ভবিষ্যতের শুরু এখানেই। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাই (আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স – এআই) বর্তমানের নতুন বাস্তবতা। আজকের দিনে বিগ ডেটা, মেশিন লার্নিং, রোবোটিকস ও আইওটির (ইন্টারনেট অব থিংস) মতো বিকাশমান প্রযুক্তিগুলোর মূল নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে এআই মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। চ্যাটজিপিটি, এআই আর্ট ও মিউজিক জেনারেটর, অটোমেডেট কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস এবং আরও নানান কিছুর মধ্য দিয়ে প্রায় সবগুলো খাতে মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ভূমিকা করছে এআই প্রযুক্তি। এআইয়ের প্রতি নির্ভরশীলতা মূলধারাকে এতো বেশি আকর্ষণ করেছে যে, একথা খুব সহজেই বলা যায় অদূর ভবিষ্যতে এআই প্রযুক্তিগত উদ্ভাবক হিসেবে ভূমিকা পালনে সক্ষমতা অর্জন করবে।
বর্তমানে যা ঘটছে তার বেশিরভাগই এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা বা টেলিযোগাযোগ খাত যাই হোক না কেন এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের উপস্থিতি যেন সর্বত্র। এখনকার বিশ্বে এআই কোথায় এগিয়ে গেছে তা সিরি ও অ্যালেক্সার মতো ভয়েস অ্যাসিসটেন্টের সহজাত ভাষা প্রক্রিয়াজাত করার সক্ষমতা আর নেটফ্লিক্স ও স্পটিফাইয়ের ব্যক্তিনির্ভর পছন্দ বাছাই করে দেয়ার মধ্য দিয়েই বোঝা যায়। বিভিন্ন খাতে অবিশ্বাস্য গতিতে ভূমিকা রাখার পর কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস খাতে খুব সুস্থিরভাবে প্রবেশ করছে এআই।
মানুষের সর্বাধুনিক কার্যকলাপকে অনুকরণ করার সক্ষমতা অর্জনের মধ্য দিয়ে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস খাতেও নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে এআই। বর্তমানে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস পণ্য নির্মাতারা এআই সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবনী পণ্য ও সমাধান তৈরি করছে, যা এই সময়ের ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে সক্ষম। ব্র্যান্ডগুলো এখন খুব সহজেই তাদের ক্রেতাদের চাহিদা সম্পর্কে জানতে পারছে আর ইনটেলিজেন্ট পণ্য, সেবা ও সমাধান নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সে তথ্য কাজে লাগাতে পারছে। এক্ষেত্রে, স্মার্ট হোম অ্যাপ্লায়েন্সের কথা বলা যায়, যেখানে এআই মানুষের দক্ষতাকে অনুকরণ করতে সক্ষম আর মেশিন লার্নিং মানুষের সাথে যোগাযোগের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ গ্রহণে সক্ষম। ডেভেলপাররা ইনটেলিজেন্ট ও ব্যক্তি-নির্দিষ্ট স্পেসিফিকেশন সহ হোম ইলেকট্রনিকস নিয়ে আসার ক্ষেত্রে এআই, মেশিন লার্নিং ও আইওটি ব্যবহার করছে।
বাজারে ইতোমধ্যে এমন রেফ্রিজারেটর চলে এসেছে যার মোড কনভার্সন , বিদ্যুৎ ব্যবহার ইত্যাদি মনিটর ও কন্ট্রোল মোবাইল দিয়ে স্মার্ট থিংস অ্যাপ এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। একই ভাবে, ওয়াশিং মেশিনের ক্ষেত্রে কাপড়ের পরিমাণ ও ধরণের ওপর নির্ভর করে ডিটারজেন্টের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে মেশিন লার্নিং।
কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকসের ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করবে এআই-সমর্থিত হোম অ্যাপ্লায়েন্স। যেমন বলা যায়, একটি স্মার্ট ভ্যাকুয়াম ক্লিনার রুমের লেআউট ম্যাপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করে নিতে পারবে ও যেকোনো জায়গা থেকে এর কাজ শুরু করতে পারবে। স্যামসাংয়ের মতো শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো ইতোমধ্যে অনেক বেশি কার্যকর, ইনটেলিজেন্ট ও পারসোনালাইজড ওয়াশিং মেশিন, রেফ্রিজারেটর, টিভি ও এয়ার কন্ডিশনার নিয়ে আসতে শুরু করেছে। এআইয়ের বিকাশের সাথে সাথে ব্র্যান্ডগুলো আরও বেশি স্মার্ট, কার্যকর ও স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক হোম অ্যাপ্লায়েন্স নিয়ে আসতে সক্ষম হবে। এ সকল ডিভাইস মানুষের জন্য একটি সামগ্রিক, টেকসই ও আরামদায়ক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।
প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে, আর মানুষের জীবন এই যুগান্তকারী পরিবর্তনের ঠিক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। ক্রেতাদের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করা ও উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজ করা থেকে শুরু করে ডেটা অ্যানালিটিকসের আধুনিকায়ন, সবক্ষেত্রেই কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস ল্যান্ডস্কেপের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে এআই। সকল খাতের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধিতে এআই আর নতুন প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে তাই এখন দেখার বিষয়।
Leave a Reply