জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিভিন্ন পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য শিক্ষার্থীদের দেয়া ‘সম্পুরক আর্থিক সাহায্য’ এখন নানান জটিলতার শিকার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ অর্থ প্রদান যেমন হচ্ছে বিলম্বিত, তেমনি অবহেলিত। যার ফলে স্নাতক শেষে চাকরি পেয়ে গেলেও অনেকের ঝুলে আছে ৩য় বর্ষের সম্পুরক আর্থিক সাহায্য। ৩য় বর্ষের শেষ প্রান্তে থেকেও অনেকে অপেক্ষা করছেন ১ম বর্ষের সম্পুরক বৃত্তির জন্য।
বিভাগ উন্নয়ন ফি, হলের সীট ভাড়া, ডাইনিং-ক্যান্টিনে খাবারের দাম, পরীক্ষার ফী, মেডিকেল চার্জসহ জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় সবকিছুতে খরচ বাড়লেও বাড়েনি শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সাহায্যের অর্থের পরিমাণ। এখনও চলছে শুরু থেকে চলে আসা মাসিক ১২৫ টাকা প্রদান। তা আবার নিয়মিত নয়। এক বছরের বৃত্তি শিক্ষার্থীর হাতে পৌছে ২-৩বছর পরে। প্রতিটি শিক্ষাবর্ষেই একই সমস্যা। তেমনি আটকে আছে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ৪র্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর, ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ৪র্থ বর্ষ, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ৩য় বর্ষ, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ২য় বর্ষ, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ১ম ও ২য় বর্ষের এবং ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের মেধাবৃত্তি বা সম্পুরক আথিক সাহায্য । এ নিয়ে নানা বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীরা।
অর্থনীতি বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মকলেছুর রহমান বলেন, ‘সম্পুরক আথিক সাহায্য’ অনেকে শিক্ষার্থীর কাছে শুধূমাত্র সম্মান হলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর জন্য এ অর্থ অতি প্রয়োজনীয়। তাই যুগ যুগ ধরে চলে আসা ১২৫ টাকার চেয়ে একটু বাড়ালে শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণ হয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু সায়েম বলেন, আথিক সাহায্যসহ বিভিন্ন ধরণের শিক্ষা বৃত্তি এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম। ঠিক সময়ে সহায়তা পেলে শিক্ষার্থীদের বেশি উপকার হয়।
এ বিষয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. আবুল কালাম আজাদ (উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তি-১) এর কাছে জানতে চাইলে তিনি দায় চাপিয়ে দেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দিকে। তিনি জানান, ‘পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে বারবার চিঠি দেয়া সত্ত্বেও ঠিক সময়ে পাওয়া যাচ্ছেনা ফলাফল। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষ এবং ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ২য় বর্ষের ফলাফলের জন্য নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর দুই বার করে চিঠি দিলেও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।’
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে খোঁজ নিলে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আইয়ুব আলী জানান,‘প্রতিটি শিক্ষাবর্ষের ‘সম্পুরক আথিক সাহায্য’ ফলাফল প্রকাশের সাথে সাথেই দেয়া সম্ভব। তবে বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা, ফলাফল বিলম্বের কারণে জটিলতা দেখা দেয়।’ তিনি আরও জানান ইংরেজী, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব, দর্শন, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম, চারুকলা, ভূতত্ব, পরিবেশ বিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান ও ফার্মেসী বিভাগের ফলাফল বিলম্বের কারণে আটকে আছে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের বৃত্তি। এছাড়া সম্প্রতি ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষ এবং ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ২য় বর্ষের ফলাফল হাতে পাওয়ায় কাজ চলছে এগুলো যাছাই বাছাইয়ের। খুব তাড়াতাড়ি এসব শিক্ষাবর্ষের তালিকা পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি। তবে মাসে ১২৫ টাকা আর প্রতি বছরের বৃত্তি ২ বছর পরে দেয়ার প্রথার পরিবর্তন চায় শিক্ষার্থীরা।
Leave a Reply