২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রবাসী শ্রমিক আয় হতে দেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের মোট পরিমাণ ছিলো ২৪.৭৭ মার্কিন ডলার। মহামারী-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিতিশিলতা বিবেচনায়, এই বিপূল রেমিট্যান্স আয় বাংলাদেশের জন্য একটি রেকর্ড। বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২২ অনুযায়ী, বৈদেশিক শ্রমবাজারে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে ৬ষ্ঠ স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক-এর তথ্যমতে দেশের জিডিপি’র প্রায় ১২ শতাংশ আসে সারা বিশ্বে কর্মরত প্রায় ১০ মিলিয়নেরও বেশী প্রবাসী বাংলাদেশীর উপার্জিত অর্থ থেকে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হলে অবশ্যই এর সাথে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহের টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে।
পূর্ব-এশীয় দেশ সহ অন্যান্য আরও দেশে বাংলাদেশীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হচ্ছে, যা আশা যোগাচ্ছে। তবে, প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের দক্ষতার অভাবের কারণে, তাদের গড় আয় ভারত, চীন ও ফিলিপাইনসের প্রবাসী শ্রমিকদের তুলনায় অনেক কম,। শ্রমিকপিছু রেমিট্যান্স প্রবাহ হিসেবে, বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকদের উপার্জন বিশ্বের অন্যান্য যে কোন দেশের শ্রমিকদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম, যার অন্যতম কারণ সঠিক দক্ষতার অভাব। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকদের আয় বৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের একটি টেকসই ভিত গড়ে তুলতে বিদেশমুখী জনশক্তির দক্ষতা উন্নয়ন একান্ত জরুরী।
বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে দক্ষ কর্মীর চাহিদা মেটানোর এক সুবর্ণ সুযোগ আছে। দেশের জনশক্তির নিয়োগযোগ্যতাকে আন্তর্জাতিক মানে রুপান্তরের মাধ্যমে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফরেন এমপ্লয়মেন্ট কাউন্সিল (বিফেক)। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে, বিফেক প্রবাসী শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন ও বিকাশে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অধীনে বিফেক একটি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়াসহ অন্যান্য দেশে গমনকারী প্রবাসী শ্রমিকদের স্থানীয় ভাষা দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
প্রেরণা ফাউন্ডেশন, একটি সমাজকল্যানমূলক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান-এর সাথে যৌথ উদ্যোগে বিফেক কোরীয় ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এই কার্যক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়াগামী বাংলাদেশী শ্রমিকদের কোরীয় ভাষা প্রশিক্ষণ দেয়া। এর মাধ্যমে, কোরিয়া সরকারের এমপ্লয়মেন্ট পারমিট স্কীম (ইপিএস) কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য কাজের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। প্রাথমিকভাবে ২০জন প্রশিক্ষার্থী নিয়ে এই কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে।
কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানদ্বয়ের বিশ্বাস, এই ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম দেশের প্রবাসী শ্রমিকদের উচ্চ উপার্জনক্ষম করে তুলে, দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। প্রশিক্ষন শেষে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাভূক্ত বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিঃ (বোয়েসেল)-এর মাধ্যমে, প্রশিক্ষিত কর্মীদের দক্ষিণ কোরিয়া পাঠানো হবে।
শাব্বির আহমদ চৌধুরী, সচিব (পশ্চিম), পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, বলেন, “ভাষার জ্ঞানটাকে যদি যথাযথ মাত্রায় উন্নীত করতে পারি, তাহলে প্রবাসী শ্রমিকদের আয় বৃদ্ধি হবে, এবং পাশাপাশি রেমিট্যান্স থেকে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভও বৃদ্ধি পাবে।“
শেহ্জাদ মুনীম, সদস্য, অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল, প্রেরণা ফাউন্ডেশন, বলেন “আমরা একটি ইকোসিস্টেম তৈরী করতে চাচ্ছি যার মাধ্যমে আমরা সকলে একত্রে কাজ করতে পারি, এবং রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারি।“
এম নাঈম হোসেন, সভাপতি, বিফেক, বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি, বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষন—ভাষা শিক্ষা, হসপিটালিটি সার্ভিস, টেকনিক্যাল স্কিল, ইত্যাদি—পরিচালনা করা যার মাধ্যমে এই শ্রমিকদের দক্ষতার বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।“
সম্প্রতি “কোরীয় ভাষা শিক্ষা” কার্যক্রমের যাত্রা শুরু উপলক্ষে একটি সফট লঞ্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষন কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা উপস্থাপন করেন শেখ শাবাব আহমেদ, পরিচালক, গভর্নিং বডি, প্রেরণা ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শাব্বির আহমদ চৌধুরী, সচিব (পশ্চিম), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; এম নাঈম হোসেন, সভাপতি, বিফেক; শেহ্জাদ মুনীম, সদস্য, অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল, প্রেরণা ফাউন্ডেশন; মোঃ মিয়ারুল হক, কান্ট্রি ম্যানেজার, ডিএইচএল এক্সপ্রেস বাংলাদেশ; ড. রিয়াদ মামুন প্রধানী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কান্ট্রি প্রেসিডেন্ট, নোভারটিস (বাংলাদেশ) লিমিটেড; মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, রবি আজিয়াটা লিমিটেড; কাজী এম শাহেদ, সিইও, জুনোকস; জারা মাহবুব, সিইও, ডান অ্যান্ড ব্র্যাডস্ট্রিট বাংলাদেশ; বনানী বিশ্বাস, মহাব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল); তারেক
রাফি ভূঁইয়া, মহাসচিব, জাপান বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি (জেবিসিসিআই)। এছাড়াও, ভার্চুয়াল মাধ্যমের ব্যবহারে এ অনুষ্ঠান আরও উপস্থিত ছিলেন মোঃ নজরুল ইসলাম, মান্যবর রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশ দূতাবাস, ইথিওপিয়া, এবং জাভেদ আখতার, সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড।
Leave a Reply