আজকাল দেখা যায় না গোল্লাছুট

গ্রামবাংলার কিশোর-কিশোরীদের এই খেলার সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। আমার মনে হয় সারাবাংলার সব গ্রামের কিশোর-কিশোরীরাই এ খেলার সঙ্গে পরিচিত এবং এটি তাদের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খেলা। তবে শহুরে কিশোর-কিশোরীদের অনেকেই হয়তো এই খেলাটির সঙ্গে পরিচিত নয়। গ্রামের বিস্তৃত স্কুল মাঠ, খোলা জায়গা, নদীর পাড়ে সাধারণত কিশোর-কিশোরীরা গোল্লাছুট খেলায় মেতে উঠে। এ খেলার জন্য ছোটাছুটি ও দৌড়াদৌড়ির জন্য বেশ জায়গা লাগে। গোল্লাছুট খেলায় দু’টি দল থাকে।gollachut

Advertisement

এ খেলায় দলগঠনের নিয়মটিও মজার। প্রথমে দু’টি দলের জন্য দলনেতা নির্ধারণ করা হয়। এর পর অন্য খেলোয়াড়দের দু’জন দু’জন করে জুটি বেঁধে একটু দূরে যেতে বলা হয়। প্রত্যেক জুটি পৃথকভাবে তাদের নাম রাখে। তারপর দলনেতাদের সামনে এসে নাম বলে এবং যে নাম যে দলনেতা পছন্দ করে সেই নামের জন তার দলে যোগ দেয়।
যেমন : কোনো জুটি একটু দূরে গিয়ে তাদের নাম ঠিক করল চাঁদ ও তারা। দলনেতাদের সামনে গিয়ে তারা বলে_ আমরা চাঁদ ও তারা। তোমরা কে কাকে চাও। একজন

চাঁদ চাইলে অন্যজনের ভাগে পড়ে তারা। ভাগ হয়ে দুজন দুদলে চলে যায়। এভাবেই দুই দলে সবাই ভাগ হয়। এরপর খেলা শুরু হয়। খেলা শুরুর আগে একটা ছোট্ট গর্তকে ঘিরে খেলা চলে। এই গর্তে একটি কাঠি বা কঞ্চি পুঁতে সেটির নাম দেয়া হয় গোল্লা। আর ৬০/৭০ গজ দূরে কোন গাছ বা খড়ের গাদাকে সীমানা ধরা হয়। ওই গোল্লা থেকে দৌড়ে সীমানাকে ছোঁয়াই খেলার প্রধান লক্ষ্য। গোল্লা থেকে ছুটে গিয়ে সীমানা ছোঁয়ার কারণেই এই খেলার নাম হয়েছে গোল্লাছুট।

এই খেলার দলনেতা গোল্লাকে ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর গোল্লার হাত ধরে দাঁড়ায় এক সদস্য। এরপর একে অপরের হাত ধরে লম্ব হয়ে ঘুরতে থাকে। আর অন্য পক্ষের খেলোয়াড়রা তাদের ঘিরে দূরে দাড়িয়ে থাকে। দলনেতাকে ধরে ঘুরতে থাকা খেলোয়াড়রা ফাঁক বুঝে দৌড় দিয়ে সীমানাকে ছুঁতে চেষ্টা করে। আর অপরপক্ষ ছুটে চলে দৌড় দেয়া খেলোয়াড়কে সীমানা ছোঁয়ার আগে ছুঁয়ে দিতে। যদি ছুঁয়ে দিতে পারে তাহলে ওই খেলোয়াড় খেলা থেকে বাদ পড়ে।

অন্যদিকে সীমানা ছুঁতে পারলে জয়ের দিকে একধাপ এগিয়ে যায় তারা। এভাবে চলতে চলতে গোল্লাকে ঘিরে ঘুরতে থাকা দলের সব সদস্য সীমানা ছুঁয়ে ফেললে তারা সকলে গোল্লায় এসে জোড় লাফ দিয়ে দিয়ে সীমানার দিকে যেতে থাকে। সবাই জোড় লাফে ঠিকমতো সীমানা ছুঁতে পারলে ওই দান (পর্ব) তারা জিতে। অন্যদিকে প্রতিপক্ষ যদি কোন খেলোয়াড়কেই সীমানা ছুঁতে না দেয় তাহলে তারা দান পায়। পরে প্রতিপক্ষ দলনেতা গোল্লাকে ছুঁয়ে দাঁড়ায় আর অন্য সদস্যরা তাকে ছুঁয়ে আগের মতো ঘুরতে থাকে এবং চেষ্টায় থাকে কখন ছুটে গিয়ে সীমানা ছুবে। এভাবেই ঘুরে ফিরে খেলা চলতে থাকে।





About অরণ্য সৌরভ 47 Articles
আমি অরণ্য সৌরভ, লেখাপড়া করছি সরকারী সফর আলী কলেজ আড়াইহাজার, নারায়নগঞ্জ। পাশাপাশি কবি ও সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছি মাসিক "হাতেখড়ি"তে [email protected]

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*