রমজানের ১০ টি আমল ও দোয়া (যেগুলি অবশ্যই পালন করতে হবে)

রমজানের ১০ টি আমল ও দোয়া

পবিত্র রমজান মাস শুধু রোজা রাখার মাস নয় এ মাসটি আত্মশুদ্ধিইবাদত ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ। মহানবী হজরত মোহাম্মাদ (সা:) এ মাসজুড়ে আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি দোয়া ও আমল করতেন। রমাদান মাসে নিয়মিত আমল করতে হবে যা আত্মার পরিশুদ্ধি ও সওয়াব অর্জনের পথ সুগম করে। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ সিয়াম পালনের সাথে সাথে নিচে রমজানের জন্য ১০টি গুরুত্বপূর্ণ আমল ও দোয়া তুলে ধরা হলোঃ 

রমজানের ১০ টি আমল

০১. রাত জেগে ইবাদত

 ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসে রাত জেগে ইবাদত করবে (তারাবিহ নামাজ পড়বে), তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ ‘যে ব্যক্তি ইমানসহ সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদত করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মার্জনা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, খণ্ড: ১, হাদিস: ৩৭,৩৬ ও ৩৪)

তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তার জীবনের আগের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (মিশকাত, হাদিস : ১৮৬২)

০২) অন্যায় ও গোনাহের কাজ থেকে দূরে থাকা

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত; রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পাপ, মিথ্যা কথা, অন্যায় কাজ ও মূর্খতাসুলভ কাজ ত্যাগ করতে পারে না, তার পানাহার ত্যাগ করাতে আল্লহতায়ালার কোনো প্রয়োজন নেই। (সহিহ বুখারি : ১৯০৩)।

০৩) জামাতের সঙ্গে সালাত আদায় করা 

রাসুল (সা.) বলেন, ‘জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি মর্যাদার।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৫, মুসলিম,  হাদিস : ৬৪০)।  এক হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনল এবং তার কোনো অপারগতা না থাকা সত্ত্বেও জামাতে উপস্থিত হলো না, তার সালাত হবে না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭৯৩)

০৪) পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা 

প্রতি রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও জিবরাইল (আ.) পরস্পরকে কোরআন শোনাতেন। ফাতেমা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তার পিতা তাকে বলেছে, প্রতি রমজানে জিবরাইল (আ.)-কে একবার কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। কিন্তু মৃত্যুর বছর তিনি তাকে দু’বার কোরআন শোনান।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৮৫)

০৫) বেশি বেশি দোয়া করা

ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা গুনাহ মাফ করে দেন এবং মযার্দা বৃদ্ধি করেন। রমজানে বেশি ইস্তেগফার পাঠ করা উচিত। আল্লাহতায়াল বলেন, যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, তিনি তার গুনাহগুলোকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তার পুরস্কার অনেক বাড়িয়ে দেবেন। (সূরা তালাক : ৫) 

০৬) দান-সদকা ও যাকাত প্রদান

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজানে তাঁর বদান্যতা আরও বেড়ে যেত। (সহিহ মুসলিম, ৩২০৮)।  গরিব-দুঃখী-আত্মীয় স্বজনদের সাহায্য করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। অনেকে রমজান মাসে যাকাত প্রদান করে যাতে সওয়াব বাড়ে।

০৭) ধৈর্য ও উত্তম চরিত্র চর্চা

রাগ নিয়ন্ত্রণ, গিবত থেকে বিরত থাকা এবং অন্যদের সাথে সদাচরণ করা রমজানের গুরুত্বপূর্ণ দিক।

০৮) অন্যকে ইফতার করান

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পানাহার করিয়ে ইফতার করাবে, সে তার অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৭৯০৬)।

০৯) বেশি বেশি জিকির করুন

  • রমজানে আমরা নিম্মোক্ত জিকিরগুলো আদায় করতে পারি। রাসূল (সা.) বলেন, সর্বোত্তম জিকির হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তাই আমাদের উচিত, এটা বেশি বেশি পড়া। 
  • ক্ষমা চেয়ে এ জিকিরটি বেশি বেশি পড়া, রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা আনতাত তাওয়াবুর রাহিম। অর্থাৎ : হে মহীয়ান রব! আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার তওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি অতিশয় তওবা কবুলকারী, দয়াবান অথবা সংক্ষেপে শুধু আস্তাগফিরুল্লাহও পড়তে পারেন।
  • এছাড়া ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, ‘আল্লাহুম্মা সাল্লিম সাল্লিম’, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম’ এ জিকিরগুলো আদায় করতে পারেন।

১০) ই’তেকাফ করা

রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে ইবাদতে মগ্ন থাকার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা

 





Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*