জেনে নিন মানসিক সুস্থতার জন্য করনীয় কি?

ক্যারিয়ার কিংবা স্বপ্নের পেছনে ছুটতে ছুটতে আমরা অনেক সময় তীব্র মানসিক অস্থিরতায় নিমজ্জিত হই,যার সমাধানের পথ খুজে বের করা দুষ্কর হয়। এসময় অনেকেই নিজেকে গুটিয়ে একা একা থাকেন যার ফলে সে অধিক হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। খাওয়া-দাওয়ার রুচি কমে যায়, অল্পতেই মেজাজ বিগড়ে যায় এবং কেউ কেউ এই হতাশা সহ্য করতে না পেরে জীবনের চরম সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেলে যার দরুন একটি সুস্থ,সুন্দর ও সম্ভাবনাময় জীবনের ইতি ঘটে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ১০ ই অক্টোবরকে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ঘোষণা করা হয়েছে।প্রকৃত সফলতা কিংবা প্রশান্তি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। তাই মানসিক ভাবে সুস্থ্য থাকতে হলে নিম্নলিখিত উপায়গুলো অবলম্বন করা যেতে পারেঃ

১।দিন শুরু করুন ধ্যানের মধ্য দিয়েঃ বলা হয়ে থাকে সকালের সূর্য দেখেই বলা যায় দিনটি কেমন যাবে। সুতরাং দিনের শুরুটা করা উচিত সর্বোত্তম কাজ দিয়ে।ইসলাম ধর্মে মুসলিমদের জন্যে ফজর নামাজ রাখা হয়েছে মূলত সে জন্যই। সর্বোৎকৃষ্ট দিনের শুরুটা হবে তখনই যখন আপনি আপনার দিনটি ফজরের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে শুরু করবেন এবং এটিই সর্বোত্তম মেডিটেশন বা ধ্যান।

২। সকালে ৩০ মিনিট হাঁটুনঃ সকাল বেলা কিছু সময় পৃথিবীতে বেহেশতের সুবাতাস প্রবাহিত হয় যা আর অন্য সময় পাওয়া যায় না। তাই এই সময়ে যারা হাঁটাহাঁটি কিংবা হালকা জগিং করতে পারেন তারা অধিক জীবনীশক্তি এবং স্ফূর্তি লাভ করেন।সুতরাং দিনে কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটুন সমস্ত পেরেশানি দূর করুন।

৩। প্রিয়জনদের সময় দিনঃ প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আমাদের যোগাযোগ সহজ করলেও এতে বেড়ে গেছে আপনজনদের সাথে দূরত্ব। যেই সময়টায় আপনি হয়ত আপনার বাচ্চা ছেলেটাকে আদরযত্ন করতেন অথবা বন্ধুদের সাথে চা খেতে যেতেন সে সময় হয়ত আপনি ফেসবুকিং,খেলা কিংবা সিরিয়াল দেখে কাটিয়ে দিচ্ছেন যা সাময়িক সুখ দিলেও দীর্ঘস্থায়ী দুঃখের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বাবা-মা,বন্ধু-বান্ধবদের সময় দিন এবং তাদের সাথে সমস্যা শেয়ার করুন।

৪। অবসরে পছন্দের কাজ করুনঃ অবসর সময়ে অলসভাবে শুয়ে কিংবা টিভি দেখে পার না করে আপনার পছন্দের কাজ করুন। হতে পারে সেটা ড্রয়িং কিংবা ডিজাইন কিংবা ভিডিও/ফটো এডিটিং,বই কিংবা ম্যাগাজিন পড়া। এসব কাজের দ্বারা যেমন আপনার সময় ভালভাবে কাটবে তেমনি আপনার ক্যারিয়ারও হবে স্মার্ট এবং স্মুথ,মাঝখান থেকে আপনার দুশ্চিন্তা দূর হবে। এককাজে দুই কাজ হয়ে গেল।

৫।হাসুন প্রান খুলেঃ জীবনে যতই দুঃখ, যন্ত্রণা, কষ্ট থাকুক না কেন হাসুন।পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর মুখ হল হাসিমাখা মুখ।এমনভাবে হাসুন যেন আপনার হাসি দেখে অন্য মানুষের কষ্ট কমে যায়।তবে অবশ্যই ভালো কোন কাজের প্রেক্ষিতে হাসুন নতুবা তার দ্বারা মানুষ সুখের বদলে দুঃখই পাবে।উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মরা বাড়িতে হাসা-হাসি করা মোটেই কাম্য নয়।

৬।মানুষের মাঝে ইতিবাচকতা ছড়িয়ে দিনঃ সব মানুষই সপ্ন দেখতে ভালবাসে এবং সর্বদা আশা করে তার এই সপ্ন পূরণ হোক কারণ এটাই মানুষের বেচে থাকার মূলমন্ত্র।কিন্তু তারজন্যে আপনাকে ইতিবাচক হতে হবে এবং নিজের স্বপ্নের পাশাপাশি অন্যের স্বপ্নকেও সম্মান জানাতে হবে। তবেই আপনি দৃঢ় মানসিক শক্তির অধিকারী হতে পারবেন।

৭। ছোট ছোট কাজে মনোযোগ দিনঃ কাজের চাপ অনেকসময় স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যহত করে এবং যার দরুন দুশ্চিন্তা কাজ করে। সুতরাং মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকতে একটি বড় কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করুন এবং সেগুলোই মনোযোগ সহকারে সম্পাদন করুন।

৮।তৈলাক্ত খাবার পরিহার করুনঃ বর্তমানে ফাস্ট ফুডের অবাধ বাণিজ্য চলছে।সুস্বাদু এবং সল্প সময়ে ভোজনযোগ্য হওয়ায় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠছে এই ব্যবসায়।সুস্বাদু হলেও মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয় এইসব খাবার, এগুলোর মূল্যও অনেকটাই বেশী।এসব খাবারে অধিক পরিমাণে তৈল-চর্বি থাকায় সেগুলো উচ্চ রক্তচাপ,কোলেস্টরল, হৃদরোগ সহ অন্যান্যা রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর বদহজম তো খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

৯।ভ্রমন করুনঃ কাজের একঘেয়ামি দূর করতে ভ্রমন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ভ্রমন বিষয়টাই অনেক রোমাঞ্চকর। এতে প্রকৃতির উদারতায় নিজেকে মুক্ত পাখির মত মনে হয়। এছাড়াও প্রতিদিন কিছু ভাল কাজ যেমন ছোটখাটো সাহায্য করুন,দান করুন দেখবেন মনে অনেক স্থিরতা কাজ করছে।

১০।কৃতজ্ঞ থাকুনঃ জীবনে যাই পেয়েছেন তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকুন। ভালো কিছু পাওয়ার জন্য কাজ করে যান কিন্তু আক্ষেপ করবেন না কখনোই। দেখবেন এই কৃতজ্ঞতা বোধের কারনে জীবন অর্থবহ হয়ে উঠবে অনেকখানি।আল্লাহ্‌র প্রতি কৃতজ্ঞতার পাশাপাশি মানুষের উপরও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করুন।

অবশেষে সবার মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি ।
মোঃ ইয়াসির আরাফাত রাফি

ব্যবস্থাপনা ২য় বর্ষ
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস





Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*