৩৫তম বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষা সামনের ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ থেকে শুরু হচ্ছে । সম্পূর্ণ নতুন সিলেবাসের আলোকে প্রথম লিখিত পরীক্ষা এটি। এক হাজার ৮০৩টি শূন্য পদের বিপরীতে ২০ হাজার ৩৯১ জন প্রার্থী প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আপনি কখনোই ভাববেন না যে বিসিএস ক্যাডার না হলে লাইফ থেমে যাবে, তবে এটাও ভুলে যাবেন না যে, বিসিএস ক্যাডারের চেয়ে সম্মানের আর কোনো পেশা এই মুহূর্তে বাংলাদেশে নেই। সামনের কয়েকটি দিন কিভাবে প্রস্তুতি নেবেন।
১. যেহেতু নতুন সিলেবাস, তাই সিলেবাসের নতুন অংশগুলোকেই একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়বেন।
২. সব সময় uncommon বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেবেন। যে প্রশ্নগুলো uncommon আপনি সেগুলোর উত্তর করুন, এতে যিনি খাতা দেখবেন তিনি আপনাকে কিছুুটা হলেও বেশি নম্বর দেবেন।
৩. গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি একটু বেশি নজর দিন, মূলত এই দুই বিষয়ের নম্বরই পার্থক্য গড়ে দেয়।
৪. এই কয় দিন ২০-২২ ঘণ্টা পড়তে হবে এ টেনডেনসি পরিহার করুন।
৫. যখন যে বিষয় ভালো লাগবে তখন সে বিষয় পড়ুন।
৬. কে কী পড়ছে, সে খবর না নিয়ে নিজের কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় সেটাই পড়ুন।
৭. পরীক্ষার আগে সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া নিয়ে ভাববেন না তবে পরীক্ষার হলে গিয়ে চেষ্টা করবেন অবশ্যই সব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার।
৮. সিলেবাসের আলোকে সব বিষয় সম্পর্কে ধারণা নেয়ার চেষ্টা করুন।
৯. কোনো প্রশ্নের উত্তর কোনো গাইড থেকে হুবহু লিখবেন না।
১০. প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় কোনো তারিখ, মাস বা বছর যদি Exactly মনে না থাকে তাহলে তারিখের জায়গায় মাস, মাসের জায়গায় বছর এবং বছরের জায়গায় দশক লিখে দেবেন, তবে তা যেন ভুল না হয়। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদ লাভ করে- ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪। আপনার যদি তারিখ মনে না থাকে তবে লিখুন- ‘সেপ্টেম্বর ১৯৭৪’ যদি তা-ও মনে না থাকে তবে লিখুন- ‘১৯৭৪ সাল বা সালে’। কিন্তু Specific করতে গিয়ে যেন ভুল না হয়।
১১. দৈনিক পত্রিকার আন্তর্জাতিক ও সম্পাদকীয় অংশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শেষ মুহূর্তে এ বিষয়ক কাটিংগুলোতে চোখ বুলিয়ে নেবেন।
১২. কবি-সাহিত্যিকদের জন্ম-মৃত্যু উপলক্ষে প্রকাশিত ক্রোড়পত্রগুলো পড়ার চেষ্টা করবেন।
১৩. সাধারণ জ্ঞান অংশে উত্তরের ক্ষেত্রে সন-তারিখ ও বিভিন্ন তথ্য সূত্রসহ তুলে ধরুন। সেটা অন্যের থেকে আপনার উত্তরকে আকর্ষণীয় করবে।
১৪. কখনোই এটা ভাববেন না যে, যিনি খাতা দেখবেন তিনি হয়তো তথ্যটি সঠিক না ভুল তা ধরতে পারবেন না। কারণ ৪০-৫০টি খাতা দেখলে পরীক্ষকের আপনার খাতার ভুল স্পষ্ট হয়ে যাবে।
১৫. ইংরেজির ক্ষেত্রে বানান ভুল যাতে না হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন। আর গ্র্রামারটাও যাতে ঠিক থাকে, লেখা সহজ ভাষায় হলেও কোনো সমস্যা হবে না।
১৬. অযথা প্রশ্নের উত্তরে পৃষ্ঠা বাড়ানোর চিন্তা করবেন না এবং লেখা যতটা সম্ভব তথ্যবহুল করার চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন আপনি একজন প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা হতে যাচ্ছেন, সুতরাং আপনার লেখা উত্তরের মান কিন্তু সব দিক বিবেচনা করেই করা হবে।
১৭. বাংলার একটা বিষয় নিয়ে সবাই খুব চিন্তিত থাকে, সেটা হলো গ্রন্থ সমালোচনা। এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। এটা একান্তই আপনার নিজের ব্যাপার যে কিভাবে এটা সমালোচনা করবেন। বাজারে কিছু বই বের হয়েছে। এগুলো থেকে গ্রন্থ আলোচনা দেখে রাখবেন।
১৮. সাম্প্রতিক বিষয়াবলি বেশি গুরুত্ব দেয়ার দরকার নেই তবে বাংলাদেশ, ভারত, মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান ও ইউরোজোন সঙ্কট বিষয়গুলো ভালোভাবে দেখে নিন।
১৯. বড় প্রশ্নের উত্তরগুলো পয়েন্ট আকারে লিখবেন। প্রশ্নের মানবন্টন অনুযায়ী উত্তর লেখার পরিধি ছোট বা বড় করুন।
২০. নিজের স্মার্টফোনটাকে কেবল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার না করে এটা পড়াশোনার কাজে লাগান। যেকোনো বিষয় বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বিষয়ের কোনো টপিক বইতে না পেলে গুগলে সার্চ দিয়ে তা দেখে নিতে পারেন। এতে আপনার সময় বাঁচবে সাথে সাথে এটা উত্তরে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
২১. জীবনে সফল হওয়ার শর্টকাট কোনো উপায় নেই। আর পড়ার ক্ষেত্রেও কোনো শর্টকার্ট বই পড়বেন না।
২২. সংবিধানের সব বিষয়ই আয়ত্তে থাকা ভালো তবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, মৌলিক অধিকার ও সংশোধনী ইত্যাদি বিষয় ভালোভাবে আয়ত্ত করবেন।
২৩. বাংলা ও ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র এবং বাংলাদেশ বিষয়াবলি প্রথমপত্র ছাড়া সব বিষয়েই ৭০-এর অধিক নম্বর পাওয়া সম্ভব। তবে গণিত ও মানসিক দক্ষতা এবং বিজ্ঞানে ৯০ পর্যন্ত নম্বর পাওয়া যায়।
২৪. ২৯তম বিসিএসের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ৮৮ নম্বর পেয়েছিলেন এবং ৩৩তম বিসিএসে ঢাকা কলেজের ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুন গণিত ও মানসিক দক্ষতায় ৯৩ নম্বর পেয়েছিলেন। সুতরাং এই বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিলে আপনার পক্ষেও অধিক নম্বর পাওয়া সম্ভব।
২৫. অনেকেই অতিরিক্ত টেনশনের কারণে পরীক্ষার আগে অসুস্থ হয়ে যায়, যা তার পরীক্ষার ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। সুতরাং সবার উচিত অতিরিক্ত চাপ না নিয়ে স্বাভাবিক গতিতে পড়াশোনা করা।
২৬. অনেক পরীক্ষার্থী আছেন যারা প্রথমে দু-একটি পরীক্ষা খারাপ হলে পরবর্তী পরীক্ষা দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তাদের জন্য বলছি, আপনি যদি ৩০-এর নিচে নম্বর পান তাহলে নম্বর যোগ হবে না, কিন্তু আপনি তো ফেল করছেন না। গড়ে ৪৫০ নম্বর পেলেই আপনি ভাইভাতে ডাক পাবেন। সুতরাং শেষ মুহূর্তে এসে যে বিষয়ে আপনি দুর্বল সেটা নিয়ে চিন্তা না করে যে বিষয়ে ভালো সেটাতে সর্বোচ্চ নম্বর তোলার চেষ্টা করুন।
২৭. ৩৩তম বিসিএসে একাধিক পরীক্ষার্থী কোনো এক বিষয়ে নম্বর যোগ না হওয়ার পরেও ক্যাডার পেয়েছিলেন। সুতরাং আবার বলছি, যে বিষয়ে আপনার দক্ষতা বেশি এখন সেটাতে আরো ভালো করার চেষ্টা করুন।
২৮. পরীক্ষার এক দিন আগেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখুন। যেমন- প্রবেশপত্র, কলম, পেন্সিল, কালার পেন, ক্যালকুলেটর ইত্যাদি।
শেষ কথা : কোনো অজুহাত খোঁজার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন আপনার এবং এটাকে বাস্তবায়ন করতে হবে শুধু আপনাকে। চেষ্টা চালিয়ে যান, সফলতা অবশ্যই আসবে।
মূল লেখক : পরিচালক ও শিক্ষক, ওরাকল বিসিএস
লেখাটি পূর্বে প্রকাশিত হয়েছে বিডিবন্ধু ব্লগে। আমার এ পোস্টটি পছন্দ হলে আপনাদের ইচ্ছা হলেই ঘুরে আসতে পারেন বিডিবন্ধু ব্লগ থেকে। আমার ফেসবুক পেজ এই লিংকে । অবশেষে আমার পোস্টটি পরার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।
Leave a Reply