ভাইভাবোর্ডে ভাল করার গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপায়।

ভাইভা বোর্ডে যাঁরা থাকেন, তাঁরা কিন্তু নানাভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমেই আপনাকে তাঁদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেবেন। একজন চাকরিপ্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি তাঁর স্মার্টনেস, উপস্থাপন কৌশল, বাচনভঙ্গি এসব বিষয়ও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভাইভা বোর্ডে ঢুকেই অনেকে নিজের অজান্তে প্রথমেই নিজেকে অযোগ্য প্রমাণ করেন বসেন। নিয়োগদাতারা তেমন কোনো প্রশ্ন না করেই বা সৌজন্যতার খাতিরে দু-একটি প্রশ্ন করেই বিদায় করে দেন। এ রকম পরিস্থিতি এড়াতে ও নিজেকে যোগ্য করে উপস্থাপন করার জন্য জেনে নিন কিছু কৌশল।

১. চাই ভালো জীবনবৃত্তান্ত
ইন্টারভিউ বোর্ডে নিজেকে উপস্থাপনার আগেই জীবনবৃত্তান্ত বা বায়োডাটা উপস্থাপন করার প্রয়োজন হতে পারে। এ জন্য জীবনবৃত্তান্ত তৈরির সময় আপনাকে অবশ্যই কৌশলী হতে হবে। চাকরিপ্রার্থীর যেটা ভালো অর্জন, তা জীবনবৃত্তান্তে আগে লিখতে হবে। আর এতে যেন প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জীবনবৃত্তান্তের সঙ্গে একটি ফরওয়ার্ডিং লেটারও দিয়ে দিতে হবে। কোনো বানান বা ব্যাকরণগত ভুল যাতে না হয় সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। জীবনবৃত্তান্তে অনেকই ভুল তথ্য উপস্থাপন করেন এবং নিজেকে যোগ্য প্রমাণের জন্য সত্য নয় এমন অনেক তথ্য সন্নিবেশিত করেন। এটি মোটেই উচিত নয়। নিয়োগকর্তারা নিয়োগের পরেও যদি আপনার ভুল তথ্য উপস্থাপনের বিষয়টি ধরে ফেলেন, তাহলে কিন্তু পরবর্তীতে চাকরি চলে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে।

২. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে ভুলবেন না
ভাইভা বোর্ডে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র সঙ্গে নিতে হবে। চাকরির আবেদনের সময় এসব কাগজপত্র দিতে হয়, তাই এসব কাগজপত্র নিয়োগদাতাদের কাছে থাকলেও এসব সঙ্গে করে নিতে হবে। ভাইভা বোর্ডের সদস্যরা যেকোনো সময় এসব চেয়ে বসতে পারেন। এ ছাড়া সঙ্গে জীবনবৃত্তান্ত ও ছবিও রাখুন। আর একটি কলমও সঙ্গে রাখা দরকার। আর এসব রাখার জন্য ভালো মানের একটি ব্যাগ বা ব্রিফকেস সঙ্গে রাখতে পারেন। তবে একটি বিষয় সচেতন থাকা জরুরি, হাতের ব্যাগ টেবিলের ওপর না রেখে পাশে কোথাও রাখা উচিত।

৩. ক্লান্তিভাব ঝেড়ে ফেলুন
সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় আপনার মধ্যে যেন কোনো প্রকার ক্লান্তিভাব না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কেউ কেউ নির্দিষ্ট সময়ের ঠিক আগ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে ভাইভা বোর্ডে এসে উপস্থিত হওয়ার কারণে শরীর ঘামে একাকার হয়ে যায়। তাই নির্দিষ্ট সময়ের অন্তত আধাঘণ্টা আগে ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হয়ে নিজেকে প্রাণবন্ত করে তুলুন। প্রয়োজনে হাত-মুখ ধুয়ে নিনে পারেন। অনেকে সারা রাত জেগে বা গভীর রাত পর্যন্ত পড়ালেখা করে সকালে ভাইভা দিতে আসেন। এতে চেহারায় কান্তির ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নিজেকে সতেজ করে উপস্থাপনের জন্য ভাইভার আগের রাতের ভালো ঘুম খুব জরুরি। তাই বেশি রাত না জেগে ঘুমিয়ে পড়ে সকালে ভালোভাবে গোসল করে ভাইভা বোর্ডের উদ্দেশে রওনা হোন।

৪. পরিচ্ছন্নভাবে সঠিক সময়ে
অনেকেই নিদিষ্ট সময়ের পরে সাক্ষাৎকার বোর্ডে এসে হাজির হন। এই সময়মতো আসতে না পারাটাই আপনার অযোগ্যতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। ভাইভা বোর্ডে কোনোক্রমেই দেরি করে উপস্থিত হবেন না। দেরিতে এলে নিয়োগদাতারা ভাইভা নাও নিতে পারেন বা ভাইভার আগেই বাদ দিয়ে দিতে পারেন। নিজেকে পরিপাটিভাবে উপস্থাপন করার গুরুত্বও কিন্তু অনেক। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, শালীন ও মার্জিত পোশাক পরে ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হতে হবে। পোশাকই কিন্তু আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচয় দেবে।

৫. সালাম দিয়ে প্রবেশ করুন
ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রবেশের সময় সালাম দিয়ে প্রবেশ করুন। প্রবেশের পর অনুমতি না নিয়েই বসে পড়বেন না। অনেকে কথা বলার সময় হাত-পা নাড়ে। ভাইভা বোর্ডে কখনোই এ রকম করবেন না। আর একটি বিষয় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে, যখন যে ব্যক্তি আপনাকে প্রশ্ন করবেন, তাঁর দিকে তাকিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। ভাইভা বোর্ডে যিনি প্রধান হিসেবে থাকেন, অনেকেই শুধু তাঁর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিয়ে থাকেন। এটা মোটেই সঠিক নয়।

৬. আঞ্চলিকতা পরিহার করুন

ভাইভা দেওয়ার সময় কথা বলার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা যেন প্রকাশ না পায় সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। কথা বলার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন আঞ্চলিক টান না এসে যায়। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলাও জরুরি। এ জন্য আগে থেকেই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার অভ্যাস করতে হবে। ইংরেজি বলার সময়ও উচ্চারণের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

৭. প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা নিন
ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হওয়ার আগে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যথাসম্ভব জেনে নিতে হবে। যদি সম্ভব হয়, ভাইভা বোর্ডে কারা কারা থাকবেন, সে সম্পর্কেও জেনে নেওয়া ভালো। ভাইভার আগে হন্তদন্তভাবে হাজির না হয়ে হাতে সময় রেখেই যথাস্থানে উপস্থিত হতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয়, আগের দিনই পর

৮. ধূমপান করে ভাইভায় যাবেন না।

বর্তমান যেকোন ভাইভার জন্য যে বিষয়গুলো আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে-

★ ইংরেজিতে নিজেকে পরিচয় ( নাম, ঠিকানা, নিজ জেলা, পড়ালেখা, প্রতিষ্ঠান, পরীক্ষা সাল ও ফলাফল সুন্দর করে বলতে হবে )

★ নিজের নামের অর্থ, জন্ম তারিখের বাংলা, আরবি মাস ও তারিখ। নামের সাথে মিল আছে এমন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম, কর্ম, জন্ম তারিখ।

★ নিজের এলাকার এম পি (আসন নাম্বার সহ), মন্ত্রী, চেয়ারম্যান এর নাম।

★ নিজের পঠিত বিষয়, চেয়ারম্যান এর নাম ও বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত তথ্য, আপনার থিসিস নিয়ে কিছু প্রশ্ন করতে পারে।

★ নিজের জেলা পরিচয় বাংলা ও ইংলিশ এ। আপনার নিজ জেলার নামকরনের.ইতিহাস বা জেলার ইতিহাস,আপনার জেলার পর্যটন বা কেন বিখ্যাত ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনার জেলার বা এলাকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আপনার জেলার বা থানার বিখ্যাত ব্যক্তি পত্রিকা, সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এর নাম। আপনার জেলা মুক্তিযুদ্ধের সময় কোন সেক্টরে ছিল।

★ লাহোর প্রস্তাব, ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট, ৬ দফা, ৬৮ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯ গণ অভ্যুথান, ৭০ নির্বাচন, ৭ই মার্চ- মুক্তিযুদ্ধঃ মুজিব নগর সরকার ও মন্ত্রী, ১৫ই আগস্ট, স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধ সন্মাননা, মার্চ মাসের বর্ণনা- মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বাহিনী, সেক্টর, পদক, বীরশ্রেষ্ঠ তালিকা।

★ বঙ্গবন্ধুর জীবনী- অসমাপ্ত আত্মজীবনী- হত্যার বিচার- আসামী।

★ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- শান্তির মডেল- সমুদ্র বিজয়- বিদ্যুৎ উৎপাদন।

★ যুদ্ধাপরাধ বিচার ও ট্রাইব্যুনাল, জাতীয় ৪ নেতার পরিচয় ও বুদ্ধিজীবী হত্যা ও বিচার।

★ জাতীয় সংগীত, মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক উপন্যাস নাটক চলচিত্র ।

★ বাংলাদেশের সংবিধান।

★ ভিসন ২১ এর বর্ণনা, জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থায় বাংলাদেশ।

★ কিছু মানসিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারে।

★ কম্পিউটারে কি কি পারেন?

★ আপনার চাকরির বিষয়, যে প্রতিষ্ঠানে ভাইভা দিতে যাবেন তার সম্পর্কে, মিশন, ভিসন জেনে নিবেন ( তাদের ওয়েবসাইট থেকে)

★ চাকরি পেলে আপনি কি করবেন, আপনার স্ট্রেংথ কি?

★ আপনার ডিপার্টমেন্ট এর ইম্পরট্যান্ট টার্ম গুলো জানবেন।

ভাইভাবোর্ডে ভাল করার নিচের বইগুলো পড়তে পারেনঃ

Sifurs VIVA Question Bank and Solution pdf

জনপ্রিয় সব বাংলা ব্যকরণ ও ইংরেজি গ্রামার বই

সাধারণ জ্ঞানের সকল প্রয়োজনীয় ইবুক

আপনার সকল শিক্ষামূলক বইয়ের বিশাল সংগ্রহ করুন। 





Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*