সময় পরিবর্তনশীল। তার থেকেও বেশী পরিবর্তনশীল “মানুষ”। ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় মনে হতো কবে বড় হব। কারন বড়রা কত স্বাধীন। ক্লাস টেনে পড়ার সময় নিজেকে অন্য লেভেলের বড় মনে হতো। সাইকেল নিয়ে ঘুরতে ভালো লাগতো। বয়সে একটু বড় মেয়েদের বেশী ভালো লাগতো তাদের শারীরিক সৌন্দর্যের কারনে। কিন্তু ভালবাসতে ইচ্ছে হতো পারার সমবয়সি কোন মেয়েকে। ভালবাসার মানুষকে ইমপ্রেস করার জন্য তার পিছু পিছু সাইকেল চালিয়ে ফলো করা আর মনে মনে তার একবার দৃষ্টি নিক্ষেপের আকাঙ্ক্ষাকে জয় করাই ছিল তখনকার সময়ে সফলতা।
জীবনের প্রতি স্টেজে আপনার রুপান্তর হবে। কিন্তু আপনার একটি লক্ষ্য কখনই পরিবর্তন হয়নি আর হবেও না। আর তাহলো জীবনে সফল হতে হবে। আর এই সফলতার মাপকাঠি হচ্ছে একটি ভালো চাকরি। আর সরকারী চাকরি হলেতো কথাই নেই।
আচ্ছা একবার ভেবে দেখেছেন কি- একজন চাকরিজীবী আর একজন কাজের বুয়ার ভিতর কোন পার্থক্য আছে কি?
আপনার কি মাথা খারাপ নাকি, কিসের সাথে কিসের তুলনা করছেন! এটাইতো ভাবছেন, তাই না?
আমার কি মনে হয় জানেন একজন চাকরিজীবীর থেকে একজন বুয়া অনেক স্বাধীন। কিছুদিন আগে আমাকে একজন গল্প করছিল, সে তার বাসার কাজের বুয়াকে জিজ্ঞেস করছিল- বুয়া, তোমার ছেলেকে কি বানাতে চাও?
বুয়া উত্তরে বলেছিল- সিএনজি ড্রাইভার। কারন, তার ইচ্ছেমত সে ট্রিপ দিবে। ভালো লাগলে যাত্রী তুলবে আর ভালো না লাগলে মুখের উপর যাত্রীকে না বলে দিবে।
এবার আসি চাকরিজীবীদের কথায়। আচ্ছা একজন চাকরিজীবী কি চাইলেই অফিস কামাই দিতে পারবে? চাইলেই কি সে তার ক্লায়েন্টকে মুখের উপর না করতে পারবে?
পারবে না। কারন সে একজন চাকর। সে কেবলমাত্র হুকুমের গোলাম।
একজন বুয়াকে আমরা যেমন বাসার গৃহস্তালি কাজে খাটাই একজন চাকরিজীবীকেও তেমনি চাকরিদাতা নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী খাটায়।
এবার আশাকরি আপনার রাগ কিছুটা কমেছে।
আমার বাসার গলির মুখে একজন চটপটিওয়ালা আছে। যে সাধারণত আসর নামাজের পরে তার দোকান চালু করে এবং রাত ১০ টা অব্দি বিক্রি করে। মাঝে মাঝে দোকান খুলে না। সে কিন্তু চাকরিজীবী না। দোকানওয়ালা। কিন্তু তার যে স্বাধীনতা আছে, তার যে ফ্যামিলি লাইফ আছে আপনার কি তার ছিটেফোটাও আছে?
নেই। আপনি কি এই জীবন চেয়েছিলেন? যে মায়ের অসুস্থতার জন্য ছুটি নিতে বসের কাছে গিয়ে কাচুমাচু করে ছুটি ভিক্ষা করতে হবে? এটাই কি আপনার জীবনের সফলতা?
বিশ্বাস করুন, আমি চটপটিওয়ালাকে যতটা সম্মান করি তার ছিটেফোঁটাও একজন চাকরিজীবীকে করি না। কারন সে একজন উদ্যোক্তা। সে একজন ব্যবসায়ী।
আমাদের দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি চাকরি মানে লাইফ সেট। অথচ আপনি এমন একজনের অধীনে কিংবা এমন একজন ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন যে কিনা শিক্ষাগত যোগ্যতায় আপনার থেকে অনেক অনেক নিচে। বিশ্বাস করেন আপনি নিজেকে হারিয়ে খুজবেন। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে।
অফিসের টাকায় ফাইভ স্টার হোটেলে বুফে খাওয়ার ভিতর সফলতা নির্ভর করে না। নিজের টাকায় টং দোকানে চায়ের কাপে চুমুকের ভিতরই আসল সফলতা।
লোকে আপনাকে চাওয়ালা বলবে। বলুক। তাতে কি যায় আসে। ওই লোকই কিন্তু আড়ালে আপনাকে নিয়ে গল্প বলে- জানিস আমাদের এলাকায় এক চাওয়ালা মাসে ৩০ হাজার টাকা রোজগার করে। আর আমি মাস্টার্স পাস করেও ১০ হাজার টাকার একটা চাকরি জোগার করতে পারছি না।
আমরা অন্যের সফলতা দেখে নিজের সফলতাকে “সেট” করি। যেটা খুব অন্যায়।
এই লেখাটা লিখতে বসেছিলাম একটি উদ্দেশ্য নিয়ে। এইসএসসি পাশ করে, ভর্তি যুদ্ধে নিজের সাধআল্লাধকে বিসর্জন দিয়ে একজন ছাত্র/ছাত্রী ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। আর ভর্তি হয়েই সে ক্লাস বাদ দিয়ে বিএসএস কোচিংয়ে ক্লাস শুরু করে। নিজের মেধাকে কবর দেবার রাস্তা পরিষ্কার করার এ এক আজব ব্যবস্থা।
ভারতের সুন্দর পিচাই গুগলের সিইও। আর আমরা “বিএসএস ক্যাডার” হয়ে ভাব নিয়েই সন্তুষ্ট।
সামনে এস এস সি ফলাফল প্রকাশ পাবে। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রি এ+ এর খপ্পরে পড়বে যা আদতেই তার ব্যক্তি জীবনে চার পয়সার মূল্য রাখবে না।
তাই যারা এ+ পাবে না তাদের ভাবার কোন কারন নেই যে তুমি সফল হতে পারলে না। সফলতা নির্ভর করবে আজ থেকে ১০ বছর পর তুমি নিজেকে কোথায় দেখতে চাও তার উপর।
সবার ভালো ফলাফল প্রত্যাশা করছি।
কাউকে ছোট করার উদ্দেশ্যে এই লেখা নয়। বরং ভবিষ্যতের বিল গেটস, জ্যাক মা, স্টিভ জবস হবার স্বপ্ন জেনো দেখতে পাও সেই উদ্দেশ্যেই এই লেখা।
যেকোনো ধরনের মতামত আশা করছি।
Leave a Reply