বাংলাদেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য পাঁচ বছর আগে করা বিধিমালাটি সংশোধনের কাজ শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, বিদ্যমান বিধিমালাটি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দিতে ইউজিসির একজন সদস্যের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। শনিবার (২৫ মে) প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোশতাক আহমেদ।
বর্তমানে দেশে ১০৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। ইউজিসি ও শিক্ষাবিদদের মূল্যায়ন, বড়জোর ২০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভালোভাবে বা মোটামুটিভাবে চলছে। বাকিগুলো কোনো না কোনোভাবে আইনের শর্ত ভঙ্গ করছে। এ ছাড়া অবৈধভাবে কিছু বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমও নানা কৌশলে চলছে। ইউজিসি বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে চলা ৫৬টি বিদেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছিল।
শিক্ষাবিদদের পরামর্শ ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে নামকরা ও ভালো মানের কিছু বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস চালু করে দেখা যেতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই ঢালাও দেওয়া যাবে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সূত্রমতে, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে ‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা ছক’ জারি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর ২০টির বেশি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার চালুর আবেদন করে। যার মধ্যে ইউজিসি তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে ইতিবাচক সম্মতি দেয়। কিন্তু তখন ওই বিধিমালার বেশ কিছু বিধান এমনভাবে ছিল যার সুযোগ যেনতেন বিশ্ববিদ্যালয়ও শাখা খোলার সুযোগ পেত। আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকেও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস চালু না করতে নানামুখী চাপ ছিল। এ রকম পরিস্থিতিতে তখন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা চালুর অনুমোদন দেওয়া বন্ধ করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত এপ্রিলে এ বিষয়ে একটি সভা করেন। সেখানে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়। এরপর বিদ্যমান বিধিমালাটি সংশোধন করতে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক আখতার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী ও ইউজিসির সচিব মো. খালেদ। ইতোমধ্যে কমিটি সভা করেছে। তাদের এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে কমিটি সময় বাড়ানোর আবেদন করবে বলে জানা গেছে।
ইউজিসি সূত্র জানায়, কমিটি প্রাথমিকভাবে বিদ্যমান বিধিমালার কিছু ত্রুটি চিহ্নিত করেছে। যেমন একটি ধারায় বলা আছে, এই বিধিমালা জারির আগে স্থাপিত ও পরিচালিত সব শাখা ক্যাম্পাস ও স্টাডি সেন্টারকে বিধিমালা জারির তারিখ থেকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পরিদর্শন ফি দাখিল করতে হবে। আবার আরেকটি ধারা অনুযায়ী, ইতোপূর্বে কোনো শিক্ষার্থী কোনো শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টারে পরীক্ষা দিয়ে ডিগ্রি, ডিপ্লোমা বা সনদ পেলে সেগুলোর প্রত্যয়নপত্র দেবে ইউজিসি।
বিধিমালা পর্যালোচনা কমিটির প্রধান অধ্যাপক আখতার হোসেন বলেন, শিক্ষার গুণগত মান বিবেচনা করে জাতির বৃহৎ স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই বিধিমালার দুর্বলতা দূর করতে কাজ করছেন তারা।
ক্যাম্পাস খুলতে যা লাগবে
বিদ্যমান বিধিমালা অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসের সাময়িক অনুমোদনের জন্য নিজস্ব অথবা ভাড়া করা ভবনে কমপক্ষে ২৫ হাজার বর্গফুট জায়গা থাকতে হবে এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্থান সংকুলান হয়, এমন পর্যাপ্ত পরিমাণ শ্রেণিকক্ষ থাকতে হবে। স্টাডি সেন্টারের জন্য নিজস্ব অথবা ভাড়া করা ভবনে কমপক্ষে ১০ হাজার বর্গফুটের জায়গা থাকতে হবে। এ রকমভাবে ১৫টি শর্ত পূরণ করতে হবে।
শাখা ক্যাম্পাসের সাময়িক অনুমতিপত্রের জন্য ১০ লাখ টাকা ও স্টাডি সেন্টারের জন্য ৩ লাখ টাকা ফি দিতে হবে। এ ছাড়া শাখা ক্যাম্পাসের জন্য ৫ কোটি টাকা ও স্টাডি সেন্টারের জন্য ১ কোটি টাকা তফসিল ব্যাংকে সংরক্ষিত তহবিল হিসেবে জমা (স্থায়ী আমানত) রাখতে হবে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় এককভাবে বা স্থানীয় প্রতিনিধি অথবা দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তা যৌথভাবে শাখা খুলতে পারবেন।
ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, যারা প্রতিষ্ঠিত, গুণগত মান নিয়ে কোনো আপস নেই, নিজ দেশেও যাদের সুনাম আছে, সে রকম বিশ্ববিদ্যালয় যদি সব শর্ত পূরণ করে আসতে চায়, তাহলে অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই কোনো অখ্যাত প্রতিষ্ঠান যেন না আসতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
Leave a Reply