শীতের জড়তার বুকে আগুন জ্বালিয়ে এলো ঋতুরাজ বসন্ত। চারদিক মাতাল সমীরণে দিশেহারা। কোকিল,পাপিয়া,বউ কথা কউ-মনের আনন্দে গাইছে গান। শিমুল-পলাশের আগুনঝরা রূপ যেন পুড়িয়ে দিচ্ছে তরুণ-তরুণীদের। আর এসব দেখেই হয়তোবা কবিগুরু গেয়ে উঠেন ‘আহা আজি এ বসন্তে,কতো ফুল ফুটে, কতো বাঁশি বাজে, কতো পাখি গায় ….।’
কিন্তু ইট-পাথরের এই ধূসর নগরে বসন্ত আসল কি গেল টের পাওয়া দায়। গাড়ির বিকট হর্ণে ঝালাপালা কান,জীবনের প্রয়োজনে ত্রস্তব্যস্ত সবাই। কোথায় কোকিল আর পাপিয়া,কোথায় শিমুল আর পলাশ,তাদের দেখা মেলা ভার। তার পরও আজ বসন্ত। মানুষের মনে আজ জাগবে নির্মল আনন্দ। প্রকৃতির অনেক কাছে আসবে মানুষ। অনেকেই সাজবেন নতুন রঙিন পোশাকে।
পুরো দেশ বলতে গেলে নতুনরূপে রূপবতী হয়ে উঠবে আজ ,তরুণ- তরুণীরা ভেসে যাবে নতুন প্রাণের জোয়ারে। আপ্লুত হবে বসন্ত আবাহনে। আরো কিছু অনুষ্ঠান হবে এই নগরীতে। এখনও এই ধারা টিকে আছে অনেকখানি।
এটাকে আরও ব্যাপ্ত করা দরকার।
আমরা অনেক বিদেশী পালাপার্বণ অনুষ্ঠানে মেতে উঠি। কিন্তু আমাদের নিজেদের দেশের আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত অনুষ্ঠানও রয়েছে। সেগুলোর একটি এই বসন্ত। সারা শহরে এ অনুষ্ঠান হওয়া উচিত। হওয়া উচিত সারাদেশে। এতে প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের চেনাজানা আরও ঘনিষ্ঠ হবে। প্রকৃতিকে আমরা আরও ভালবাসতে শিখবো। প্রকৃতির যত্ন করতে শিখবো বেশি করে। ফুল গাছের যত্ন করব, ফুলের যত্ন করব।
আজ ফাল্গুন শুরু। কবির কথায় : ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল/ ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল। চঞ্চল মৌমাছি গুঞ্জরি গায়/ বেণুবনে মর্মরে দক্ষিণ বায়।’ এটা আমাদের বাংলাদেশের রূপ। আম ফলের রাজা। আমগাছ আমাদের জাতীয় গাছ। এখন দেখা যাবে এখানে-ওখানে আম গাছে ‘ডালে ডালে পুঞ্জিতআম্রমুকুল। ‘ আমরা গাই : ‘ওমা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে’ এ বাংলাদেশের রূপ।
এ সুজলা সুফলা শস্য- শ্যামলা বাংলাদেশের প্রকৃতি। আমরা এ প্রকৃতি নিয়ে গর্ব করি। এই প্রকৃতির যত্ন করব আমরা। আমাদের এই নগরীর চেহারা প্রকৃতির শোভায় পাল্টে দেয়া যায়। লতাগুল্ম গাছে গাছে ছেয়ে দেয়া যায়।
যাঁরা নগরীর দায়িত্বে, তাঁরা এখনই উদ্যোগ নিন। আগামী বসন্ত আমরা উদযাপন করব আরও বেশি প্রাকৃতিক শোভার মধ্যে। আরও গাছ লাগান। স্ট্রিটে স্ট্রিটে, রাস্তার পাশে, আইল্যান্ডে, পথের পাশে পাশে ফুলের গাছ লাগান। ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে নগরী। ইটসুরকির অরণ্যের ফাঁকে ফাঁকে লতাগুল্ম ফুল গাছ বেড়ে উঠুক। একটা মহাপরিকল্পনা নিয়ে ঢাকা নগরীকে ছেয়ে ফেলুন ফুলে ফুলে।
আমাদের এ যুগের ছেলেমেয়রা জানে না কোনটা জবা, কোনটা চামেলি, কোনটা বেলি। বকুল বিছানো পথ কেমন কেউ জানে না। ফুলের গাছ লাগান। আমাদের ছায়াবীথি লাগবে, ফল বাগানও লাগবে, লাগবে ফুলবীথিও। ফুলে ফুলে ছেয়ে দিন ঢাকার রাস্তাঘাট এভিনিউগুলো। এতে প্রকৃতিকে ভালবাসা হবে, দেশকেও ভালবাসা হবে। বসন্ত এসেছে আমাদের ঘরে। এ শহরে তুলনামূলকভাবে গাছপালা কম ফুলগাছাও কম। তবু যে কটি ফুলগাছ এখানে-ওখানে আছে তাতে ফুল ফুটবে। যদি নাও ফোটে আজ তবু ও ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে/ করো না বিড়ম্বিত তারে।’ বসন্তকে বরণ করা হচ্ছে আজ। প্রকৃতির যাই আমাদের অবশিষ্ট আছে সেটাই সাজবে আজ। ফুল এখন এই বসন্তে ফুটবে গাছ কম থাক আর বেশি যাই থাক। তবে গাছ থাক না থাক, ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত।’ প্রকৃতির এই অনন্য উপহার বরণ করে নেব মনপ্রাণ দিয়ে।
Leave a Reply