শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে পরীক্ষার হলে ভেতরে যাওয়ার রেওয়াজ ভাঙলেন শিক্ষামন্ত্রী

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা উপলক্ষে ২৩ মার্চ ২০১৬ তারিখ বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত জাতীয় মনিটরিং ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় পাবলিক পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করলেও আর পরীক্ষার হলে যাবেন না এমন অভিপ্রায় করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। করলেনও তাই…

দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ ভেঙে পাবলিক পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করলেও এবার হলের ভেতরে যাননি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
nahidbg20160403155815
পরীক্ষা কেন্দ্রের ভবনের বারান্দা থেকে দরজা-জানালা দিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেওয়ার দৃশ্য দেখেছেন মন্ত্রী, বারান্দায় ডেকে কথা বলেছেন পরিদর্শকদের সঙ্গে।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর দিন ০৩ এপ্রিল ২০১৬ তারিখ, রোববার সকালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন মন্ত্রী।

সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে যানজটের কারণে রমনা মডেল থানার সামনে গাড়ি থেকে নেমে মন্ত্রী ফুটপাত ধরে হেঁটে যেতে যেতে অভিভাবকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

এসময় মন্ত্রী অভিভাবকদের প্রশ্ন করেন, ‘আপনার কতজন বাচ্চা?’ উত্তর আসে একজন। মন্ত্রী বলেন, ‘আমার সাড়ে ১২ লাখ বাচ্চা। চিন্তা করবেন না। আপনার থেকে আমার চিন্তা বেশি, আমি সাড়ে ১২ লাখ বাচ্চার বাবা-মা।’

পরীক্ষা কেন্দ্রের ফটকে ১০টা ৫ মিনিটে প্রবেশ করে মন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি শুধু বারান্দায় যাবো, ভেতরে যাবো না।
Nurul-Islam-Nahid_HSC_2016
সোয়া ১০টা পর্যন্ত সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ ভবনের তৃতীয় ও নিচতলার বরান্দায় হেঁটে মন্ত্রী উঁকি দিয়ে হলের ভেতর চোখ রাখেন। আর সেখানে দাঁড়িয়ে পরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলেন, কেমন দিচ্ছে পরীক্ষা?

এসময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন- তার গানম্যান ও আরেক কর্মকর্তা এবং কলেজের অধ্যক্ষ। আর ফটোসাংবাদিক ছিলেন মাত্র ৯ জন। আর বাকী অন্তত এক ডজন ফটোসাংবাদিক এবং আরও অন্তত ৩০/৪০ জন সাংবাদিক দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন্দ্রের ভেতর গাছতলায়।

অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সামনে আসেন মন্ত্রী। ভেতরে না প্রবেশের জন্য প্রথমেই ব্যাখ্যা দেন- ‘প্রচলিত রেওয়াজ বহুকাল থেকে চলে আসছে, অনেক আগে মেট্রিক পরীক্ষা বা আইএসসি পরীক্ষায় রেওয়াজ ছিল হলে হলে যাই,দেখি।’

‘কিন্তু আমরা ২/৩ বছর থেকে বিবেচনা করছি এটা দুই কারণে- আগে মিডিয়ার সংখ্যা এতো ছিল না। ২, ৪, ৫, ১০ জন সাংবাদিক ছিল, যার ফলে চোখে লাগতো না ভাগ করে গেলে সমস্যা হতো না’, বলেন মন্ত্রী।

‘এখন যদি আমরা একটা রুমে প্রায় ৫০ জন লোক ঢুকি তাহলে ওখানে ছাত্রসংখ্যা ৫০ বা ১০০ বা ২০০ হোক তখন স্বাভাবিকভাবে ওরা বিরক্ত হয়, তাদের মন অন্য দিকে যেতে পারে। আর একটি হলো তারা এতো উত্তেজনার মধ্যে পরীক্ষা দিচ্ছে, সবাই যদি গিয়ে ঢুকি তাহলে তাদের মধ্যে একটা প্রভাব পড়তে পারে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মিডিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আগের মত করা সম্ভব না। যুগ পাল্টে গেছে, জগৎ পাল্টে গেছে, আমাদের বাস্তবতার সঙ্গে চলতে হবে। আপনারা তথ্য, ছবি নিলেন বা কেন্দ্র সচিবের সঙ্গে কথা বললেন- সেটা নিতে পারবেন।

‘আমি বারান্দা দিয়ে হেঁটে গেছি, কোন কোন রুমের বাইরে টিচারদের ডেকে একটু জিজ্ঞাস করে নিয়েছি শিক্ষার্থীদের কোনো অভিযোগ আছে কি না- সব টিচার বলেছেন মেয়েরা খুব খুশি, তাদের কোনো সমস্যা নেই।’

আবারও মন্ত্রী বলেন, ভেতরে যাইনি, দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ ভেঙে এবার পরীক্ষার হলের মধ্যে না ঢুকে এই তথ্য সংগ্রহ করলাম।

পরিদর্শকদের সঙ্গে কথা এবং সারা দেশ থেকে প্রাথমিক তথ্য থেকে মন্ত্রী বলেন, প্রস্তুতি অনুসারে পরীক্ষা সর্বোচ্চ শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দু’জন অতিরিক্ত সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আরও কয়েকজন কর্মকর্তা ছিলেন নিচে দাঁড়িয়ে।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জেএসসি-জেডিসি, এসএসসি এবং এইচএসসি’র মত পাবলিক পরীক্ষার প্রথম দিন শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর কেন্দ্র পরিদর্শনকালে পরীক্ষার হলে ঢুকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া রেওয়াজ ছিল।

মন্ত্রীর সঙ্গে সে সময়গুলোতে থাকতেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কর্মকর্তারা, দপ্তরের প্রধান, বোর্ড চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ এক বিশাল দল।

আর দৃশ্য ধারণে টেলিভিশন ও অন্যান্য গণমাধ্যমের ফটোসাংবাদিকদের সঙ্গে যুক্ত হতেন সংবাদকর্মীরাও। ১০/১৫ মিনিট পরীক্ষার হলে চলতো জটলা। এ নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মুখে বিরক্তির ছাপ দেখা যেত। আর তা নিয়ে চলে সমালোচনা।

চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে গত ২৩ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত জাতীয় মনিটরিং ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন তিনি আর পরীক্ষা হলে যাবেন না। এ নিয়ে বাংলানিউজে সংবাদ প্রকাশ হয়, ‘আর পরীক্ষার হলে যাবেন না শিক্ষামন্ত্রী’

২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় কেন্দ্রে গেলেও পরীক্ষার হলে প্রবেশ করছেন না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী।

ওই পরীক্ষার আগে গণশিক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, অনেক সময় অনেক কথা হয়। তবে এবার কোনো কথা না হোক সে জন্য যত্নবান থাকবো। আমি কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করবো না। কয়েক মিনিটের জন্য ভেতরে প্রবেশ করলেও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ব্যাহত হতে পারে। প্রয়োজনে কেন্দ্রের বাইরে দিয়ে দেখে আসবো পরীক্ষার পরিবেশ-পরিস্থিতি।

এরপর থেকে কেন্দ্রে গেলেও পরীক্ষার হলে যাচ্ছেন না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী।

গত বছর এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনকালে একটি কক্ষে তার সঙ্গে শুধু শিক্ষাসচিব থাকলেও ফটো সাংবাদিকরা তাদের ছবি তোলার সময় পরীক্ষার্থীদের বিরক্তির ছাপ দেখা যায়।

ওই বছর এইচএসসির পরীক্ষার প্রথম দিনও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শনকালে কক্ষ পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ। প্রশ্নপত্র কেমন হয়েছে, পরীক্ষা কেমন হচ্ছে- এসব জিজ্ঞাস করেন মন্ত্রী। বিভিন্ন পরামর্শ দেন। আর পরীক্ষার হলে মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা কর্মকর্তা এবং ক্যামেরাম্যানদের হুড়োহুড়িতে পরীক্ষার্থীদের চোখে মুখে ছিল বিরক্তির ছাপ।

সৌজন্যেঃ বাংলানিউজ





About লেখাপড়া বিডি ডেস্ক 1519 Articles
লেখাপড়া বিডি বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা বিষয়ক বাংলা কমিউনিটি ব্লগ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*