সত্য কথা সবসময় তিতা লাগে, নির্মম
হলেও এটাই কঠিন বাস্তব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’
ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার
মাধ্যমে এবছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রমের
সমাপ্তি ঘটল। ভর্তি পরীক্ষায়
পাশের হার
নিয়ে চারিদিকে চলছে তুমুল
আলোচনা-সমালোচনা। কথা শুরুর
আগে আসুন কিছু পরিসংখ্যান
দেখে নেই। পরিসংখ্যান
আপনাকে অনেক কিছু বলে দিবে।
প্রথমেই দেখা যাক গত দুই
যুগে আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থার
অন্যতম
দুটি পরীক্ষা এসএসসি এবং এইচএসসি’র
পাশের হারঃ
(সকল তথ্য \”Bangladesh Bureau of
Educational Information and Statistics\”
থেকে নেয়া, আগ্রহী যে কেউ চেক
করে দেখতে পারেন)
SSC Examination
Year Appeared Passed Percentage
1990 435,918 138,317 31.73%
1991 475,261 308,676 64.95%
1992 522,174 321,675 61.60%
1993 661,908 404,402 61.10%
1994 685,831 490,099 71.46%
1995 765,135 560,114 73.20%
1996 464,267 197,811 42.61%
1997 716,865 368,803 51.45%
1998 722,300 346,435 47.96%
1999 837,220 457,252 54.62%
2000 918,045 381,762 41.58%
2001 786,220 276,903 35.22%
2002 1,005,937 408,969 40.66%
2003 921,024 330,762 35.91%
2004 756,387 363,270 48.03%
2005 751,421 394,993 52.57%
2006 784,815 466,732 59.47%
2007 792,165 454,455 57.37%
2008 743,609 526,576 70.81%
2009 797,891 537,878 67.41%
2010 912,577 713,560 78.19%
2011 986,650 810,666 82.16%
2012 1,048,144 904,756 86.32%
2013 992,313 885,891 89.28%
HSC Examination
Year Appeared Passed Percentage
1990 294391 87419 29.69%
1991 260437 132619 50.92%
1992 247050 162118 65.62%
1993 317695 147429 46.41%
1994 398540 161045 40.41%
1995 468801 217546 46.40%
1996 514668 127504 24.77%
1997 584962 229796 39.28%
1998 479028 220748 46.08%
1999 518648 290687 56.05%
2000 470541 181768 38.63%
2001 525755 149358 28.41%
2002 538296 145867 27.10%
2003 501507 192713 38.43%
2004 483481 230792 47.74%
2005 415088 245549 59.16%
2006 412024 263358 63.92%
2007 431835 277523 64.27%
2008 496139 371382 74.85%
2009 489102 344485 70.43%
2010 580623 416987 71.82%
2011 622277 450254 72.36%
2012 742448 567940 76.50%
2013 814469 579297 71.13%
SSC Examination HSC Examination
Year A+ Year A+
2001 76 2001 N/A
2002 327 2002 N/A
2003 1,389 2003 1,859
2004 8,597 2004 3,047
2005 15,631 2005 5,534
2006 24,384 2006 9,864
2007 25,732 2007 11,140
2008 41,917 2008 22,045
2009 45,934 2009 20,136
2010 62,134 2010 28,671
2011 62,288 2011 39,769
2012 82,212 2012 61,162
2013 91,226 2013 58,197
2014 142,276 2014 70,602
এখন একটু মূল কথায় আসা যাক।
মানবসভ্যতা’র বিবর্তনে আমাদের
দেশের ছেলেমেয়েদের
বুদ্ধিবৃত্তি কি হঠাৎ করেই
জ্যামিতিক হারে বাড়তে শুরু
করেছে?
তা না হলে রাতারাতি এতো পাশ আর
জিপিএ ৫ এর ছড়াছড়ি কেন?
উপরে দেয়া তথ্য থেকে দেখবেন
১৯৯২-১৯৯৫ সালে ভূতুড়ে এক হাস্যকর
সিস্টেম লিমিটেড ৫০০ অবজেক্টিভ
প্রশ্নব্যাংক
দিয়ে ছেলেমেয়েদের পাশ করানোর
অপচেষ্টা করা হয়। তখন অনেকেই এই
সুবিধা নিতে স্কুলগুলোতে এক
ক্লাস লাফ দিয়ে এসএসসি পরীক্ষায়
বসে, বিশেষ করে ১৯৯৫ সালের
এসএসসি পরীক্ষায়, কারণ ১৯৯৬ সাল
থেকে এই সিস্টেম বাদ দেয়া হয়।
ডাটাবেইজে দেখুন ১৯৯৫ সালের
তুলনায় ১৯৯৬
সালে পরীক্ষার্থী সংখ্যা প্রায়
অর্ধেক! কিন্তু এই ১৯৯০-২০০০ এর
দশকে কি মেধাবী ছাত্রছাত্রী ছিল
না? তখন যারা স্ট্যান্ড করতো,
তারা যে কোন সময়েই স্ট্যান্ড
করার যোগ্যতা রাখে। এখন
যারা জিপিএ ফাইভ পাচ্ছে,
গোল্ডেন এ+ পাচ্ছে তাদের
অনেকেই সেই সময় পরীক্ষা দিলেও
স্ট্যান্ড করতো। কিন্তু কতজন?
এইটাই হল প্রশ্ন।
কেন এই ছেলে খেলা হচ্ছে দেশের
আগামী প্রজন্মকে নিয়ে তা খোদাই
জানেন। আপনি যদি আপনার
ছেলেকে বিয়ে দিতে যান
সে স্বাবলম্বী হওয়ার আগেই,
তবে আপনার দায়িত্ব সেই ছেলের
বিবাহ পরবর্তী জীবনের দায়-
দায়িত্ব বুঝে নেয়ার।
একইভাবে আপনি যে প্রায় দেড় লাখ
পরীক্ষার্থী’কে জিপিএ ফাইভ
পাইয়ে দিলেন, এখন এই দেড় লাখ
সেরা স্টুডেন্টদের পড়ানোর জন্য
সেই মানের কলেজ এবং সেখানে সীট
কয়টি? কেউ কি একটু বলবেন আমাকে।
যখন আপনার আমার
আশেপাশে চেনাজানা, আত্মীয়-
প্রতিবেশী কোমলমতি ছেলেমেয়েগুলো ভালো রেজাল্ট
করেও কোন ভালো কলেজে পড়ার
সুযোগ পায় না, তখন তাদের
চেহারা দেখলে খুব কষ্ট হয়।
সর্বোচ্চ রেজাল্ট করেও
যদি আপনি কোন
ভালো কলেজে সুযোগ না পান
তবে দোষটা কার? একই কথা কলেজ পার
করে এইচএসসি রেজাল্টের বেলায়ও
প্রযোজ্য। এবার
এইচএসসি’তে জিপিএ ফাইভ
পেয়েছে প্রায় সত্তর হাজার। এই
সত্তর হাজার সর্বোচ্চ
রেজাল্টধারীদের উচ্চশিক্ষার
জন্য কয়টি সীট রয়েছে? আসুন দেখি।
Dhaka University 5787
Rajshahi University 3690
Bangladesh Agricultural University 850
Bangladesh University of Engineering and
Technology 965
Chittagong University 3263
Jahangirnagar University 1940
Islami University 1420
Shahjalal Science and Technology University
1400
Khulna University 812
Bangabondhu Shekh Mujibur Rahman
Agricultural University 145
Haji Mohammad Danesh Science and
Technology University 628
Moulana Vashani Science and Technology
University 590
Potuakhali Science and Technology University
467
Shere Bangla Agricultural University 450
Chittagong University of Science and
Technology 581
Rajshahi University of Science and Technology
480
Khulna University of Science and Technology
660
Dhaka University of Engineering and
Technology 445
Noakhali Science and Technology University
413
Jagannath University 2635
Comilla University 520
Kaji Nazrul Islam University 640
Chittagong veterinary and animal science
university 110
Shylhet agricultural university 271
Jessore Science and Technology University 395
Begam Rokeya University 890
Pabna Science and Technology University 200
Barisal University 400
Bangladesh Textile University 360
সর্বমোট ৩১,৪০৭টি!
সাথে রয়েছে পবালিক মেডিক্যাল
কলেজে আরও ১৬০০+ সীট। এরপর
রয়েছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়,
প্রায় ৬০টি প্রাইভেট
বিশ্ববিদ্যালয় আর প্রায়
৫০টি প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ।
যদি পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য
থাকে তবে এগুলোই ভরসা, আর
নই্লে রইল বাকী জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয় নামের
ভাগাড়খানি পরে।
এবার আসি পড়ালেখার কথায়।
আমাদের সিলেবাস, পুস্তক আর
শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে কিছু বলার
নাই। এসএসসি লেভেলর আর
এইচএসসি লেভেলের সিলেবাসের
আকাশ-পাতাল ফারাক।
আমি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম।
ক্যালকুলাস নামে যে একটা জিনিষ
আছে তা কলেজে ফিজিক্স এর
ভেক্টর এনালাইসিস পড়ানোর দিন
প্রথম জানলাম। এই ম্যাথ ছিল
সেকেন্ড ইয়ারের সিলেবাসে আর এর
এপ্লাই ভিত্তিক ফিজিক্সএর
চ্যাপ্টার ছিল ফার্স্ট ইয়ারে!!!
এবার ভর্তি পরীক্ষার পাশের হার
নিয়ে যে এত কথা হচ্ছে,
সে প্রসঙ্গে বলি।
ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র
যে লেভেলের করা হয় ঐ লেভেলের
একাডেমিক
পড়া কি কলেজগুলোতে হচ্ছে।
উত্তর না। এই ফাঁকে আবির্ভাব
কোচিং ব্যাবসায়িদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর
একটি ইউনিটে দেড় হাজার সীট,
সেখানে একটা কোচিং সেন্টার
স্টুডেন্ট পড়াচ্ছে হাজার দশেক,
সবাইকে ভর্তির
গ্যারান্টি দিয়ে!!!
এখন শেষ কথা, এতসব কাহিনী পার
করে একজন যখন গ্রাজুয়েট হয়ে বের
হয়, তখন তার ফিউচার! কতজন
গ্রাজুয়েট প্রতি বছর বের
হচ্ছে আর কতজনের জন্য নতুন
কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে? দীর্ঘ
১৮-২০ বছরের সাধনা শেষে কয়জনার
ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ছে?
একটা বাস্তব ঘটনা বলে শেষ করি,
আমার ছোট ভাইয়ের বন্ধু।
মেধাবী ছেলে,
দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ,
পারিবারিক অবস্থাও ভালো।
ফলে কলেজ ছিল তার ইউডা আর
ভার্সিটি নর্থ সাউথ, সাবজেক্ট
টেলি কমিউনিকেশন। পাশ করে বের
হওয়ার পর দুই বছর ঘুরে একটা যব পেল,
বেতন মাত্র ১০০০০ টাকা। শেষে সেই
ছেলে চলে গেল আমেরিকা, হাইয়ার
স্টাডি করতে। প্রথম বছরেই ঐ
টেলি কমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্ট
এর বেস্ট স্টুডেন্ট অফ দ্যা ইয়ার,
সাথে তার কোর্স কো অর্ডিনেটর
এর এসিস্টেণ্ট হিসেবে পার্ট
টাইম যব। শুনলাম এই যবের
টাকা দিয়েই তার পড়াশুনার খরচ
চলে যায়।
সবাই কি আর তার মোট ভাগ্য
নিয়ে জন্মায়? ২০০১ সালে মানবিক
বিভাগ থেকে সারা বাংলাদেশ
থেকে মাত্র একজন জিপিএ ৫
পেয়েছিল, কেউ কি জানেন আজ
সে কি করছে? আজ পাশের হার আর
জিপিএ ফাইভের যে খেলায়
বলি হচ্ছে আমাদের নতুন প্রজন্ম
তাদের পরিণতি কি হবে কেউ
কি ভাবছে? আর বছর পাঁচ, কিন্মবা দশ
পরে আমরা দেখবো, প্রচণ্ড হতশায়
নিমজ্জিত এক প্রজন্ম। কিন্তু
কায়োমনে প্রার্থনা করি যেন
না দেখতে হয় এমন কিছু। আমাদের
ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন অতল
গহবরে ডুবে না যায়।
Leave a Reply