পড়াশোনায় অমনোযোগী? হতাশাকে গিলে ফেলুন


সামনে পরীক্ষা। আপনি কি আপনার পড়াশোনা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত? কোনভাবেই মনোযোগ দিতে পারছেন না। তাহলে কি করবেন? সবকিছু ছেড়ে পালিয়ে যাবেন? নাকি পড়াশোনাই বাদ দিয়ে দিবেন? বুঝতে পারছি- এই সকল চিন্তা-ভাবনা নিয়ে খুবি হতাশাগ্রস্থ এবং এলোমেলো হয়ে আছেন। হয়তো আপনি পড়তে বসছেন সেই মুহূর্তেই আপনার চিন্তাধারা অন্য কোথাও ঘুরতে গেলো। বেশিরভাগ সময় লক্ষ্য করে দেখবেন পড়ার সময়টুকুতে কতো আজেবাজে চিন্তা মাথায় ঘুরোঘুরি করে।

কিছু সাধারণ ব্যাপারগুলো বেশি ঘটে থাকে। যেমন: কোনো ফুটবল ম্যাচ অথবা ক্রিকেটও হতে পারে সেটা নিয়ে আপনার ভাবনা-চিন্তার শেষ নেই। আপনার প্রেমিকা বা প্রেমিকের সাথে শেষ কি কথা হলো তাও মাথায় আসে। আপনার পরীক্ষার পর কি করবেন তা নিয়েও আপনার উদ্দীপনার কমতি নেই। ১৩ হইতে ১৯ বছরের যারা আছেন তাদেরকে আমরা টীনস (Teens) বলে জানি। এদের মধ্যে একটা বিষয় মহামারী রুপে দেখা যায় যৌনতা (Sexuality) যার ফলপ্রসূতে অনেক অপকর্মে জড়িয়ে নেয় নিজেকে। এছাড়া মাদকের ব্যাপারটা তো থাকছেই।

যাইহোক, পড়াশোনায় ভালো হতে হলে আপনাকে অবশ্যই মনোযোগী হতে হবে এইটাই আপানার জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জের। তো কি আর করা, এর থেকে মুক্তির উপায় কি? মুক্তির উপায় আপনি নিজে। নিজকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখুন। দেখবেন সবকিছুই খুব সুন্দরভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।

আসল কথায় আসি, পড়াশোনায় মনযোগী হয়ার জন্য কিছু ধাপ অনুসরণ করা যেতে পারে। আমি সেই বিষয়গুলো নিয়েই সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো।

সময়সারনী পরিকল্পনা: প্রথমত, আপনাকে সময় সচেতন হতে হবে। সময়টাকে খুব গুরুত্ব দিন। মনে রাখবেন আপনার প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহূর্ত আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই পড়াশোনায়ে মনোযোগী হতে হলে অবশ্যই একটা সময়সারনীর প্রয়োজন থেকেই যায়। দিন অথবা রাতের মধ্যে কোন সময়টা আপনি পড়াশোনায় বেস্ত থাকবেন তা আগে থেকেই ঠিক করে নিন।

কাল যেন আজ হয়: আসলে কাল কিভাবে আজ হবে? চিন্তার বিষয়!!! হ্যাঁ আপনাকে অবশ্যই ‘কাল’ কথাটা ভুলে যেতে হবে। ‘আজ’ কথাটা সবসময় মাথায় রাখতে হবে। আপনি পড়াশোনা শুরু করবেন কাল নয়, আজকে এখনি শুরু করুন।

ভিন্নতার ছোঁয়ায় থাকুন: একটানা একটা বিষয় পড়তে আপনি বিরক্ত হতে পারেন। তাই অন্য বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিন। বিষয়টার সাথে আপনার সময়সীমা বেঁধে দিন।

আগ্রহ বাড়ান: আপনাকে মনোযোগী হতে হলে আপনার আগ্রহ বাড়াতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনার আগ্রহ বাড়ছে আপনি কখনোই মনোযোগী হতে পারবেন না। আর এটা হতে পারে- আপনার কাছে সহজ ও পছন্দের বিষয় দিয়ে শুরু করা এবং তুলনামূলক কম সহজ বিষয় দিয়ে শেষ করা।

পড়ার পরিবেশ: এক্ষেত্রে আমি বলবো, আপনার পড়ার জন্য একটি টেবিল ও চেয়ার থাকা জরুরী। এই বস্তুগুলো এমন স্থানে সাজাতে হবে যেন আপনি আরামের সহিত বসতে পারেন। আপনার মনোযোগের এক বিরাট কেন্দ্রবিন্দু এই পরিবেশ। যা আপনাকে উদ্দামতা এনে দিতে পারে।

একাগ্রচিত্ত: সুবিধা অনুযায়ী আপনার পড়ার রুমে অন্য কোন কাজ কিংবা শব্দ আসছে কিনা তা পরখ করে নিতে পারেন। যদি আওয়াজ পান তাহলে তা বন্ধ করার বেবস্থা করুন। এতেও যদি কাজ না হয় আপনার রুমের আসে পাশেই টিভি কিংবা গান চালু আছে কিনা তা দেখে নিয়ে প্রয়োজনীয় বেবস্থা নিন। সর্বোপরি, আপনার মোবাইল ফোনটা বন্ধ করুন। দেখবেন মনোযোগ বেড়ে যাবে।

নিয়মিত: পড়াশোনায় নিয়মিত না হলে আপনার এর থেকে বিচ্ছুতি ঘটবে তাই নিয়মমাফিক পড়াশোনা করুন।

বিশ্রাম: আপনাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই ৬-৮ ঘণ্টার কম কিংবা বেশি ঘুমনো যাবে না। এতে আপনার শরীরের ভারসাম্য কিঞ্চিৎ ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

খাওয়া-দাওয়া: পুষ্টিকর খাবার সময়মত খেতে হবে। আর পড়াশোনায় বেস্ত থাকলে ক্ষুধা একটু বেশিই লাগে। তাই হাতের কাছেই কিছু শুঁকনো খাবার রাখুন এবং প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন।

এইতো গেলো আমার ফর্মাল আলোচনা। এবার একটু ইনফর্মাল হই 😀 যে কোন কাজ শুরু করার আগে আপনি মানসিকভাবে স্থির হয়ে নিন। “Meditation” শব্দটার সাথে সবাই পরিচিত। তাই খানিকটা চেষ্টা চালিয়ে দেখুন আশা করি ভালোভাবেই শুরুটা করতে পারবেন। ভালো ছাত্র বা ছাত্রীর সাথে নিজেকে কখনোই তুলনা করবেন না, তাহলে নিজেই মনোযোগ হারিয়ে ফেলবেন। আর্থিক ব্যাপারটাও অনেকের দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে থাকে যদি পারেন এটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাবেন না। মনে বল রাখুন কোন না কোন উপায় হবেই। সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভরসা রাখুন তিনি সব ঠিকভাবে চালনা করবেন। যদি পারেন গ্রুপ স্টাডি করতে পারেন এতে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া আরও অনেক বিষয় রয়েছে।

সর্বশেষে দুটি কথা মনে রাখা জরুরি:

১. আপনার পিতামাতা আপনার পড়ালেখার জন্য তাদের সাধ্য অনুযায়ী সর্বচ্চ চেষ্টা করে থাকে তাই তাদের প্রতিটা টা ত্যাগকে আপনি মূল্যায়ন করবেন।

২. আপনার সৃষ্টিকর্তার নিকট আপনার ও আপনার আশে পাশের মানুষের জন্য প্রার্থনা করুন।

যাইহোক, আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে কিছু লিখলাম। আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেন না। ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনার পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার জন্য শুভেচ্ছা রইল। ভালো থাকবেন।

স্বপ্ন, লক্ষ্য এবং অর্জন
বেঁচে থাকার চাহিদা
নিজেই যখন নিজের অনুপ্রেরক
সুস্থ সম্পর্কের জন্য চাই সুস্থ মন
আত্ম-উন্নয়নের মূলঃ সময় এবং পরিবেশ
জ্ঞান সম্পদ আরোহণের ৫ (পাঁচ) মাত্রাসমূহ
দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ৭টি কৌশল!
ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা, ইতিবাচক পরিবর্তন
‘প্রশংসা’ আদান-প্রদান এবং মনের অন্তঃস্থলের অনুধাবন
আমার ব্লগ থেকে ঘুরে আসুন>>> A-1Educaiton





Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*