পাঠশালা বা কামারশালা

পাঠশালায় প্রহার

পাঠশালায় প্রহার” ম্যামের হাতে ডাস্টার ছিলো ছুড়ে মেরেছে উঃ বড্ড লেগেছে।” -লেগেছে ঠিকই। তবে যাকে লক্ষ্য করে ছুড়ে মারা হয়েছে সেও সময়মত
মাথা নিঁচু করে নিয়েছে। ডাস্টার তাই উড়ে গিয়ে ল্যান্ড করলো পিছনের বেঞ্চে বসা আরেক ছাত্রের কপালে। বেগ বেশি ছিল, তাই ‘উৎক্ষিপ্ত বস্তু’র সূত্র মেনে ডাস্টার নিচে না নেমে সরাসরি কপালে লেগেছে। তাই আরেকটু নীচে লাগলো না, কপালের জখমেই সারা। থ্যাঙ্কস ম্যাম, ভাগ্যিস জোড়ে মেরেছিলেন।
………………………………..
এগারো বছর স্কুলে পড়ে একটা ধারনা মনে বেশ ভালোভাবে গেঁথে গেছে আমার। সচরাচর ওখানে দুই ধরনের ছাত্রদের শিক্ষাগুরুরা মনে রাখেন। এক. যারা তাঁদের চোখে ‘মোস্ট ব্রিলিয়ান্ট’ আর দুই. যারা তাঁদের চোখে ‘মোস্ট ত্যাঁদড়’। তবে মাঝামাঝি যে গ্রুপটা, মধ্যবিত্ত,
এরাই বোধকরি সবচেয়ে অভাগা। ব্রিলিয়ান্টরা পাশ করার পর স্কুলে গেলে শিক্ষকরা আদর করেন, আদর করেন ত্যাঁদররা তাদের বাল্যকালের গুরুদের সাথে সাক্ষাত করতে গেলেও, সামান্য আদর মাখা টক ঝাল মিষ্টি আচারের স্বাদ জিহবায় এনে বলেন, “ভীষণ ফাজিল ছিলি রে। কত পিটিয়েছি ওই গাছের ডালটা দিয়ে তোদের মানুষ করার জন্য…।” কিন্তু ওই মধ্যবিত্ত গ্রুপটাকে কেউ মনে রাখে না।
তাদের না আছে চোখে পড়ার মত ব্রিলিয়ান্স। না আছে ত্যাঁদড়ামি। স্কুলের শেষ পাঁচটা বছর আমি ছিলাম এই মধ্যবিত্তদের দলে। আমার চোখ তাই মধ্যবিত্তদের চোখ। নাহ, হবে না। এভাবে হবে না। এসব লিখার জন্য তো আমি পিসির সামনে বসিনি। নস্টালজিয়া কখনো মানুষকে বোধকরি কোমল করে ফেলে। অথচ আমি তো কোমল হবার জন্য লিখতে বসিনি। আমার তো কোমল হবার সুযোগ নেই।
কারণটা সরাসরি বলে ফেলি, আমি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পছন্দ করি না। যেভাবে আমাদের পড়ানো হয় আমি মাঝে মধ্যে তার ক্ষতিটা চিন্তা করে শিউরে উঠি। তাই সিদ্ধান্ত নেই আমাকে লিখবো ওগুলো নিয়েই। আর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হলেই তো সবচেয়ে ভালো হয়।
তবে তাই হোক।
…………………………
প্রাইমারী আর হাইস্কুল মিলিয়ে চারটা স্কুলে পড়েছি আমি। সবগুলোতেই এমন কিছু শিক্ষাগুরুর দেখা পেয়েছি যারা ক্লাসে ঢুকতেন
হাতে একটা বেত নেড়ে। গাছের কঁচি ডাল থেকে শুরু করে বাঘের মত ডোরাকাটা জালিবেত পর্যন্ত কতো কি! তাকালেই মনে হতো ওগুলো বুঝি সপাং সপাং পিঠে নেমে আসার জন্য ওঁত পেতে আছে। বুঝি ছাত্র পিটানোইবা তাঁদের কাজ। শিক্ষক তাঁরা, এমনই শিক্ষক যে ভয়ে প্রশ্ন পর্যন্ত করতে পারতাম না। পিছন ফিরে তাঁকিয়ে অবাক হই, কি ত্রাস অতিক্রম করে এসেছি শৈশবের আর কৈশরের দিনগুলোতে। এমনকি ক্যান্টনমেন্ট কলেজেও। একটা গল্প বলি। তার নাম দিলাম ‘অভাগা’। আমার সহপাঠী। সে হিসেবে আমাদের
বয়স আট কি নয়।ইংরেজী ক্লাসের আগে প্রতিদিন ওর মুখে জমে থাকা ভয় মনে করতে পারি। মোটা ফ্রেমের চশমাওয়ালা ইংরেজী স্যার
ক্লাসে এসে প্রতিদিন ওকে নিয়ম করে গম্ভীর কন্ঠে পড়া জিজ্ঞেস করেন। স্রষ্টা হয়ত অভাগার ইংরেজী ভাগ্য একটু কমই দিয়েছিলেন। অথবা স্যারের শীতল দৃষ্টি আর হাতের স্কেলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই হয়ত পড়া গুলিয়ে ফেলতো। যেদিন পড়া ধরাতেন না সেদিন কিজানি বিরবির করে কথা বলতেন অভাগার সাথে। ব্যাপারটা ছিল রুটিনওয়ার্কের মত। এরপর অভাগার ছোট্ট শরীরটাকে নুইয়ে (অনেকটা নামাজে রুকুর মত করে) চেয়ারের নিচে ওর মাথাটাকে ঢুকিয়ে রাখতেন বাকি ক্লাস। তারপর ঐ চেয়ারের উপর আরাম
করে বসে ‘ইংলিশ বাই স্টেজেস’ বইয়ের পাতা মেলতেন। একটু উনিশ বিশ হলে কখনো কাঠের স্কেল, কখনো জালিবেত দিয়ে ঐ
অবস্থায়ই ওর পশ্চাতদ্দেশে রাগ মেটাতেন। একই দৃশ্যের মঞ্চায়ন নিয়মিত দেখতো বিশ জোড়া চোখ। হ্যাঁ, দর্শকদের বয়স তখন আট
কি নয়। স্যারের ঐ শিক্ষালয়ে খুব সুনাম। খুব জাঁদরেল আর স্মার্ট স্যার তিনি। অন্য শিক্ষকদের প্রশংসা- “কত্তো ভালো, কত্তো স্ট্রিক্ট উনি।”
যেন শারিরীক অত্যাচারই ভালো শিক্ষক হবার মাপকাঠি তাঁদের চোখে। তারাও শিক্ষক বটে। হাইস্কুলে তখন। ভাগ্যবান ব্যক্তিবিশেষ
ছাড়া আর সবারই স্কুলজীবনে বোধ করি এমন শিক্ষাগুরুর দর্শন পাবার অভিজ্ঞতা হয়েছে। কেমন তিনি? বেঁটে করে ফর্সা একজন
স্যার ছিলেন আমার হাইস্কুলে। ইংরেজী পড়াতেন ইনিও। ইংরেজী পড়াতেন উনি। ঠারে- ঠরে বুঝিয়ে দিতেন একমাত্র উনিই স্মার্ট,
ইংরেজী ওয়ালা। যখন তিনি ক্লাসে আসতেন তখন তার আশে পাশের ডানে বামের আরো দুইটা ক্লাসে কবরের নীরবতা নেমে আসতো। আর আমরা, অর্থাৎ যাদের ক্লাসে নিজের অফুরন্ত ভান্ডার থেকে ইংরেজী জ্ঞান দয়া করে বিলি করতে আসতেন উনি সেখানে কারো কারো শরীর কাঁপতো রীতিমতো। শত্রু পীড়নে সিদ্ধহস্ত তিনি একবার এক ছাত্রকে গাছের ডাল দিয়ে মারতে মারতে গলার চামড়া ছিড়ে রক্ত
বের করে ফেলেছিলেন। শিক্ষক তিনি। বহাল তবিয়তেই শিক্ষকতা করে গেলেন। মনে মনে বলি, যদি বাকি দিনগুলো আমার মত ছাত্রদের মনে ঘৃণার পাত্র হয়ে থাকা আপনাদের শিক্ষকজীবনের স্বার্থকতা হয় তবে আপনারা তা যথার্থই পেরেছেন। ইউ হ্যাভ মেড ইট ‘স্যার’।
আচ্ছা, স্মৃতিটাকে মাঝেমধ্যে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যাচাই করতে চেষ্টা করছি কি হচ্ছিলো দিনগুলো। কেন হচ্ছিলো। শারীরিক অত্যাচারের
মধ্যে নির্মমতর অত্যাচারগুলো কি পুরুষ শিক্ষকদের কাছ থেকে আসে? হয়ত। আমার অভিজ্ঞতা তো তেমনটার পক্ষেই কথা বলে।
হয়ত অন্যদের অভিজ্ঞতা অন্যরকম। শিক্ষিকাদের মনে কি তবে আমাদের জন্য সফট কর্ণার থাকে? তাও তো মনে হয়না। শারিরীক
শাস্তি দেবার ক্ষেত্রে খুব পিছিয়ে নেই তাঁরাও, পুরুষ কাউন্টারপার্টদের সাথে তাদের কেউ কেউ ভালোই প্রতিদ্বন্দিতা করেন। আর
যতটুকু পিছিয়ে আছেন, তা তারা পুষিয়ে দেন তাদের কন্ঠ দিয়ে এ দিকটাতে তারা কেন যেন একটু বেশি পটু। মনটা কি তারা তবে বেশি ভালো পড়তে পারেন! অনেকে মনে হয় বুঝতে পারেন কিভাবে কাজ করে মানসিক নির্যাতনের শিল্পটা। যা ক্ষরণ ঘটে সব ভিতরে ভিতরে। ওটায় বেত বা স্কেল হাতে করে বয়ে নিয়ে আসতে হয়না, চামড়ায় দাগ কাটে না, কেউ দেখতে পায়না, বাচ্চারা মানসিক নির্যাতন কি তা বলতেও পারে না কিন্তু তিলে তিলে ঠিকই খায়। শরীরে আগুন লাগলে ত্বক, মাংস পুড়ে, মনে আঘাতে মন পুড়ে। কিন্তু সহ্য করা যায়না কোনটাই। একটা সহ্য করার সময় অন্যটাকে শ্রেয়তর মনে হয়। কোনটাকে তাহলে পিছিয়ে রাখি? আমাদের ঐতিহ্যবাহী মহিলারা দুজন এক হলে ঘরকন্নার বাইরে কিছু ভাবতে পারে না, ধর্ম মানে কিন্তু গীবত করার লোভ সামলাতে পারে না। আমি যাদের শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি তাদের প্রায়ই একই অবস্থা। পরীক্ষার হলে পর্যন্ত দুজন একত্র হলেও ঘরকন্না আর পরনিন্দা। এরমধ্যে এসব তাত্ত্বিক আলোচনা শুনতে শুনতে পরীক্ষার্থীদের অবস্থা টালমাটাল। অবশ্য খাতা দেখাদেখি করার অপেক্ষায় থাকে যারা তাদের জন্য এমন জুটি তো পোয়াবারো একেবারে। আমি নিজেও যদ্দূর মনে করতে পারি সে সুযোগ নিয়েছি। আমরা দেখি ক্লাসে মারতে, করিডরে মারতে, খোলা মাঠে সূর্যের নিচে টেনে নিয়ে মারতে, কারো কারো মারধরে আবার সৃজনশীল ধরন আছে। তারা ছাত্রকে দিয়ে ছাত্রকে মারেন। হয়ত দেখাগেলো পড়াশুনায় ভালো কোন ছাত্রের হাতে তুলে দিলেন পিছিয়ে থাকা অমনোযোগীদের শাসনের দায়িত্ব। তাও একই ক্লাসে।
ফলাফল হিসেবে কচি মনে যে বিদ্বেষের সৃষ্টি হবার বিপুল সম্ভাবনা থাকে তা তারা দেখবেন কেন! মারধরের এক বিচিত্র আয়োজন। বিচিত্র মজা। আয়োজক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক। ‘এই কানে ধরো’, ‘ক্লাসের সামনে গিয়ে নেল্টডাউন হয়ে থাকো’, ‘বারান্দায় গিয়ে কানে ধরে নেল্টডাউন হও’- অপমান করার কত বিচিত্র টেকনিক। কারো ব্যক্তিত্ব, আত্নসম্মানবোধ, শির সোজা করে দাঁড়ানোর ইচ্ছা ধ্বংস করে দেবার কার্যকর একটা উপায় কুড়িতেই তাকে মুড়িয়ে দেয়া। অবাক হবার তেমন কিছু নেই কারণ আমাদের এখানে বাসর রাতে বেড়াল মারার মত অসুস্থ গল্পগুলো খুব প্রচলিত। কুড়িতেই মুড়িয়ে দেবার এ ব্যাপারটা শিশুদের উপর শ’ শ’ বছর ধরে নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছেন আমাদের
শিক্ষকরা ছাত্রদেরকে শারিরীক আর মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে। এটা একটা ঐতিহ্য, যার শিকার তাঁরা নিজেরাও। তাঁরা যখন করিডর
ধরে হাঁটতেন আমরা তখন সে করিডরে পা ফেলতাম না। অন্য রাস্তায় ঘুরে যেতাম। আমার তাঁদেরকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, “ম্যাডাম, স্যার, এমন সম্মানের বৃত্তই কি আপনারা তৈরী করে নিতে চান ছাত্রদের কাছ থেকে? আচ্ছা, আপনারা কি এটাকে আদর্শ শিক্ষকের
প্রকাশ ভাবেন? এটা উপভোগ করেন? আপনারা কি আমাদের মতই দম বন্ধ আতঙ্কের মাঝে বড় হয়েছিলেন? সত্যি করে বলুনতো,
সে পরিবেশটাই কি আপনাদের কাছে একমাত্র আদর্শ হয়ে মনে গেঁথে গেছে? আচ্ছা, পড়ানোর নামে আপনারা ছেলেবেলার আপনাদের
মনে দেহে বয়ে থাকা আতঙ্কগুলোর শোধ তুলছেন নাতো আমাদের উপর? আমাদেরকে আপনাদের অতীতের জ্বালা মেটানোর মাধ্যম
মনে করেন না তো! আচ্ছা, আপানারা কি ‘তারে জামিন পার’ বা ‘মোনালিসা স্মাইল’এর মত সিনেমাগুলো দেখেছিলেন? ওগুলো দেখে কি আপনারা নিজেদের কখনো প্রশ্ন করেছিলেন? মনের মধ্যে কি একটুও হাহাকার করে ওঠেনা, “আমিও তো ওমন শিক্ষক হতে পারতাম। বাচ্চাগুলোর সাথে আমার সম্পর্ক ভয়ে হত না, হতো ভালোবাসার, মমতার।” আচ্ছা, আপনারা কি শিক্ষকতাকে ভালোবাসেন? নাকি ইন্টারভ্যুতে অন্য কোথাও এলাওড না হয়ে ঘুরে ফিরে আমাদের স্কুলে আসেন?” ফলাফলটা কই? স্কুলের পাঠ চুকিয়ে কলেজ। হাজার হোক, দশ বছর মানে পুরো এক দশক কামারশালার ‘পিটিয়ে মানুষ বানানো’র কর্মশালায় ছিলাম। ভাবলাম এই পর্যায়ে এসে বোধকরি সব মানুষের দেখা পাবো। হিউম্যান তো খুব সাধারণ, যাদের পিটাপিটি ভালোমত হয়েছে তারা বোধকরি সুপারম্যান টাইপের কিছুও হয়ে যেতে পারে। হ্যাঁ, সুপারম্যানই তৈরী হয়েছে বটে। তারা এখন সুপার ডুপার ঘটনার জন্ম দেয়। তাই টক অব দা ক্যাম্পাসে খবর পাওয়া যায় আজ কিছু পাশ করা সিনিয়র ওমুক স্যারকে তাঁর এলাকায় থাবড়িয়েছে। ওই এলাকায় তমুক স্যার কলেজ ছেড়েই বাসাও বদলে ফেলেছেন, ছাত্ররা বুঝি এবার ঢাল তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দারকে পেয়ে শোধ তুলবে এই ভেবে। আগে জানতাম শুধু শিক্ষকই ছাত্র
পেটান, এখানে এসে জানলাম মাঝেমধ্যে ছাত্ররাও পেটায়। ভার্সিটিতে এসে পরিসর হঠাত করে বড় হল। জানলাম গুরুমারার অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। দেখলাম সেই অভিজ্ঞতা জাহির করার মাঝে তারা একটা আনন্দও পায়, বিশাল কৃতিত্বের সাথে তারা সেইসব ঘটনাবহুল দিনগুলোর গল্প করে। কথা বলে জানা গেল কামারশালায় এরাই সবচেয়ে বেশি পিটিয়ে মানুষ করার প্রকৃয়ায় প্রকৃয়াজাত হয়েছে। উন্নতিই বটে।
…………………………………
সচেতনভাবেই আমি আমার স্কুলের যে ব্যাপারগুলো পছন্দ করি তা নিয়ে লিখতে বসিনি। পছন্দের অভিজ্ঞতা স্কুল জীবনে নেই তা নয়।
সেগুলোর ব্যাপারে বলবো- “ওকে”। তাইবলে শৈশব কৈশরের স্পর্শকাতর সময়ে যেসব ব্যাধি বছরের পর বছর আমাদের, আমাদের
অনুজদের তিলে তিলে রুদ্ধশ্বাস যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে সেগুলোকে ক্ষমা করার মত মহানুভব আমি হবার কোন কারণ দেখিনা। ওহ ভালো কথা, রবীর দু’টো লাইন মাথায় এসে গেল- “ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা।“ আমরা শিশুগুলোকে স্কুলে পাঠাই। তারা সেখানে প্রতিদিন এমন মধ্যযূগীয় বর্বরতার শিকার হচ্ছে নাতো? তারা তো আমাদেরকে বলতেও পারে না। ভয়ে ভয়ে নিজের ভিতরেই রেখে দেয় সবকিছু, সব মানসিক শারিরীক নির্যাতন। পাছে বাবা মা না আবার ওদের পড়া না পারার অপরাধ জেনে ফেলে! তখন তো আবার ঘরেও শাস্তি পেতে হবে। আপনার শিশুটাই হয়ত আপনার ঘরেও নিরাপদ বোধ করে না। কই যাবে ওরা? হাজারটা সমস্যা আমাদের। দুষ্টচক্রের বেড়ে আমরা বন্দি। স্বপ্ন দেখি একটা প্রজন্ম তৈরী হবে যারা এ শিকলটা ছিড়তে পারবে।
আর সেটা নতুন প্রজন্মই হোক। সেটা এ কারণেই যে এরা নতুন। জরজর অশীতিপর বৃদ্ধকে আমরা নজরুলের গান শোনাবো আর তিনি সাথে সাথে এত বছরের আগলে রাখা সব সংস্কার কুসংস্কার হেলায় ঝেড়ে ফেলে ধেই ধেই নাচতে শুরু করবেন তেমন আশা আমি ঠিক করতে পারিনা। তারচেয়ে আমি বরং নতুনদের নিয়ে বাজি ধরবো। আমি আমার শিক্ষকদের অপমানিত হতে দেখতে চাইনা। তারচেয়েও বেশি চাইনা প্রজন্মের পর প্রজন্ম শাসনের নামে অত্যাচারিত হোক, মানসিক বিকাশ শিক্ষার নামে প্রতিবন্ধীতায় রূপ নিক। নবীণরা ফুলের মত। সামান্য আঁচড়ই স্থায়ী ক্ষত তৈরীর জন্য যথেষ্ঠ। জীবনের ভিত্তি গড়ে নেবার মত মুহুর্তগুলোর এমন অপচয় আর অনাচার দেখার বা সহ্য করার মত বিলাস আমার নেই। দুঃখিতও বলবো না এজন্য। কারণ আমার কথার কাঁটা ঠিক তাদেরকেই আঘাত করবে যারা এ কাঁটার যোগ্য।

১৩-০৭-২০১৩ খ্রিঃ
সরকারী সফর আলী কলেজ
আড়াইহাজার,নারায়নগঞ্জ ।

 





About অরণ্য সৌরভ 47 Articles
আমি অরণ্য সৌরভ, লেখাপড়া করছি সরকারী সফর আলী কলেজ আড়াইহাজার, নারায়নগঞ্জ। পাশাপাশি কবি ও সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছি মাসিক "হাতেখড়ি"তে showrov2500@gmail.com

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*