করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগামী ৩০ মার্চ থেকে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার ঘোষণা রয়েছে। তবে সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ ফের বেড়ে যাওয়ায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার পরিকল্পনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আপাতত আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত স্কুল-কলেজের ছুটি বাড়তে পারে বলে মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে দু-এক দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত আসছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গতকাল বুধবার রাতে জনপ্রিয় একটি সংবাদ মাধ্যম (কালের কণ্ঠকে) বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এখনো সেটাই অগ্রাধিকার পাবে। আর যেহেতু পুনরায় করোনার সংক্রমণ বেড়েছে, তাই দু-এক দিনের মধ্যেই স্কুল-কলেজ খোলার ব্যাপারে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।’
সূত্র জানায়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আন্ত মন্ত্রণালয় সভা শেষে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন করোনার নমুনা শনাক্তের হার ছিল ৩.৩০ শতাংশ। কয়েক দিন ধরে প্রতিদিনই শনাক্তের হার বাড়ছে। গতকাল এই হার ছিল ১২.৯৪ শতাংশ। কভিডসংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ ছিল, করোনার নমুনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা করার। সে হিসাবে বর্তমানে স্কুল-কলেজ খোলার সম্ভাবনা নেই।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর ব্যাপারে এরই মধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা শুরু করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে গতকালের আলোচনায় আগামী ৩০ মার্চ স্কুল-কলেজ না খোলার ব্যাপারে প্রায় সবাই সম্মত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবারও ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠানমালা চলছে। শিক্ষামন্ত্রী এই অনুষ্ঠানমালা আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। এর ফাঁকেই আলাপ শেষে বা অনুষ্ঠানমালা শেষ হলে স্কুল-কলেজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
জানা যায়, আগামী ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় শবেবরাতের ছুটি ২৯ মার্চ ছিল। এরই মধ্যে এক দিন পিছিয়ে ৩০ মার্চ সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সে হিসাবেও আগামী ৩০ মার্চ স্কুল-কলেজ খোলার সুযোগ নেই।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আগামী ১৫ এপ্রিল রোজা শুরু হতে পারে। সাধারণত রোজার মাসে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকে। এ ছাড়া ঈদের ছুটির পর ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৭ মে থেকে হল খোলার ঘোষণা দেওয়া আছে। সে ক্ষেত্রে আগামী দিনে করোনার সংক্রমণ কমে গেলে ঈদের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেই স্কুল-কলেজ খোলা হতে পারে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সম্প্রতি ১২ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্কুল-কলেজের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেগুলো বন্ধ আছে সেগুলো বন্ধ রাখতে হবে। অন্যান্য কার্যক্রম সীমিত রাখতে হবে। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষা (বিসিএস, এসএসসি, এইচএসসি, দাখিলসহ অন্যান্য) বন্ধ রাখতে হবে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মচারী, অভিভাবকসহ সবার স্বাস্থ্যঝুঁকি, সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। এটা (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত) রিভিউ করা হতে পারে। সংক্রমণ বেড়ে গেলে তারা হয়তো এটাকে রিভিউ করবে।’
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মো. জিয়াউল কবির দুলু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় ঘোষিত তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করছে। তাই আমরা জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।’
সুত্রঃ কালেরকণ্ঠ
Leave a Reply