এবং আত্তহুতি

ওমর ফারুক কোমলঃ পৃথিবীতে বিভিন্ন কৌশলে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়ে থাকে। দেশ ও আইন অনুযায়ী সেগুলোর আবার বিভিন্নভাবে বিচারও হয়ে থাকে। তবে এক ধরণের হত্যাকাণ্ড রয়েছে যার কোন দেশেই কোন বিচার হয় না। এই অতুলনীয় হত্যাকাণ্ডের একমাত্র অস্ত্র হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ। চোখে না দেখা গেলেও এর ভয়াবহতা বড় কোন মিসাইলের চেয়েও কম নয়।

এইতো কিছু দিন আগে দেশের বহুল প্রচলিত এক পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল বের হল। প্রায় ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থীরা পাশ করল। প্রধানমন্ত্রী-শিক্ষামন্ত্রী-শিক্ষাসচিব সবাই বেশ আনন্দিত। তবে এই আনন্দের ভাগীদার কি সেই ৮৭ শতাংশ পাশ করা শিক্ষার্থীরা হতে পেরেছে? না, নিশ্চয়ই না। ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ জন শিক্ষার্থী পাশ করলেও জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন। আচ্ছা, তাহলে কি ভাবছেন এই জিপিএ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা আনন্দে রয়েছে? না, এরাও প্রকৃত পক্ষে আনন্দে নেই। এদের মধ্যে বেশির ভাগই হতাশ গোল্ডেন নামক জিপিএ৫ পায়নি বলে! আর যারা পাশই করতে পারেনি, তাদের দুঃখটা না হয় নাই ব্যক্ত করলাম।

লাখ লাখ জিপিএ৫ না পাওয়া শিক্ষার্থীর ভিতরে একজন হচ্ছে আরাফাত শাওন। ও পাশ করেছিল (বাণিজ্য বিভাগ থেকে) ৪.৮৩ পেয়ে। পরীক্ষার বহু আগে থেকেই মানুষরুপের এই ছেলেটিকে মেশিনের মত ব্যাবহার শুরু করেছিল ওর বাবা-মা। কথা একটাই, এ প্লাস তোমাকে পেতেই হবে। বিভিন্ন কোচিং সেন্টার-প্রাইভেট টিউটরের জ্বরে আক্রান্ত শাওন নিজের কিশোর কালের সকল আনন্দ মাটি চাপা দিয়ে এক ভয়াবহ প্রতিযোগিতায় নাম লেখায়। এ প্রতিযোগিতার নাম জিপিএ৫ এর প্রতিযোগিতা।

অবশেষে প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়া, বাবা-মায়ের অসহনীয় কটুকথা, এবং আত্তহুতি!

আচ্ছা, এ প্লাস(৮০%) বা জিপিএ৫ ওই যদি পরবর্তী জীবনে সফলকাম হওয়ার একমাত্র রাস্তা হয়ে থাকে তাহলে ৩৩ নম্বরে পাশ করানোর কি দরকার? সরাসরি পাশ নম্বর ৮০ হলেই তো হল। তাহলে সহজেই বোধগম্য হওয়া যাবে যে, পাশ করা ওই ছেলেটাই জীবনে বড় কিছু হবে আর যারা ফেল করবে তারা আবার জীবনে সফলকাম হওয়ার একমাত্র রাস্তায়(জিপিএ৫ এর রাস্তা) হাটার সুযোগ পেয়ে যাবে।

আফসোস, যদি আজ রবি ঠাকুর বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই স্কুল ফাঁকি দিতেন না। টমাস আলভা এডিসনও নিশ্চয়ই স্কুলের পড়ালেখায় মনোযোগ দিতেন। শচিন টেন্ডুল্কার বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করলে হয়তো এসএসসি-র পরেও পড়াশুনা করে যেতেন।

যাক, তারা জিপিএ৫ না পেয়েও জীবনে সফল। আর আরাফাত শাওনের মত ছেলের বাবা-মারাও সফল। কারন, তাদের এই অদৃশ্য হত্যাকাণ্ড তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে পারবে না কোনদিনও। তবে আরাফাত শাওনের ওই সুইসাইড নোট সারাটা জীবন ওই বাবা-মাকে বিষাক্ত সাপ হয়ে দংশন করতে থাকবে। হয়তো তখন তারা বুঝতে পারবে, জিপিএ৫ এর চেয়ে ছেলে অনেক বড় ছিল।

আরাফাত শাওন এখন না ফেরার দেশের নাগরিক। ভালোই হয়েছে, অন্তত ওই খানে ওকে মানসিক জ্বরে আক্রান্ত করে মেশিন বানানো হবে না, বানানো হবে না কোন হাল চাষের গরু।

 চলুন দেখে নেই শাওন কি লিখেছিলেন তিনি তার সু্ইসাইড নোটে…10.


11.12.13.14.1516.





Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*