২০১৮-তে এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষা অভিন্ন প্রশ্নপত্রে

অভিন্ন প্রশ্নপত্রের যুগে আবারও ফিরে যাচ্ছে দেশ। আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সারা দেশে একই প্রশ্নপত্রে অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, দুটি কারণে সরকার সারা দেশে একই প্রশ্নের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা হচ্ছে- ফলাফলে তারতম্য নিরসন এবং উচ্চশিক্ষায় ভর্তিচ্ছুদের সমসুযোগ সৃষ্টি।

প্রশ্ন ফাঁস রোধে ২০১৫ সাল থেকে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা বোর্ডভিত্তিক আলাদা প্রশ্নপত্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। ২০১৪ সালের এইচএসসি প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিব (তখন অতিরিক্ত সচিব) সোহরাব হোসাইনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তার কমিটিই প্রশ্ন ফাঁস রোধে যেসব সুপারিশ করেছে, তার একটি ছিল প্রত্যেক বোর্ডে আলাদা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়া। এতে এক বোর্ডের প্রশ্ন ফাঁস হলে সব বোর্ডের পরীক্ষা স্থগিত হবে না। এর আগে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বোর্ডভিত্তিক আলাদা প্রশ্নে পরীক্ষা হতো। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দলের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে তখন সারা দেশে অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া শুরু হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, সারা দেশে অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার সুফলই বেশি। আমরা মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পেয়েছি। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা অভিন্ন প্রশ্নে নেয়া হবে। আমরা এর প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছি। শিগগিরই সব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সমন্বিত বৈঠক ডেকে বাকি কাজও সম্পন্ন করা হবে। বিভিন্ন বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে বোর্ডভিত্তিক আলাদা প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া শুরু হলে এসএসসিতে বাংলা-ইংরেজিসহ ১২টি বিষয়ের প্রশ্ন আলাদা হতো। কম গুরুত্বপূর্ণ বাকি প্রশ্নপত্র সব বোর্ডে অভিন্নই ছাপানো হতো। এইচএসসিতেও বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞানের চারটি বিষয়সহ যেসব প্রশ্ন ফাঁসের আশঙ্কা বেশি- সেগুলো বোর্ডভিত্তিক আলাদা হতো। এখন অভিন্ন প্রশ্নেই পরীক্ষা হবে।

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাস্তব প্রয়োজনে অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও এর ঝুঁকিগুলো বিবেচনায় আছে। সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে বোর্ডগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একটি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান নামপ্রকাশ না করে বলেন, অভিন্ন প্রশ্ন হলেও নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশ্ন প্রণয়ন, মডারেশন, ছাপা ইত্যাদির ক্ষেত্রে আগের নীতিই অনুসরণ করা হবে। আগের নীতির মধ্যে আছে, প্রত্যেক বোর্ড ৪ সেট করে প্রশ্ন তৈরি করে। সেখান থেকে লটারি করে ছাপানোর জন্য ২টি এবং জরুরি প্রয়োজনে (যেমন ফাঁস হলে) তাৎক্ষণিক ছাপানোর লক্ষ্যে সংরক্ষণের জন্য ২ সেট বাছাই করা হতো। এছাড়া প্রশ্ন প্রণয়নে শিক্ষকরা কঠোর বিধিনিষেধের বেড়াজালে থাকেন। মডারেটররাও একই নীতি অনুসরণ করেন। প্রণেতা এবং মডারেটররা ছাড়া কেউ প্রশ্ন সম্পর্কে জানতেন না। খোদ শিক্ষামন্ত্রীসহ বোর্ডের চেয়ারম্যান-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা পরীক্ষার দিন সকালে প্রথমবারের মতো প্রশ্ন দেখেন। এর আগে দেখারও সুযোগ নেই।

স্থানীয়ভাবে প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষা অনিশ্চিত

প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে আগামী বছর থেকে স্থানীয় পর্যায়ে তা ছাপিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বোর্ডের দুজন কর্মকর্তা বলেন, এ জন্য যে প্রস্তুতির প্রয়োজন, তা এখনো নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাঁরা বলেছেন, পরীক্ষামূলকভাবে চলতি বছর যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীন বিদ্যালয়গুলোর নির্বাচনী পরীক্ষা এই প্রক্রিয়ায় নেওয়া হবে। এর ফলাফল দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সূত্রঃ যুগান্তর





About লেখাপড়া বিডি ডেস্ক 1526 Articles
লেখাপড়া বিডি বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা বিষয়ক বাংলা কমিউনিটি ব্লগ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*