ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ এমবিএ ভর্তি পরীক্ষার শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি নিয়ে টিপস্ দিয়েছেন ৩৪তম বিসিএস-এ প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত আইবিএ এমবিএ ৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জাফর সাদিক চৌধুরী।
আইবিএ’র বিবিএ এবং এমবিএ ডিগ্রী বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানজনক ডিগ্রীগুলোর মধ্যে অন্যতম। আইবিএ-আইটস্ (IBA-ites) পরিচয় দেয়ার মধ্যে যে অনুভূতি তা কেবল আইবিএ-আইটসরাই বুঝতে পারে। বর্তমানে যারা চাকুরীর বাজারের সেরা জায়গাটার জন্য প্রস্তুত হতে চান তাদের জন্য আইবিএ’র নাম নিজের নামের সাথে জুড়ে দেয়াটা দিন দিন প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। চাকুরী করতে যান, আপনার কর্মস্থলেই আপনি পার্থক্যটা স্পষ্ট ধরতে পারবেন।
বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ এ্যালামনাই এসোসিয়েশানগুলোর একটা আইবিএ’র এ্যালামনাই এসোসিয়েশান। শুধু দেশি-বিদেশি কোম্পানীর গুরুত্বপূর্ণ পদ, উদ্যোক্তা, বা ভালো র্যাংকের বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবেই না, আইবিএ’র জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতেও আইবিএ-আইটসদের একটা বড় অংশ কূটনৈতিক হিসেবে দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে, মাঠপ্রশাসনে জনগনের সাথে কাজ করতে, মন্ত্রণালয়ে সরকারি উন্নয়নের ‘পলিসি মেইকার’ হিসেবে বিরাট ভূমিকা রাখছে। কোথায় নেই আইবিএ-আইটস্?
এবার বলুন, আপনি তাদের একজন কেন হবেন না? এই একটা ব্যাপারে অন্তত লোভী হতে পারেন, কথা দিচ্ছি কেউ গালমন্দ করবে না। ভিতর থেকে অনুভব করুন আপনার জীবনেও আইবিএ এমবিএ’র প্রয়োজনটা কত বেশী। ভাবুন, এ সুযোগটা অন্য কাউকে না দিয়ে কীভাবে নিজের করে নিলে ঠিক কোথায় গিয়ে পৌঁছুতে পারেন আপনি! তখন কত সহজে আপনি আপনার স্বপ্নটাকে সত্যি করতে পারবেন!
অতএব, শেষ মূহুর্তের সেরা প্রস্তুতিটা এখনই কৌশলে সেরে ফেলুন। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি নিয়ে আপনাকে কয়েকটি টিপস্ দেয়ার চেষ্টা করছি মাত্র।
টিপস্ ০১ঃ বিশ্বাস সঞ্চয় করুন। শেষ মূহুর্তে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি আইবিএ’র ‘ব্র্যান্ড এম্বেসেডর’ হতে চান কিনা? আপনি এখন কী, সেটা মোটেও বড় কোন ব্যাপার না। বড় ব্যাপার হল আইবিএ তে ঢোকার পর আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেকে অন্য উচ্চতায় দেখতে পাবেন সেটা। শেষ মূহুর্তে এ ব্যাপারটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশ্বাস রাখুন, সফলতা আসবেই।
টিপস্ ০২ঃ অতীতকে চর্চা করুন। বিগত দশ বছরের আইবিএ এমবিএ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ধরণ দেখুন। সেগুলোর উপর উপর্যুপরি মডেল টেস্ট দিতে থাকুন। ভুল হলে সঠিক উত্তর বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ সনাক্ত করুন। কমন পড়ার আশা করবেন না, তাহলে আত্মবিশ্বাস হারাবেন।
টিপস্ ০৩ঃ ঘড়িকে নিয়ে পরিকল্পনা আঁটুন। কত নম্বরের জন্য কত মিনিট সময় পাওয়া যাবে সেটা নির্ধারণ করুন। আমার অভিজ্ঞতা বলে, ৯০ মিনিটের এমসিকিউ’তে পরীক্ষার হলে ম্যাথের জন্য ৩৫-৪০ মিনিট, এনালিটিক্যাল এবিলিটির জন্য ২৫-৩০ মিনিট এবং ভার্বালের জন্য ২০-২৫ মিনিট নির্ধারণ করলে ভাল ফল পাবেন।
টিপস্ ০৪ঃ সব প্রশ্নের উত্তর করবেন না। আইবিএ’র পরীক্ষার বড় বিপত্তিটা হল আপনি সব কিছুর উত্তর জানা সত্ত্বেও সব প্রশ্নের উত্তর করতে পারবেন না। কারণ সময় অত্যন্ত সীমিত। ৪০ মিনিটে যদি আপনি ২২-২৩ নম্বরের ম্যাথ, ৩০ মিনিটে ১২ নম্বরের এনালিটিক্যাল এবং ২০ মিনিটে ২০-২২ নম্বরের ভার্বালও নির্ভুলভাবে উত্তর করতে পারেন, আইবিএ’র ভাইভায় আপনাকে স্বাগতম।
টিপস্ ০৫ঃ হোমওয়ার্ক করুন, তবে ঘড়ি ধরে। মনে করুন, আপনি জিম্যাট অফিসিয়াল গাইড থেকে ম্যাথ চর্চা করবেন। তাহলে ৩০টা ম্যাথ ঠিক করে ঘড়িতে স্টপওয়াচ দিয়ে ৪০ মিনিট পর্যন্ত পরীক্ষা করুন নিজেকে। একইভাবে জিআরই বিগ বুক থেকে দু’টি এনালিটিক্যাল পাজল ঠিক করে স্টপওয়াচে ১৫ মিনিট ধরে পরীক্ষা দিন। উত্তর ভুল হলে একদম ঘাবড়ে যাবেন না। মনে রাখবেন, কেউ সব উত্তর করতে পারলেও সময় নিয়ন্ত্রণের কৌশলে কিন্তু আপনি তাদের চেয়ে এগিয়ে গেলেন।
টিপস্ ০৬ঃ স্বপ্ন দেখুন ভোকাবুলারি। ভাল কোন এমবিএ গাইড, প্রতিদিনের ইংরেজি দৈনিক কিংবা ভালো ভোকাবুলারির বই থেকে আপনি অনেক ভোকাবুলারি গত কয়েকদিনে আত্মস্থ করে ফেলেছেন। বাকী কয়েকদিন সেগুলোর উপর চোখ বুলিয়ে যান, নিয়মিত ইংরেজি দৈনিক পড়ুন। নতুন শব্দ পেলে সেগুলো সনাক্ত করে রাতে ঘুমানোর পূর্বে মনে করার চেষ্টা করুন। যদি মনে না আসে বিছানা ছেড়ে ওঠুন, আর বাতি জ্বালিয়ে শব্দ খুঁজে বের করুন। শব্দকে পাশ কাটিয়ে বিছানায় যাবেন না।
নিশ্চয়ই আপনার প্রচেষ্টাতে সফলতা এসে ধরা দেবে একদিন।
জাফর সাদিক চৌধুরী
শিক্ষার্থী, আইবিএ এমবিএ ৫৩তম ব্যাচ
৩৪তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার (সুপারিশপ্রাপ্ত)
Leave a Reply