলার্স থেকে স্যুট বানিয়ে ফেলেছে। বেশ মজা লাগলো। কিন্তু ওর এপ্রোচটাকে অবশ্যই পজিটিভলি নিলাম। সে যেটা ঠিক মনে করেছে, সেটা করে ফেলেছে। পোশাকের জন্য এটাই সঠিক এপ্রোচ। (v) কোনমতেই argue করা বা তর্ক করা যাবে না। Interviewer যদি ভুলও বলে, তবে ভুলটা মেনে নিয়ে বিনয়ের সাথে নিজের টুকু যোগ করা যায়, তাঁর বেশি নয়।’
.
ভাইভার দিন সকালে কি করবেন? সকালেই ঐ দিনের ২/৩ টা খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে নিন। ঐ দিনের বাংলা তারিখ জেনে নিন। ঐ দিন কোন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কোন দিবস বা বিশেষ ঘটনা ঘটে থাকলে সেটার বিস্তারিত জানতে হবে। ওই সময় কোন বিখ্যাত ব্যক্তি বাংলাদেশে ভ্রমণ করলে বা বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোথাও সফরে গেলে সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
.
প্রশ্ন কি ইংরেজীতে করবে? ভাইভাতে ২/১ টা প্রশ্ন ইংরেজিতে করে। আর যাদের ফরেন ফার্স্ট চয়েস, তাঁদের বেশিরভাগ প্রশ্নই ইংরেজীতে করতে পারে। বিদেশি ভাষায় সবারই সমস্যা থাকে। তাই এই সমস্যা নিয়া ভাবার দরকার নাই, ভাবুন এটা সবারই জন্য কম-বেশী একই। ইংরেজী বলার ভীতিটা যাদের বেশি, তাঁরা দুটি কাজ করতে পারেনঃ (i) কমন প্রশ্নগুলার ইংরেজী উত্তর নিজে নিজে বলে সেটি মোবাইলে রেকর্ড করুন। এরপর শুনুন। নিজেই বুঝবেন কিভাবে বললে আরও ভালো হতো। পরের বার রেকর্ডে অবশ্যই উন্নতি হবে। এ্যাঁ, আঁ, উঁ …এসব বাদ দিয়ে ইংরেজী বাক্য স্মার্টলি শেষ করার জন্য এর চেয়ে ভালো টেকনিক আর নেই। (ii) কমন প্রশ্নগুলার ইংরেজী উত্তর প্রেমিক/প্রেমিকা/বন্ধুর কাছে বলতে পারেন। আফসোস, আমার প্রেমিকা সেই সময় কাছে আসলে, তাঁর সাথে কালিদাসও আসত – ‘মেঘদূত’ হাতে নিয়ে। তাই পরীক্ষার আলাপ পাত্তাই পেত না। আপনার তো সেই সমস্যা নেই।
.
শেষ কথাঃ ফর গড সেক, আমি যেভাবে আমার কথাগুলো বললাম, সেভাবে আমারে কেউ বলে নাই। সেই সময় ফেইসবুকে পরামর্শ নেবার মত স্মার্ট আমি ছিলাম না। আমি বিসিএসের জন্য কোন কোচিং করি নাই। ২/৩ টা কোচিং আমার নাম তাঁদের লিফলেটে ব্যবহার করেছে, কিন্তু তা ডাহা মিথ্যা। এই মিথ্যার জন্য অনেকে মাপ চেয়েছে, কিন্তু লিফলেটে নাম দেয়া বন্ধ করে নাই। যাই হোক, এসবের মানে – ভাইভা প্রিপারেশানে আপনার অবস্থা আমার থেকে ভাল। তো আপনি আজই কনিফিডেন্ট হয়ে যান। আজই আর হরিপদ কেরানী নয়, আকবর বাদশা হয়ে যান। তবে একজন বিনয়ী বাদশা। কনফিডেন্স আর বিনয় দিয়ে জয় করুন ভাইভা বোর্ডকে।
শুভকামনা!
Leave a Reply