১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আর এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকড় ধরে বেঁচে আছে আমাদের মত অতি গরীব, দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা। আর এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ভরসা, আস্থা রেখে ছাত্রছাত্রীরা পথ চলছে জীবনে ভাল কিছু পাওয়ার আশায়। আগে ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নামক ভয়ঙ্কর হিংস্র প্রাণী। সেটা ছাত্রছাত্রীদের এমন ভাবে আকড়ে ধরতো যে, ছাত্রছাত্রীদের দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস এমনকি বছর পর বছর অতিবাহিত হতো তবুও মিলতো না সপ্নের ঠিকানা। শেষ হতো না অনার্স বা ডিগ্রি কোর্স। মূল কারন এই সেই সেশনজট। বুড়ো হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও আদু ভাই হয়ে ভার্সিটি বারান্দায় পা রাখতে হতো কবে যে পাশ করে বের হবে এই আশায়।
যাই হোক না কেন আগের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বাদ দেই। এখন আসি নতুন রূপধারী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গে। সেশনজট কমাবেন- শিক্ষার মান বৃদ্ধি করবেন- প্রকৃত মেধাবী গড়ে তুলবেন এই শ্লোগানে শুরু হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন পথ চলা, নতুন নিয়ম, যার নাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্রাশ প্রোগাম!!!
.
আমরা অবশ্যই আনন্দিত যে, আপনারা সেশনজট কমাবেন, শিক্ষার মান বৃদ্ধি করবেন, ও প্রকৃত মেধাবী তৈরি করবেন। এই জন্য আমরা অনেক অনেক খুশি।
আমরা আপনাদের এই ক্রাশ প্রোগ্রামকে সার্পোট করি। আপনারা আমাদের এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন নিয়ম নীতি ক্রাশ প্রোগামের মাধ্যমে Nu কে সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রুপলাভ করান।
কিন্তু……………
কিন্তু আমাদের একটায় প্রশ্নঃ অতি গরীব, মধ্যবিত্ত ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জীবন নিয়ে খেলা করার নামই কি ক্রাশ প্রোগ্রাম??
জানি এই উত্তর আমাদের মত ছাত্রছাত্রীদের কেউ দিবে না। এর উত্তর ও হয়তো কেউ জানে না। ছাত্রছাত্রীর জীবন নিয়ে খেলার নাম যদি ক্রাশ প্রোগাম না হবে তাহলে এগুলো কখনও ঘটতো না…….
ভাবতেছেন কি এমন ঘটলো বা ঘটতেছে??
আপনাদের কোন কিছু ঘটে নাই। যত ঘটনা ঘটছে আমাদের মত অসহায় পাপী ছাত্রছাত্রীদের। ঘটতেছে আমাদের মত অসহায় গরীব, মধ্যবিত্ত পরিবারের মা-বাবাদের।
আপনারা আপনাদের ক্রাশ প্রোগামের নামে নষ্ট করছেন আমাদের মত ছাত্রছাত্রীর জীবন।
*** পরীক্ষায় অংশগ্রহন করার পরেও রেজাল্ট আসতেছে Absent কেন এই হয়রানি বলতে পারেন। এত কষ্ট করে আমরা পরীক্ষা দিয়ে আসতেছি আর আপনারা রেজাল্ট তৈরি করছেন এ্যাবসেন্ট।
*** Withheld নামক প্যারা দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের রেজাল্ট স্থগিত রাখছেন। যে রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করছে একজন মেধাবী ছাত্র, যে রেজাল্টের আশায় পথ চেয়ে আছে পরিবার আর আপনার করছেন Withheld মানে স্থগিত।
*** কোন কোন ডিপার্টমেন্টের রেজাল্ট এখনও বের হয়নি (১৪-১৫) ব্যাচের। ক্রাশ প্রোগ্রামে লেখা আছে ৯০ দিনের মধ্যে আপনারা রেজাল্ট দিবেন, কিন্তু ১২০ দিন পার করেও আপনারা রেজাল্ট কমপ্লিট করতে পারেন নাই। রেজাল্ট স্থগিত রাখছেন। ৯০ দিনের রেজাল্ট ১২০ দিনেও সমাপ্ত করতে পারেন নাই এটাই কি ক্রাশ প্রোগ্রাম.??
** গনহারে Absent আসতেছে একই ডিপার্টমেন্টেরর একই সাবজেক্টে। আপনারা বোঝাতে চাইছেন ঐই ডিপার্টমেন্টের কোন ছাত্রছাত্রী ঐ বিষয়ে পরীক্ষা দেইনি!?
বোঝাতে চান ঐ বিষটিতে সবাই Absent…… এক সাথে সবাই পরীক্ষা দেইনি বলে গনহারে Absent বলে দিতেছেন।
*** অনেক ভালো পরীক্ষা দিয়ে আসতেছে ফেইল ( F) ভালো রেজাল্টের গ্রেড বুঝি F নির্ধারিত করেছেন ক্রাশ প্রোগামে।
*** যারা মেধাবী ও ভাল Students তাদের দুই-তিন সাবজেক্টে ফেইল (F) এবং রেজাল্ট D, C, C+ আর যারা কিছুই পারে না তাদের রেজাল্ট আসছে A+, B+ ফার্স্ট ক্লাস! এটা কেন হচ্ছে বলতে পারেন?? হয়তো এটা হচ্ছে খাতা মূল্যায়নের অভাব। ছাত্র-ছাত্রীদের খাতার মূল্যায়ন হয় না। যদি মূল্যায়ন হতো তাহলে কখনও ভালো ছাত্রছাত্রীদের ফেইল আসতো না। খাতার অবমূল্যায়ন এর নামকি ক্রাশ প্রোগাম??
*** ভালো পরীক্ষা দিয়েও ফেইল আসার কারনে বাধ্য হয়ে ছাত্রছাত্রীদের বোর্ড চ্যালেঞ্জ করতে হচ্ছে… এতে যত টাকা পয়সা খরচ সবই পরিবারকে বহন করতে হচ্ছে। গরীব মেধাবি ছাত্রছাত্রীরা টাকার অভাবে চ্যালেঞ্জ করতে না পেরে আপনাদের ডিসিশন মাথা পেতে মেনে নিচ্ছে আবার কেউ হয়তো পড়াশোনা বাদ দিয়ে পরিবার কে রক্ষা করছে। গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের ও গরীব পরিবারের মা বাবাদের কষ্ট আপনারা কি বুঝবেন। আপনারা তো থাকেন এসি রুমে…. আর আমাদের বাবা রোদে পুড়ে টাকা ইনকাম করে আপনাদের কাছে বিলি করছে। কেন জানেন?
ঐ যে খাতা রিচেক করার জন্য। আপনারা এসব কষ্ট বুঝবেন না।
*** আপনার একেক দিন একেক নতুন নিয়ম বের করছেন। হুট করে এসব নতুন নতুন নিয়ম বের করে চাপে ফেলে দিচ্ছেন ছাত্রছাত্রীদের।
*** আবার কিছুদিন আগে নতুন প্রশ্ন পদ্ধতি তৈরি করলেন। ৪ ঘন্টার পরীক্ষাকে পিছিয়ে করলেন ৩.৩০ মিঃ। কিন্তু পরীক্ষার প্যাটার্ন আগেরটায় আছে। যেখানে ৪ ঘন্টায় পরীক্ষা দিতে হিমসিম খেয়ে যায় সেখানে ৩০ মিঃ খেয়ে ফেলেছেন। এর জন্য চলছে সারা বাংলাদেশে মানববন্ধন ও আন্দোলন। কিন্তু হায় আপনাদের চোখে এগুলো কিছুই ভাসতেছে না। আমরা কি পাপ করেছি..??
*** রুটিন প্রনয়ন করেন ঠিকই তবে একদিনে ৩/৪ পরীক্ষা দেওয়ার মত। মেজর সাবজেক্টের মাঝে ১ দিনের গ্যাপ (১৪-১৫)। এটা নিয়েও ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন করে রুটিন পিছানো হয়েছে।
.
জাতীয় বিশ্ববদ্যালয়ের ব্যর্থতা ক্রমান্বয়ে ভারি হচ্ছে। হুট করে একেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন ধ্বংস করছেন। জাতীয় বিশ্ববদ্যালয়ের চলমান ব্যর্থতা- তিন মাসের রেজাল্ট দেওয়ার কথা বলে ৫ মাস পর রেজাল্ট দেয়। ব্যাপক ত্রুটিপূর্ণ রেজাল্ট দেয়, যে ভাল রেজাল্ট করার কথা উল্টো তাকে ফেল বা এবসেন্ট করে দেয়। একজন স্টুডেন্ট কে ব্যাপক হয়রানির শিকার হতে হয়। বলা নেই কওয়া নেই পরীক্ষার টাইম হুট করে দিয়ে দেয়। প্রশ্নের প্যাটার্ন চেঞ্জ না করে অযুক্তিক ভাবে ৩০ মিনিট কমিয়ে দিয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করার ফলে অনেক মেধাবী স্টুডেন্ট অনার্স চান্স পাচ্ছে না।
.
সরকার বার বার নির্দেশ দিলেও জাতীয় বিশ্ববদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি কলেজ গুলাকে পাবলিক বিশ্ববদ্যালয়ের অধীনে না যাওয়ার খেসারত কড়ায় গন্ডায় দিতে হচ্ছে।
.
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কে বলিঃ এসবই যদি আপনাদের নতুন নিয়ম ক্রাশ প্রোগ্রাম হয় তাহলে…… এই কবিতাটায় মনে পড়বে সারাক্ষণ …………………………..
আমরা অসহায় আমাদের কথার কোন মূল্য নাই,
আমাদের বাবা মায়ের চোখের পানির দাম নাই,
আমরা বড্ড অসহায়………
পিতামাতার সপ্নের মুখে ছাই,
আমরা অবহেলিত- আমরা নিরুপাই আমরা বড্ড অসহায়
আমাদের কিছু বলার ভাষা নাই!!!!!
আমরা অসহায়!!!
.
আসলে আপনারা বুঝবেন না আমাদের মত অসহায় হতভাগা ছাত্রছাত্রীদের কষ্টের কথা। বুঝবেন না ছাত্রছাত্রীদের মা-বাবার চোখের পানির মূল্য। বুঝবেন না কতটা কষ্টের মধ্যে তারা তাদের সন্তানকে মানুষ করতে, জীবন প্রতিষ্ঠিত হতে তুলে দিয়েছেন আপনাদের হাতে। আর আপনারা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অতি আনন্দে গায়ে বাতাস লাগিয়ে আমাদের মত ছাত্রছাত্রীদের জীবন নিয়ে খেলা করছেন। আর আমরা গায়ে বাতাস লাগিয়ে নয়, মাথার ঘাম ও গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে অতি কষ্টের মধ্যে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য পড়ে আছি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর আপনারা নতুন নতুন পদ্ধতি হাতে নিয়ে এগুলো উপহার দিচ্ছেন সেটা আসলেই প্রশংসাজনক!!! ছাত্রছাত্রীদের লাইফ নিয়ে খেলা এটাই যদি ক্রাশ প্রোগ্রাম হয়ে থাকে তাহলে, ক্রাশ প্রোগ্রামে যে সকল নিয়মকানুন ও রুলস জারি করেছেন তার সাথে এই রুলস ও নিয়মগুলো ও Add করে নিন—
- অবিলম্বে ছাত্রছাত্রীদের জীবন ধংস করতে হবে।
- পিতামাতার সপ্ন ভঙ্গ করতে হবে।
- মেধাবীদের পানিতে চুবাতে হবে।
- ছাত্রছাত্রীদের হয়রানি ও নাজেহাল করতে হবে!
আসলে কিছু বলার ভাষা আমাদের মত অসহায় পরিবারের অবহেলিত ছাত্রছাত্রীদের নেই। আমরা চাই আপনাদের ক্রাশ প্রোগাম সফল করুন। শিক্ষার মান বৃদ্ধি করুন। তাই বলে আমাদের জীবন নষ্ট করে নয়।
আমাদের দিক টা একটু ভেবে দেখবেন আশা করি। যদি আপনারা আমাদের দিকটা না ভাবেন তাহলে আমরাও আপনাদের কথা না ভেবে রাস্তায় নেমে পড়বো। ছাত্র আন্দোলন করবো। আমাদের প্রাপ্য আমাদের দাবী আমরা আদায় করেই ছাড়বো।
জয় হোক অবহেলিত ছাত্রছাত্রীদের, জয় হোক আমাদের গরীব পরিবারের মা বাবাদের!
Leave a Reply