
আপনি যদি একজন সচেতন নাগরিক হয়ে থাকেন, যদি চোখ কান খোলা রেখে পথ চলেন তাহলে আজকে যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবো তা নিয়ে আপনি ইতোমধ্যে চিন্তিত। খেয়াল করলে দেখবেন মানুষগুলো দিনে দিনে কেমন যেন হিংস্র হয়ে উঠছে। কেউ কেউ অনেক বেশি প্রতিক্রিয়াশীল অন্যদিকে কেউ কেউ খুব বেশি পরিমাণে নির্লিপ্ত। মানুষের মধ্যে ভীষণ অস্থিরটা, যেন রেসের মাঠে তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে- জিততেই হবে।
আপনি যদি ঠিক কিছুটা সময় পেছনে ফিরে তাকান দেখবেন, আমরা এতটা বিশৃঙ্খল ছিলাম না। আমাদের ভেতর নীতি, আদর্শ ও শিক্ষার একটা চর্চা ছিল। মূল্যবোধ ছিল।
সম্প্রতি একটি Bangla online portal গবেষণায় সামনে নিয়ে এসেছে এমন কিছু ইস্যু যা শুনে সত্যি ঘাবড়ে যাবার যথেষ্ট কারণ আছে। বর্তমানে অস্বাভাবিকভাবে নানান সঙ্কট ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে মানুষ, কারণে অকারণে মানুষ রেগে যাচ্ছে। সামান্য স্বার্থে মানুষ মানুষকে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করছে।
এর শেষ কোথায়? আমাদের প্রজন্ম কোন দিকে যাচ্ছে? আমাদের সমস্যা কোথায়?
হ্যাঁ। আমাদের আসলেই অনেক সমস্যা। ভেবে দেখুন, আমি বা আপনি কোন না কোন মানুষ দ্বারা যেমন নিষ্পেষিত হচ্ছি প্রতিদিন, তেমনি সুযোগ এলে আমি বা আপনিও তুলনামুলকভাবে দুর্বল কারো উপর ঝাপিয়ে পড়ে নিষ্পেষিত করে নিজের ক্ষোভ মেটাচ্ছি।
মোটাদাগে যে সমস্যাগুলো নিয়ে তরুণ প্রজন্মের অস্থিরতা সেগুলো নিয়েই আজ কথা বলবো।
১. হতাশা
এই প্রজন্ম হতাশ। হতাশার একটি বড় কালো পোশাক এসে ঘিরে ধরেছে এই প্রজন্মকে। কেন মানুষ এতো হতাশ একবার ভেবে দেখেছেন? আমার ধারণা প্রযুক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার, সোশ্যাল মিডিয়ার আধিপত্য এবং এসবের প্রভাবে আমাদের নৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া।
আমরা অন্যকে দেখে হতাশ হচ্ছি- না জেনেই, না বুঝেই ধরে নেই- সে আমার চেয়ে ভাল আছে। আমরা অনেক বেশি তুলনা করছি নিজেকে অন্যদের সাথে। অথচ দেখুন মানুষ শুধু ভাল এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে। তার খারাপ সময়ের কথা আমরা কেউ জানি না।
২. ম্যাটেরিয়ালিজম
ম্যাটেরিয়ালিজম হচ্ছে বর্তমান সময়ের অন্যতম একটি বড় সঙ্কট। এর অর্থ হচ্ছে মানুষ ব্যক্তি বা সম্পর্কের চেয়ে বস্তুগত বিষয়গুলোতে অনেক বেশি সিরিয়াস। তারা মানুষকে যতটা না ভালবাসে তার চেয়ে বেশি ভালবাসে প্রযুক্তি যেমন- কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ইত্যাদিকে।
৩. যৌন কার্যক্রম
এখনকার সময়ে অনেক বড় একটি সমস্যা এটা। খুব কম বয়সেই ছেলেমেয়েরা অনেক কিছু শিখে ফেলছে। ফলে অল্প বয়সে ওরা যৌনতায় আসক্ত হয়ে উঠছে যেটা মোটেও ভাল কোন সংকেত বয়ে আনছে না।
৪. মাদক
তরুণ প্রজন্ম যেহেতু ব্যক্তি বা মানুষের সাথে সম্পর্কের চেয়ে বস্তুতে বেশি আসক্ত, স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে তৈরি হয় এক অস্বাভাবিক একাকীত্বের যন্ত্রণাবোধ। যার ফলে ওদের হতাশা তৈরি হচ্ছে। আর এই হতাশা তাদের ধাবিত করছে মাদক ও অন্যান্য নিকৃষ্ট কাজে।
৫. একাডেমিক সমস্যা
বাবা মা সন্তানদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজেদের ইচ্ছায় তাদের সন্তানদের পড়ান। ছেলেমেয়েরা তাদের পছন্দের বিষয়ে না পড়ে পড়ছে বাবা মায়েদের ইচ্ছা পুরনের বিষয়ে। অন্যদিকে বাংলাদেশের একাডেমিক সিস্টেম কখনোই ছাত্রছাত্রীদের মানসিক বিকাশের পথে অনুকুলে নয়। ফলে এই সমস্যার জন্য তারা ঠিকমতো পড়াশুনা করতে পারছে না। রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে।
৬. সোশ্যাল মিডিয়া
বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া একটা ভয়ংকর থ্রেড। তরুণ প্রজন্ম তাদের পুরোটা সময় ব্যয় করছে সোশ্যাল মিডিয়ার পেছনে। তারা একটি ভাল বই, খেলাধুলা ইত্যাদির চেয়ে ব্যস্ত ভাইরাল ভিডিও দেখতে, গসিব করতে।
৭. ভায়োলেন্স
খেয়াল করলে দেখবেন এখনকার তরুণরা অনেক বেশি বিশৃঙ্খল। তারা কথায় কথায় রেগে যাচ্ছে, সম্মানিত মানুষকে সম্মান দিতে জানে না তারা। তারচেয়েও বড় ব্যাপার খুব ছোটখাটো ব্যাপারেই ওরা অনেক বেশি ভায়োলেন্স তৈরি করছে।
পরিশেষে এটাই বলতে চাই, আমাদের উচিত ওদের পাশে থাকা। ওদের সমস্যাগুলো বোঝা এবং সেই অনুয়ায়ি সাপোর্ট দেওয়া। মনে রাখবেন আপনি সোশ্যাল মিডিয়াকে, ইন্টারনেটকে বাদ দিতে পারবেন না। কিন্তু আমাদের দরকার একটু সচেতনতা। রাগ বা শাসন করে যা না অর্জন করা যায় তারচেয়ে বেশি বুঝিয়ে পাওয়া যায়। ওদের পাশে থাকুন, ভালবাসুন।
Leave a Reply