ছেলেটির নাম জাহিদুল ইসলাম।বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার বদলপুর গ্রামে।পাঁচটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের মত তারও জন্ম হয়েছিল একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে। ছেলেটির পরিবারের আর্থিক অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। বাবা ছাড়া সন্তান, মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা টাকা রোজগার করতো তাতেই কোনো রকমে চলে যেত সংসার।ছেলেটি যে গ্রামে বসবাস করতো সেখানের কেও শিক্ষিত ছিলনা। কিন্তু ছেলেটির মা তার লেখাপড়ার বিষয় অনেক সিরিয়াস ছিল। ছেলেটিও চাইতো কোনো ভালো বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে। ছোটবেলা থেকে ছেলেটির স্বপ্ন ছিল সে ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি হবে। কিন্তু কি আর করা একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হয়ে শহরের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াটা শুধুমাত্র তার জন্য স্বপ্ন,যা পূরণ হবার নয়।
স্কুল জীবনের ৮ বছর শেষ করার পর ছেলেটির মায়ের জটিল রোগ হয়। একইসাথে পরিবারের আর্থিক দিক ক্রমশ খারাপের দিকে যেতে থাকে। তখন ছেলেটি ভাবলো, এখন সময় এসেছে তার নিজের কিছু করার, এভাবে আর কতদিন এইভাবে চলবে। ছেলেটি চাকরির খোঁজে বেরিয়ে পড়লো। কিন্তু একজন জেএসসি পাস ছেলেকে কে চাকরিতে রাখতে চাইবে। তবুও সে নিজের উপরে আত্মবিশ্বাস রেখেছিল, এবং এক জায়গায় জোএসসি পাস ছাত্র চাকরিতে নিচ্ছে শুনে সে ইন্টারভিউ দিতে চলে যায়। ছেলেটির জীবনের প্রথম ধাক্কা সেখানে খেলো। ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করা হয় ফরেন ক্লায়েন্টদের ইংরেজিতে ম্যানেজ কিভাবে করবে সে। সে কোনো জবাব দিতে পারেনা। কারণ সে ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রছাত্রীদের মত ইংরেজিতে ততটা ভালো ছিলনা। তার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল বিদায় সে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়তে পারিনি।
একে একে অনেকগুলো ইন্টারভিউ সে দিয়েছিল, কিন্তু প্রত্যেকটিতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে,আসে। একদিন সে তার মা কে বললো ‘আমি ব্যর্থ মা’ তখন তার মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, ব্যর্থতার পরেই সফলতা আসে। জীবন এক প্রকার যুদ্ধের মত, যেখানে আমাদের প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বেছে থাকতে হয়। মার কথা শুনে ছেলেটির ভাবতে লাগলো, যুদ্ধের জন্য অস্ত্রের প্রয়োজন হলে জীবন যুদ্ধে কি প্রয়োজন হতে পারে? তখন তার মাথায় আসলো সে কেন রিজেক্ট হচ্ছে বার বার সে প্রশ্নটি। যখন সে বুঝতে পারলো যে তার ইংরেজির দুর্বলতাই তার ব্যর্থতা মূল কারণ। তখন সে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ইংরেজিকে ধরে নিল।
কোনো ইংলিশ মিডিয়ামে না পড়ে, বাড়িতেই চর্চা করতে থাকে সে। দিন রাত সে ইংরেজি শেখার চেষ্টা করে। শত বাধা বিপত্তি পার করে সে তার কাঙ্খিত লক্ষে পৌছে যায়। একটা সময় সে ইংরেজিতে খুব দক্ষ হয়ে যায়। সে আবারও প্রথম রিজেক্ট করা কোম্পানির কাছে গেলো চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। তখন তাকে আবারও একই প্রশ্ন করা হয়। তার জবাবে সে বললো,” ক্লায়েন্ট ম্যানেজ করতে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ার প্রয়োজন হয়না স্যার, চেষ্টা করলে যেকোনো ভাষা শেখা যায় এবং সেটির ভালো প্রয়োগ করা যায়। এভাবেই একটি জবাব দেয় ছেলেটি।তখন ইন্টারভিউ স্যার তার কথা শুনে অবাক হয়েছিলেন, এবং তারা তাকে চাকরি দিয়েছিল। পরিশেষে হাজার কষ্ট, বাধা-বিপত্তির পর সে চাকরি পেয়ে তার মা কে নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। তাদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘট।
গল্পটি যারা বার বার জীবনে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে, সফলতার মুখ দেখতে পারছে না এবং যারা ইংরেজিতে কোনো ভাবেই উন্নতি করে পারছে না তাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয়। আশা করছি আপনাদের ভালো লেগে থাকবে, শেষ করছি এইটুকুতেই,ভালো থাকবেন।
Leave a Reply