সুন্দরবন উপকূলের যে গ্রামে নেই কোন বিদ্যালয়, ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা

গ্রামটিতে প্রায় চার হাজার মানুষের বসবাস। অথচ গ্রামে নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় বা অন্য স্কুল। বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা ভূমিও দান করেছিলেন। সেখানে ২০০১ সালে নির্মিত একটি কমিউনিটি স্কুলের ভঙ্গুর ভবনও রয়েছে। তবে বর্তমানে নেই কোন কার্যক্রম।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বারবার ধরনা দেন। তারা কেবল শুধু আশ্বাসই পেয়েছেন। বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এতে ওই গ্রামের প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে দূরবর্তী বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করছে। দূরবর্তী এলাকায় স্কুল হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার অনীহা বাড়তে শুরু করেছে দিনের পর দিন। এতে অভিভাবকরা সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন।

সম্প্রতি ওই এলাকার লোকজন এবং শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় পূর্ণ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা সহ ওই গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পাতাখালি গ্রামে বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার মানুষ বাস করেন। স্বাধীনতার পর ওই ইউনিয়নের অন্য গ্রামগুলোতে বিদ্যালয় নির্মিত হলেও আজ অবধি পাতাখালী গ্রামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি।

১৯৯৬ সালে গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ৩৩ শতক জায়গা দান করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর উদাসীনতায় আজও সেখানে কোনো বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়নি। এ কারণে গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা দূরবর্তী ও পাশ্ববর্তী ইউনিয়নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দূরবর্তী দক্ষিণ বেদকাশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চোরামুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে লেখাপড়া করছে।

গ্রামের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, তাদের গ্রামে কোনো বিদ্যালয় নেই। এতে তারা কষ্ট করে পাশের গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে লেখা পড়া করছে। গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায় আমাদের অনেক সহপাঠী দূরের স্কুলে যায় না। অনেকে লেখাপড়াও ছেড়ে দিয়েছে। আমরা আমাদের গ্রামে একটি বিদ্যালয় চাই। লেখাপড়া শিখে আমরা বড় হতে চাই।

ওই স্কুলটির জমি দাতা হায়দার মল্লিক ও ইয়াকুব মল্লিক বলেন, ‘বয়স অনেক হলো। বৃদ্ধ হয়ে গেছি। নিজেদের জায়গা জমি কম তবুও গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ৩৩ শতক জমি দান করেছি। অনেক মানুষের দ্বারে-দ্বারে গেছি। তারা শুধু আশ্বাসই দিয়েছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মৃত্যুর আগে এই গ্রামে একটি বিদ্যালয় দেখে যেতে চাই। এব্যাপারে সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম কিবরিয়া বলেন, গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায় আমার সন্তান সহ গ্রামের অনেক শিশু-কিশোর দূরে খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করছে। অনেকে ঝরে পড়ছে। শিক্ষার অভাবে শিশু-কিশোর ও যুব সমাজ বিপদগামী হচ্ছে। পাতাখালি গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন হলে সু-শিক্ষা গ্রহণ করে একটি সুন্দর সমাজ গঠন করতে পারবে এলাকার শিশু-কিশোররা।

এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, পাতাখালি গ্রামে একটি স্কুল প্রয়োজন। যে প্রকল্পের আওয়ায় অনেক আগে একটা কমিউনিটি স্কুল ছিল, সেই প্রকল্পটি এখন বন্ধ আছে। ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোকনুজ্জামান বলেন, পাতাখালি গ্রামে বিদ্যালয় নেই। বিষয়টি আমি পূর্বে অবগত ছিলাম না। আমি এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে প্রত্যেক গ্রামেগঞ্জে নতুন ভবন নির্মাণ ও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে, সরকারিকরণের আওতায় এনে শিক্ষার মান উন্নয়নে দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করছে। আমি মাননীয় শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসাবে সুন্দরবন কোল ঘেঁষা দক্ষিণ বেদকাশি ওই গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অতি দ্রুত বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য অবহিত করবো।





Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*