মান্যবর মহোদয়,
সালাম ও শুভেচ্ছা। আমি এই বঙ্গদেশের ক্ষুদ্র এক ছাত্র, যে এই বছর এইচএসসি পরীক্ষায় আশাহতভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে। আর সে জন্যই আপনার প্রতি আমার এ খোলা চিঠি। কোনও দৈব প্রক্রিয়ায় এ চিঠি যদি আপনার চোখে পড়ে, হাজারো ব্যস্ততা স্বত্ত্বেও যদি পুরো লেখাটিতে কষ্ট করে একটু চোখ বোলাতে পারেন, অনুধাবন করেন- ধন্য হয়ে যাব।
স্যার, শিক্ষা বা জ্ঞানই মানুষের জীবনধারণ ও উন্নতির প্রধানতম সহায়ক বা নিয়ামক হিসাবে আখ্যায়িত। এক সময় শারীরিক সামর্থ জাতির গর্বের বিষয় ছিল, প্রকৃতি প্রদত্ত ঐশ্বর্য জাতির অহমিকার উপাদান যুগিয়েছে। কিন্তু জ্ঞান বিজ্ঞানের বিষ্ময়কর উন্নতির এ যুগে জাতীয় জীবনে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। সেই বিকল্পহীন শিক্ষা লাভের ধারাবাহিতায় দীর্ঘ দুই বছর অনেক কষ্ট ও সাধনা করে এইচএসসিতে অংশগ্রহণ করি। কষ্ট ও সাধনা বলতে সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলীর অক্লান্ত শ্রম, সিসি ক্যামেরা আর হোষ্টেল মাষ্টারের কড়া শাসন এবং শ্রদ্ধেয় আব্বু- আম্মুর স্নেহের নজরদারির মধ্যে ২৪ ঘন্টার ১১ ঘন্টা পড়ালেখা করাকে বুঝাচ্ছি। কিন্তু আজ আমার সেই কষ্ট ও সাধনা বিফলে গেল।
আমি মেধাবী কিনা- তা জানিনা, তবে আমি যে মেধাহীন তা নয়। অষ্টম, নবম-দশম শ্রেণিতে ক্লাসের ফাস্টবয় ছিলাম। ইন্টারমিডিয়েটেও ক্লাসের সেকেন্ড ছিলাম। অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্ট বৃত্তি পেয়েছি। এসএসসিতেও জিপিএ ৫ পাই। গভীর আত্মবিশ্বাস ও প্রত্যয়ের সাথে এইচএসসিতে গোল্ডেন এ+ আশা করেছিলাম। কিন্তু কাজী নজরুলের যৌবনের গান গেয়ে রবীন্দ্রনাথের সোনার তরীতে ওঠেও পদ্মা নদীর মাঝির মত এটাই আমার শেষ পরিণতি হবে তা কখনো ভাবিনি। আমার পিতামাতা, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও শুভাকাঙ্ক্ষীগণ বড় আশা করেছিল আমাকে নিয়ে। কিন্তু আজ সেই আশার বলি হল। ভেঙ্গে গেলো আমার স্বপ্নগুলো। অপ্রত্যাশিতভাবে পঙ্গু হল আমার ভবিষ্যৎ পথচলা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাতে আমার মত একজন ছাত্রকে ৪.৯৩ পেয়ে বুক ধুকরে কাঁন্না দেখলে হয়তো বঙ্গবন্ধুও সহ্য করতে পারতেননা। এ বির্পযয়ের কারণ হিসেবে আপনি দুষছেন রাজনৈতিক অস্থিরতাকে। অথচ সে সময় ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন নগর নির্বাচনের ডামাঢোলের কারণে অনেকাংশেই শিথিল ছিল বিরোধী জোটের ওই আন্দোলন কর্মসূচি। তারপরও কেন ফলাফল বির্পযয় হলো? আমি জানতে চাই। যদিও আপনার যুক্তির খাতিরে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে ফলাফল বির্পযয়ের কারণ ধরি, তাহলেও আমি……।
কারণ আমি যে পরিবেশে (রাউজান উপজেলা) লেখাপড়া করেছি সেখানে অস্থিরতার “অ” কেও দেখিনি। হরতাল, অবরোধ, ধর্মঘট এমনকি মিছিলও হয়নি এই উপজেলায়। সুষ্ঠ ছিলো পরিবেশ। এক্ষেত্রে স্থানীয় এমপি মহোদয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারপরও এই উপজেলায় এ+ পেয়েছে মাত্র কয়েকজন। তাহলে এই উপজেলায় ১০/১২টি কলেজ- মাদরাসা থাকা সত্ত্বেও কেন এ+ এ ধস পড়েছে? কেন আশানুরূপ এ+ পায়নি? এখন কি বলবেন???
তবে দুটি মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে সমাজে। সেটা হলো, উচ্চমাধ্যমিকের যে ফল ঘোষণা করা হয়েছে , সেটা বাস্তবসম্মত না, কৃত্রিম ফলাফল।
আমি ভাষা আন্দোলন দেখিনি তবে বাংলার জন্য যারা জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করেছে আর যারা জীবন দিয়েছে তাদের ইতিহাস পড়েছি। আজ সেই অর্জিত বাংলাভাষার বাংলাদেশে আমার মত একজন ছাত্র ইন্টারমেডিয়েটে বাংলায় এ- আর ইতিহাসে এ পেয়ে স্বপ্নের গোল্ডেন এ+ থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়েছি। আজ পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছি। আশা করছি, আপনি দেখবেন।
মাননীয় মন্ত্রী, শিক্ষার উন্নয়ন এবং এর বিকাশের রাজদণ্ড আপনার হাতে। আপনি সফল হলে ১৬ কোটি মানুষ সফল আর আপনি ব্যর্থ হলে পুরো জাতিই ব্যর্থ। বহু প্রাচীন প্রবাদ- শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু এই মেরুদণ্ড নিয়ে আমার আশঙ্কা- ছাত্র ছাত্রী এবং শিক্ষাকে নিয়ে যথাযথ দায়িত্ববোধ না থাকার কারণে গোটা এক জেনেরেশন মেধাশূন্য হয়ে যাচ্ছে। বাবা-মা, শিক্ষকদের একটাই চাওয়া– ‘চির উন্নত মম শির’। আজ সেই শির নত হচ্ছে! রেজাল্টটাই যে দেখছে সবাই! কিন্তু মেধা? জ্ঞানার্জন? সব অসার!
পরিশেষে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আপনার শক্তি ও সামর্থ্যকে বাড়িয়ে দেন- এই দোয়া করে শেষ করছি।
ইতি
নাসির উদ্দিন মানিক
অনাকাঙ্ক্ষিত ফলপ্রাপ্ত ছাত্র
ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।
Leave a Reply